ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রেকর্ড জ্বালানি তেল পরিশোধন
Published: 1st, July 2025 GMT
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করেছে। ৫৭ বছরের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ তেল পরিশোধন করল সংস্থাটি। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় শোধনাগারটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইআরএল বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার। এখানে বিপিসির মাধ্যমে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন, এলপিজি, ফার্নেস অয়েলসহ ১৪ ধরনের জ্বালানি উৎপন্ন হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন ইআরএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান, বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা ও ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো.
ইআরএলের চেয়ারম্যান নাসিমুল গনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি তেল শোধন সম্ভব হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার শোধন কার্যক্রমে বড় অগ্রগতি হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শোধিত হয়েছিল ১২ লাখ ৭৯ হাজার টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৩ হাজার টন শোধন হয়েছিল, যা এত দিন ছিল সর্বোচ্চ।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া মহেশখালীতে ১০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন শোধনাগার এবং পায়রা বন্দরে আরেকটি শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীর জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল শোধন করতে পারে ইআরএল। দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা গেলে শোধন ক্ষমতা বেড়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত বলেন, বর্তমানে পরিশোধন ক্ষমতা যথেষ্ট না হওয়ায় প্রতিবছর ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি আমদানি করতে হয়। এতে সরকারকে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ জ র টন
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্থবির, দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০০ কনটেইনার কাঁচামাল আমদানি করে। তার বিপরীতে দিনে রপ্তানি হয় ১৫০ থেকে ১৭৫ কনটেইনার পণ্য। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গত শনিবার থেকে শিল্পগোষ্ঠীটির পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরবরাহব্যবস্থা গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছায়। আবার সেই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করা হয়। বর্তমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে পণ্য রপ্তানি গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে। আবার আমদানি পণ্য ছাড় করা না গেলে কাঁচামালের অভাবে কারখানা বন্ধ রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘কাস্টমস বন্ধ থাকায় গত শনিবার আমাদের প্রায় ৮ হাজার ডলারের ক্ষতিপূরণ (পোর্টডেমারেজ) গুনতে হবে। এভাবে যতক্ষণ কাস্টমস বন্ধ থাকবে, ততক্ষণ আমাদের লোকসান বাড়তে থাকবে।’ তিনি জানান, গত অর্থবছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা এই কর্মসূচির কারণে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে ঢাকার এনবিআর ভবন ও সংস্থাটির চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ।
অচলাবস্থার কারণে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কাস্টমস বন্ধ থাকায় গত শনিবার প্রায় ১০০ টন শাকসবজি বিমানবন্দর থেকে ফেরত নিয়ে যান রপ্তানিকারকেরা। শুধু তা–ই নয়, পণ্য পাঠাতে না পারায় কাতারে চলমান ফলমেলা একদিন আগেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকেরা। কাতার সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে ২৫ জুন এই মেলা শুরু হয়। ১ জুলাই পর্যন্ত মেলাটি হওয়ার কথা ছিল। এতে বাংলাদেশ থেকে ২২ রপ্তানিকারক ও ২ জন চাষি অংশ নেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি না হওয়ায় সেগুলো এক-তৃতীয়াংশ দামে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। তার চেয়ে বড় সমস্যা সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমদানিকারকেরা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকে যায়। আর একবার ক্রয়াদেশ হারালে সেটি ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন।
গত শনিবার সকাল ছয়টায় এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। তবে কিছু জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো কার্যক্রম চালু ছিল। কারণ, এসব জাহাজের নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমের অনুমোদন আগেই হয়েছে। তবে নতুন আসা জাহাজের নিবন্ধন হচ্ছে না।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি পণ্য কাস্টমসে শুল্কায়ন হওয়ার তিন দিন পর জাহাজে তোলা হয়। কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর কোন কোন জাহাজ রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়ে রওনা হলো সেটি আজকের পর বোঝা যাবে। যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী রপ্তানি হবে না, সেগুলো পরবর্তী জাহাজে পাঠানোর অনুমোদন বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পেল কি না, তা মঙ্গলবারের পর বোঝা যাবে। অনুমোদন না পেলে নিজেদের খরচে আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হবে কিংবা মূল্যছাড় দিতে হবে। এমনটি হলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ বাড়বে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১১ মাসে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে সর্বোচ্চ ৪৭৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
এনবিআরের এ অচলাবস্থা সহজেই এড়ানো যেত বলে মন্তব্য করলেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা হলেই সংকটটি এই পর্যায়ে যেত না। সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতার জন্য ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, কাস্টমস বন্ধ থাকায় দিনে ২৫০০-২৬০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। তার থেকে বড় সংকট হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ না হলে ক্রেতারা মূল্যছাড় চাইতে পারে। এমনকি ক্রয়াদেশ বাতিলও হতে পারে। এমন ধাক্কা বড় কারখানা সামলাতে পারলেও ছোটরা মুশকিলে পড়ে। অনেকে ঝরে পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ হাজার ২৯২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই আমদানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।