জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে বার্তা দিয়ে গেল
Published: 1st, July 2025 GMT
বিপুল জনস্মৃতি ও প্রত্যাশা এবং নানা অনিশ্চয়তার দোলাচলের মধ্যে প্রথম বছর পূর্ণ হলো জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের। এই অভ্যুত্থানে সারা দেশের নাগরিক শক্তির এক অসাধারণ ও দুঃসাহসী ঐক্য গড়ে ওঠে, যা চেপে বসা শেখ হাসিনার দীর্ঘ দেড় দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে উৎখাত করে।
সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ অভ্যুত্থানের সূচনা। নেতৃত্ব দেন তরুণ ছাত্রছাত্রীরা। উত্তরোত্তর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার সে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চাপিয়ে দিলে এই দমন–প্রচেষ্টা সীমাহীন নিষ্ঠুরতায় পৌঁছায়। সাধারণ মানুষ দেশের সন্তানদের এই অবাধ হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মেনে নেয়নি। মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে তারা দলে দলে রাজপথে নেমে এসে শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করে।
আন্দোলনের ভেতরে–বাইরেআওয়ামী লীগের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসন গণ–অভ্যুত্থানের পটভূমি রচনা করেছিল। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পরপর তিনটি নিয়ন্ত্রিত ও একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমশ নিজের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করে সব রকমের বিরোধী মত ও কার্যক্রম কার্যত রুদ্ধ করে দেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, গায়েবি মামলা ইত্যাদি আইনি–বেআইনি নিষ্পেষণে দেশ ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়। বিরোধী মতের প্রকাশ হয়ে ওঠে অপরাধ, গণমাধ্যম নজিরবিহীন আক্রমণের শিকার হয়, রাজনৈতিক নিগড়ে বাঁধা পড়ে বিচারব্যবস্থা।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সময়ে–সময়ে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিলেও বলপ্রয়োগে ও কূটকৌশলে সরকার তা অকার্যকর করে দেয়। দলটির কর্মীদের ওপর দুর্বিষহ অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে সরকার আন্দোলনগুলো দমন করে। বস্তুত আওয়ামী শাসনের দেড় দশকে তাঁরা অপরিসীম নির্যাতনের শিকার হন। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও একইভাবে দমন করা হয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের উন্মেষ এই রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে। এ আন্দোলনের পূর্বসূত্র পাওয়া যাবে স্কুলছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে। বিপুল জনসমর্থিত এসব আন্দোলন দানা বেঁধেছিল ‘অরাজনৈতিক প্রজন্ম’ বলে চিহ্নিত কিশোর–তরুণ ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্বে। এ আন্দোলনগুলোই হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান যার চূড়ান্ত প্রকাশ। এসব আন্দোলনে বিকাশপ্রবণ নতুন রাজনীতির নানা লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, পুরোনো আদলের রাজনীতি যাকে আমলে নেয়নি।
সাজ্জাদ শরিফ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে সরকারের উদ্যোগে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে ১ জুলাই। মাঝেমধে৵ বিরতি দিয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা’।
ঘোষিত অনুষ্ঠানমালা অনুযায়ী ১ জুলাই মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।
এ ছাড়া আজ জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির সূচনা করা হবে। এটি চলবে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত। এদিন জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হবে।