গাজায় থামছে না মৃত্যুর মিছিল, ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরো ৯৭ ফিলিস্তিনি
Published: 1st, July 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও কামানের গোলাবর্ষণে গতকাল সোমবার অন্তত ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্থানীয় সূত্রগুলোর বরাতে এ খবর দিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে জেইতুন, শেজাইয়া ও আল-তুফাহ এলাকায় বিমান হামলার পাশাপাশি কামানের গোলাবর্ষণও বাড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্র অনুসারে, সেনাবাহিনী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল চারটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি জেইতুন পাড়ায় এবং একটি গাজা শহরের পূর্বে আল-তুফাহ পাড়ায়।
আরো পড়ুন:
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির উদ্যোগে কাজ করছে মিসর
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫৬,৫০০ ছুঁয়েছে
সর্বশেষ হামলায়, গাজা শহরের সমুদ্র সৈকতে একটি ক্যাফে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজা শহরের পশ্চিমে সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত ওই ক্যাফেতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কমপক্ষে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, এতে ক্যাফেটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক মানুষদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার পর, অন্তত পাঁচ জনের মরদেহ আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে বলে একটি মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে।
মধ্য গাজার আল-আওদা হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা এলাকার দক্ষিণে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন।
চিকিৎসা সূত্র অনুসারে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুুতদের তাঁবু লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়ে একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের সাবরা পাড়ায় একটি বাণিজ্যিক গুদাম লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ১০ জন ফিলিস্তিনির দেহের খণ্ডিত অংশ এবং বেশ কয়েকজন আহতকে আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে আনা হয়েছে। একটি মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাণিজ্যিক গুদামটি দাতব্য সংস্থাগুলো গাজার বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সাহায্য গ্রহণ ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করে।
এদিকে, গাজা শহরের জেইতুন পাড়ার আল-সিক্কা স্ট্রিটে ইসরায়েলি হেলিকপ্টার বোমা ফেলার পর একজন নারীর মরদেহ এবং আহত বেশ কয়েকজনকে ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে আনা হয়েছে, একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, একই এলাকার একটি পেট্রোল স্টেশনের কাছে ড্রোন হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।
সূত্র অনুসারে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শহরে একদল ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর হাসপাতালে চারজনের মরদেহ আনা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের মেডিকেল সূত্র আনাদোলুকে জানিয়েছে, পৃথকভাবে, কাতিবাতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নারীসহ তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো ১৩ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলে আল-সাহাবা মেডিকেল কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরো একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আল-তুফাহ পাড়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আরো তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলে আল-ওয়াহদা স্ট্রিটে একটি ড্রোন জনতার উপর হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
একই এলাকায়, গাধার গাড়িতে আরেকটি হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
পূর্ব গাজা শহরের শেজাইয়া পাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন নিহত হয়েছেন।
উত্তর গাজার জাবালিয়ার হালাওয়া মোড়ের কাছে বেসামরিক মানুষদের একটি দলকে লক্ষ্য করে পৃথক হামলায় আরো তিনজন নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল একজন ফ ল স ত ন জন ফ ল স ত ন ইসর য় ল ন ন হত ল র পর ইসর য শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
২০ মিনিটেই মিলল টিসিবির পণ্য, খুশি ক্রেতা
চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাহমুদ করিম। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশেই আমবাগান এলাকায় থাকেন। স্বল্প আয়ের সংসার চালাতে হয় হিসাব করে। তাই খবর পেলেই চলে আসেন টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে পাওয়া গেল নগরের টাইগারপাস এলাকায়। পণ্য নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছেন মাত্র।
মাহমুদ বলেন, প্রায় এক বছর ধরে টিসিবির পণ্য কিনছেন তিনি। ছোট্ট একটি ঝাল নাশতার দোকান তাঁর। এ আয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুল–কলেজের বেতন দিয়ে সংসারে টান পড়ে। আগে ধস্তাধস্তি করে পণ্য নিতে হতো। এবার ২০ মিনিট অপেক্ষা করেই পণ্য পেয়েছেন। এগুলো দিয়ে এ মাসে কিছুটা খরচ বেঁচে যাবে তাঁর।
প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিদিন নগরের ২৫টি আলাদা স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে পরিবার কার্ডের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি চলছে।
আজ নগরের ৯টি ওয়ার্ডের ২৫টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। এর মধ্যে শুলকবহর, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, উত্তর আগ্রাবাদ, পূর্ব মাদারবাড়ী, আন্দরকিল্লা, উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের তিনটি করে স্থানে এবং দেওয়ান বাজার ও বক্সিরহাট ওয়ার্ডের দুটি করে স্থানে পণ্য বিক্রি হয়েছে। পরিবেশকেরা জানিয়েছেন, কোনো স্থানে পণ্য না পেয়ে ক্রেতারা ফিরে যাননি। ফেরত যাওয়া ক্রেতার সংখ্যা সর্বোচ্চ পাঁচ।
টিসিবি সাধারণত দুইভাবে পণ্য বিক্রি করে থাকে। একটি সারা বছর ধরে চলে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে। নগরের প্রায় তিন লাখ পরিবার এ সুবিধা পেয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরে ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। সবশেষ গত কোরবানির ঈদে বন্ধ হওয়ার পর চলতি আগস্টে আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মূলত যেসব গ্রাহকের কাছে পরিবার কার্ড নেই, তাঁরা সারি বেঁধে ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন। পরিবার কার্ডধারীদের ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ মাসের কার্যক্রমে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে পাঁচটি। এ ছাড়া প্রতি ট্রাকে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে এখন প্রতিদিন ৫০০ ক্রেতা পণ্য কিনতে পারবেন।
টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নগরে মোট পরিবেশকের সংখ্যা ১৫৯। প্রতিদিনই স্থান বদল করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব ওয়ার্ডে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে একাধিক ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এবার দামও কমানো হয়েছে, বরাদ্দও বেড়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম থেকে তেল, ডাল ও চিনি কিনতে আগে একজন ক্রেতার খরচ হতো ৫২০ টাকা। মাঝখানে পবিত্র রমজানে খেজুর যোগ হওয়ায় সেটি ছিল ৫৮৮ টাকা। তবে এবারের কার্যক্রমে প্রতিটি পণ্যের দাম কমিয়েছে টিসিবি।
টিসিবি জানিয়েছে, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রমে এখন ভোজ্যতেল ২৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা, ডাল ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা ও চিনি ৫ টাকা কমে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় খরচ কমেছে ৭০ টাকা। এখন একজন ক্রেতার ৪৫০ টাকা খরচ হবে। তবে পরিবেশকের দোকান থেকে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে কেনা পণ্যের দাম একই থাকছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামে টিসিবি পরিবেশক সমিতির সভাপতি আবদুস ছবুর বলেন, বরাদ্দ বাড়ানোর কারণে পরিবেশক ও ক্রেতার লাভ হয়েছে। পরিবহন খরচের পর পরিবেশকদের হাতে কিছু লাভ থাকবে। অন্যদিকে আগে অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে হতো। এখন সে সংখ্যাও কমেছে।