Prothomalo:
2025-07-01@14:01:24 GMT

ছোটু ও নানাভাইকে স্মরণ

Published: 1st, July 2025 GMT

প্রিয় কাউকে স্মরণ করে ১ জুলাই কিছু লেখা আমার জন্য চ্যালেঞ্জের। দিনটি তাঁদের দুজনের স্মৃতির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। তাঁরাও হয়তো এটাই চাইতেন। আমার ছটফটে ছোট ভাই এমন এক জায়গায় গেছে যে তাকে পরপারে পাড়ি জমানো নানাভাইয়ের সঙ্গে একই দিনে স্মরণ করা ছাড়া উপায় নেই।

ছোটু (ফারাজ হোসেন) আর নানাভাই (লতিফুর রহমান)—আজ এই দুজনের কথা স্মরণ করে আমি ভাবছি, নানাভাইয়ের সঙ্গে ২০ বছরের একটা ছেলের কী মিল থাকতে পারে। দেখছি, অনেক মিল। তাঁদের শান্ত উপস্থিতি বাসার সবাই অনুভব করে। তাঁদের আত্মবিশ্বাস নীরবে অবিশ্বাস্য শক্তির জোগান দেয়। ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার গভীর অনুভূতি ছিল দুজনের। ছিল প্রতিকূলতার মুখে পিছিয়ে না যাওয়ার শক্তি।

ফারাজ আর আমি যখন ছোট্ট, তখন নানাভাই ও নানুমাকে নতুন স্কুলবর্ষ শুরুর আগে একদিন সন্ধ্যায় দেখতে যাই। সে রাতে নানাভাই আমাদের সেন্ট এডমন্ডসের বোর্ডিং স্কুলে তাঁর প্রথম দিনের ঘটনা শোনান। এক শীতের সকালে নতুন শিশুশিক্ষার্থী হিসেবে তিনি শিলংয়ের স্কুলটিতে গিয়েছিলেন। তাঁর এক বছরের বড় একজন শিক্ষার্থী তাঁকে বিরক্ত করা শুরু করেন। নানাভাইয়ের কথায়, ওই শিক্ষার্থী ‘মজা করার অভিনয়’ করছিলেন। তাই নিজেকে ঠিক রাখতে কিছু একটা করতে হয়েছিল তাঁকে। নিজের চেয়ে বড় ছেলেটিকে থামাতে তিনি তাঁকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে প্রতিবাদী শিশুর পরিচয় দেন। কেননা জানতেন, কাউকে উৎপীড়ন করা ঠিক নয়। ঘটনাটি শুনিয়ে তিনি আমাদের শেখাতে চেয়েছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও আমাদের অবশ্যই লড়াই করার শক্তি জোগাতে হবে।

সেই ছোট লতিফুর রহমান পরে ওই একই চেতনায় জীবন কাটিয়েছেন। নিজের, পরিবারের ও প্রিয়জনদের রক্ষায় উঠে দাঁড়িয়েছেন।

একজন তরুণ হিসেবে ফারাজকে নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বৃহত্তর পরিসরে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি হয় সে। নিজের জীবন যখন বিপদাপন্ন, ফারাজ তখন লড়াই, রক্ষা করা ও মন্দ শক্তির কাছে হার না-মানাকে বেছে নিয়েছে।

১ জুলাই নানাভাই ও ছোটুকে স্মরণ করতে হলে তাঁদের একই রকমের ন্যায়নিষ্ঠ মূল্যবোধ আমাদের সমুন্নত রাখা উচিত; যে মূল্যবোধ দুজনই তাঁদের জীবনে ধারণ করেছেন। বিরাট বিপর্যয়, অযাচিত চাপ ও ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভালো কিছু করতে আমাদের অবিচল থাকা উচিত। তাঁদের সম্মানে সেভাবেই দাঁড়ানো উচিত, যা তাঁরা দেখিয়ে গেছেন।

লতিফুর রহমান ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ফারাজ হোসেন সেই ছেলে, যে হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় বীরোচিতভাবে জীবন দিয়েছে। তবে আমার আর আমার পরিবারের কাছে তাঁরা সব সময় একজন নানাভাই আর একজন ছোটু হয়েই থাকবে। নানাভাই আমাদের নানা এবং কারও স্বামী, কারও বাবা; আর ছোটু আমার ভাই এবং কারও ছেলে, কারও নাতি। আমাদের প্রিয় লতিফুর রহমান ও ফারাজ হোসেন ন্যায়ের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন।

আজকের এই দিনে আমরা আমাদের এ দুই অভিভাবক দেবদূতকে একসঙ্গে স্মরণ করি। নানাভাই ও ছোটুকে সত্যিকারভাবে স্মরণ করা হবে যদি আমরা সাহস নিয়ে বাঁচি, যা তাঁরা আমাদের মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন। প্রার্থনা করি, তাঁদের ছড়িয়ে যাওয়া আলো আগের চেয়ে উজ্জ্বল হোক, আর যে শক্তি ও সাহস তাঁরা দিয়ে গেছেন, তা যেন কখনো মলিন না হয়।

সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাজা মওকুফের পর রাজশাহী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৭ জন

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭ বন্দীর সাজা মওকুফ করেছে সরকার। তাঁরা আজ সোমবার সন্ধ্যার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রয়েছেন। তিনি কোনো ফোন নম্বর বলতে না পারায় কারা কর্তৃপক্ষ রাতেই তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

কারাবিধির ৫৬৯ ধারা মোতাবেক সরকার এই সাতজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো বন্দী তাঁর সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ না থাকলে, সরকার চাইলে বিশেষ বিবেচনায় তাঁকে মুক্তি দিতে পারে। এই ধারায় মূলত দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের মুক্তির সুযোগ রয়েছে।

রাজশাহী কারাগার সূত্রে জানা গেছে, মুক্তি পাওয়া বন্দীরা সর্বনিম্ন ৯ মাস ১৬ দিন থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর ৮ মাস ১৪ দিনের সাজা মওকুফ পেয়েছেন। প্রত্যেকেই হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন।

এঁরা হলেন নওগাঁ সদরের ডাফাইল গ্রামের মোসলেম হোসেন, পত্নীতলা উপজেলার সম্ভুপুর গ্রামের বাসুদেব পাহান ও সাপাহার উপজেলার কৈবতপাড়া গ্রামের আবু তালেব; রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বলিহার গ্রামের জামাত আলী, মোহনপুর উপজেলার চুলনিয়াপাড়া গ্রামের আক্তার হোসেন ও পবা উপজেলার মাধবপুর গ্রামের আকবর আলী এবং বগুড়ার শিবগঞ্জের সংসারদীঘি গ্রামের শহিদুল ইসলাম।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী মুক্তি–সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশক্রমে ১২৫ জন বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। যাচাই-বাছাই করে সরকার প্রস্তাবিত ১২৫ জন বন্দীর মধ্য থেকে ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীর জরিমানার টাকা পরিশোধের শর্তে সাজা মওকুফ করে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, সাজা মওকুফ হওয়া ১৩ বন্দীর মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি চলমান অবস্থায় চারজনের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাঁরা আগেই মুক্তি পেয়েছেন। আর দুজন অন্য কারাগারে বদলি হয়ে গেছেন। তাঁদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই কারাগার থেকে তাঁদের মুক্তি হবে। অন্য সাত বন্দীকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই সাতজনেরও সাজার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। তাঁদের কিছু জরিমানাও ছিল। সরকারি আদেশ আসার পরপরই তাঁদের জরিমানার টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাঁদের মুক্তির পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাতজনের মধ্যে একজন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। কোনো ফোন নম্বর জানাতে পারেননি। তাঁর স্বজনদেরও মুক্তির বিষয়টি জানানো সম্ভব হয়নি। তাঁর বাড়ি নওগাঁ। মানবিক কারণে তাঁকে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আজ রাতেই বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় ১৯ হাজার ইয়াবাসহ একজন আটক, বড় মাদকের চালান জব্দ
  • রাজস্থলীতে দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে মাছ ব্যবসায়ী নিহত
  • চট্টগ্রামে আরও ১৫ জনের করোনা শনাক্ত
  • ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিকিৎসা পেলেন কয়েক শ মানুষ
  • ফোনালাপ ফাঁসের জেরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত
  • নারীরা তাদের স্বামীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারেন, সম্পর্কের বির্বতন নিয়ে অনুপম
  • গাজীপুরে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
  • একজনের প্রেমে পড়েছিলাম, এখন সে আমার বউ
  • সাজা মওকুফের পর রাজশাহী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৭ জন