বিপুল জনস্মৃতি ও প্রত্যাশা এবং নানা অনিশ্চয়তার দোলাচলের মধ্যে প্রথম বছর পূর্ণ হলো জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের। এই অভ্যুত্থানে সারা দেশের নাগরিক শক্তির এক অসাধারণ ও দুঃসাহসী ঐক্য গড়ে ওঠে, যা চেপে বসা শেখ হাসিনার দীর্ঘ দেড় দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে উৎখাত করে।

সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ অভ্যুত্থানের সূচনা। নেতৃত্ব দেন তরুণ ছাত্রছাত্রীরা। উত্তরোত্তর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার সে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নিরীহ আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চাপিয়ে দিলে এই দমন–প্রচেষ্টা সীমাহীন নিষ্ঠুরতায় পৌঁছায়। সাধারণ মানুষ দেশের সন্তানদের এই অবাধ হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মেনে নেয়নি। মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে তারা দলে দলে রাজপথে নেমে এসে শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করে।

আন্দোলনের ভেতরে–বাইরে

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসন গণ–অভ্যুত্থানের পটভূমি রচনা করেছিল। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পরপর তিনটি নিয়ন্ত্রিত ও একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমশ নিজের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করে সব রকমের বিরোধী মত ও কার্যক্রম কার্যত রুদ্ধ করে দেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, গায়েবি মামলা ইত্যাদি আইনি–বেআইনি নিষ্পেষণে দেশ ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়। বিরোধী মতের প্রকাশ হয়ে ওঠে অপরাধ, গণমাধ্যম নজিরবিহীন আক্রমণের শিকার হয়, রাজনৈতিক নিগড়ে বাঁধা পড়ে বিচারব্যবস্থা।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সময়ে–সময়ে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিলেও বলপ্রয়োগে ও কূটকৌশলে সরকার তা অকার্যকর করে দেয়। দলটির কর্মীদের ওপর দুর্বিষহ অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে সরকার আন্দোলনগুলো দমন করে। বস্তুত আওয়ামী শাসনের দেড় দশকে তাঁরা অপরিসীম নির্যাতনের শিকার হন। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও একইভাবে দমন করা হয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের উন্মেষ এই রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে। এ আন্দোলনের পূর্বসূত্র পাওয়া যাবে স্কুলছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে। বিপুল জনসমর্থিত এসব আন্দোলন দানা বেঁধেছিল ‘অরাজনৈতিক প্রজন্ম’ বলে চিহ্নিত কিশোর–তরুণ ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্বে। এ আন্দোলনগুলোই হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান যার চূড়ান্ত প্রকাশ। এসব আন্দোলনে বিকাশপ্রবণ নতুন রাজনীতির নানা লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, পুরোনো আদলের রাজনীতি যাকে আমলে নেয়নি।

সাজ্জাদ শরিফ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হলে হঠাৎ অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যু ঢাবি ছাত্রীর

রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসমা আক্তার লিজা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভোরে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ।

লিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। তার বাড়ি নাটোরে।

আরো পড়ুন:

১৪ আগস্ট ‘প্রথম স্বাধীনতা দিবস` পালিত

ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একজন শিক্ষার্থী জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন লিজা। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার হৃৎপিণ্ডে টিউমার ধরা পড়ে। তার ফুসফুসেও পানি জমে গিয়েছিল। পরে তাকে অন্য একটি মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ জানান, আসমা আক্তার লিজাকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সিট ফাঁকা না থাকায় পরে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ভোরে তিনি মারা যান।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে লিজার জানাজা হয় বলে জানান দেদী আল ফরহাদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।

ঢাকা/সৌরভ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ