ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিকিৎসা পেলেন কয়েক শ মানুষ
Published: 1st, July 2025 GMT
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও তাঁর নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের আয়োজনে এসব ক্যাম্পে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়েছেন কয়েক শ মানুষ।
গতকাল সোমবার দিনব্যাপী বরিশাল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নীলফামারী ও মাগুরায় মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
বরিশালের ক্যাম্পটি হয় সদর উপজেলার সাহেবের হাট বাজারে নজরুল সমাজকল্যাণ ক্লাব ও পাঠাগারে। এখানে চিকিৎসা নেন ৩১১ জন। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসাদের একজন ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া বেগম (৬০)। তিনি দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথায় ভুগছিলেন।
বয়োবৃদ্ধ এই নারী বলেন, বাজার থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে তিনি সাময়িক উপকার পান। কিন্তু পারিবারিক দৈন্যের কারণে কোথাও গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। তাই মেডিকেল ক্যাম্পের মাইকিং শুনে তিনি এখানে চলে এসেছেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ ও বিনা মূল্যে ওষুধ পেয়ে খুশি হয়ে রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মোগো গরিবে গো লইগ্গা এমন আয়োজন য্যারা করছে, হ্যাগো আল্লায় ভালো করুক। আমি প্রাণ খুইল্লা হ্যাগো লইগ্গা দোয়া করমু।’
চিকিৎসাসেবা পেয়ে নিজেদের খুশির কথা জানালেন দীর্ঘদিন ধরে জ্বালাপোড়া, উচ্চ রক্তচাপ ও ঘুমের সমস্যায় ভোগা বিশারদ গ্রামের মো.
বরিশালে চিকিৎসাসেবা দেন ডা. রউফুল ইসলাম হিমেল ও ডা. জয়দেব বোরাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফের আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার দাস, জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, মো. মিয়াজ সরদার, সেলস অফিসার মো. মিলন হোসেন প্রমুখ।
সাতক্ষীরার ক্যাম্পটি হয় আশাশুনি উপজেলার বুধহাটার করিম সুপার মার্কেটের ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে। আয়োজকেরা জানান, এখানে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৪৫০ জনের মতো।
সাতক্ষীরার ক্যাম্পে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিনাক কুমার বিশ্বাস ও প্রসূতি রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনামিকা বাছাড়। চিকিৎসক দেখিয়ে ও ওষুধ পেয়ে নিজেদের ভালো লাগার কথা জানান বুধহাটা গ্রামের শারমিন সুলতান (২৮), বুধহাটা গ্রামের মোস্তাক আহমেদ, গুনাকরকাটি গ্রামের তাসলিমা খাতুন (২৫), নৈকাটি গ্রামের মহব্বত আলী (৬৫) প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম। ক্যাম্প পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের এলাকা ব্যবস্থাপক নারায়ণ চন্দ্র হালদার, মাঠ ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন, মেডিকেল সার্ভিস কর্মকর্তা কামারুজ্জামান ও দীপক কুমার রায়।
কুষ্টিয়ার স্বাস্থ্য ক্যাম্পটি হয় মিরপুর উপজেলার অঞ্জনগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে। সেখানে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ৪২৫ জন রোগীকে বিনা মূল্যে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে।
এখানে রোগী দেখেন ডা. লুৎফুল নাহার, দেবাশীষ দেবনাথ, মনিরুজ্জামান শিমুল, মুরাদ আলী, ইয়াসমিন আরা ও আবদুস সামাদ। সহযোগিতা করেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের জ্যেষ্ঠ এলাকা ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র মেডিকেল সার্ভিসেস অফিসার মিলন মোল্লা, কুতুবুজ্জামান, মেডিকেল সার্ভিসেস অফিসার আমিরুল ইসলাম ও আশিক হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের উপবিক্রয় ব্যবস্থাপক মাসুদ পারভেজ।
নীলফামারীর ক্যাম্পটি হয় সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বেসরকারি হাসপাতাল নিউ এভার কেয়ার-এ। এখানে ৩০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। রোগী দেখেন ডা. মো. জাভেদ ইউসুফ, নাহিদ আকতার, রাবেয়া সুলতানা ও আতাউর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের পঞ্চগড় অঞ্চলের রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার মো. সোহাগ তালুকদার, সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার কামাল কৌটি সানা, সিনিয়র মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. গাজী সালাউদ্দিন, মো. রফিকুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. রেজওয়ান আহমেদ, প্রণয় বিশ্বাস দীপ্ত।
সৈয়দপুর শহরের একজন শ্বাসকষ্টের রোগী জাহানারা বেগম (৪০) বলেন, ‘অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। খবর পেয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছি। এখানে ডাক্তার দেখলাম, ফ্রি ওষুধও পেলাম।’
মাগুরার ক্যাম্পটি হয় শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পরিষদে। এখানে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শিশু, গাইনি, মেডিসিন ও অর্থোপেডিক বিষয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রায় আড়াই শ রোগীকে এ চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। গ্রামের মানুষ বড় কোনো সমস্যায় না পড়লে হাসপাতালে যেতে চান না। গ্রামে বসেই মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়ে উপকৃত হয়েছেন।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ফারাজ আইয়াজ হোসেন নিহত হন। আর ২০২০ সালের ১ জুলাই প্রয়াত হন তাঁর নানা, শিল্পপতি লতিফুর রহমান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স অফ স র ম র উপজ ল ল ইসল ম উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে