ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপোস নেই: মির্জা ফখরুল
Published: 1st, July 2025 GMT
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- আমরাই তো ২০২২ সালে প্রথমে ২৭ দফা, পরে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। অথচ বলা হচ্ছে বিএনপি সংস্কার মানছে না। এটি অপপ্রচার। আপনারা আমাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো দেখুন, বুঝুন। ইতিমধ্যে প্রায় অনেকগুলো বিষয়ে যেমন- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে একমত হয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমি তরুণদের বলব- আমরা ১৬ বছর ধরে একটাই বলছি- কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব বলেই তো নদী সাঁতরে সমাবেশ করে সরকারের পতন চেয়েছি। আগেই সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। সুতরাং ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপোস নেই। বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তন চায়। জুলাই সনদের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। সেটির দায়িত্ব সরকারের। তারাই বলুক যে, কোন বিষয়ে আমরা একমত বা দ্বিমত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপি কখনও আপোস করেনি, করবেও না। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে পারব।’
আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদদের সম্মানে এ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী করে বিএনপি চেয়ারপারসনের আগে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের পর্বে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন রাত ৭টা ৫০ মিনিটে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের মা, বোন, ভাই, ছেলে কিংবা বাবাকে হারিয়েছে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের বাহিনী শিশু থেকে শুরু করে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করেছে। অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছে। এই পরিবারগুলো খুবই অসহায়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন দেশের বাইরে থেকেও দল, দেশ ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসবে এটি শুধু বিএনপি নয়, অনেকেই ভাবেন। সেজন্যই আমদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে যাতে বিএনপি ক্ষমতায় না আসে। আমরাও বলিনি যে, ক্ষমতায় যাব। তবে আমরা ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না বলে যা বলা হচ্ছে সেটি তো অনৈক্যের জন্য। জাতিকে বিভক্ত রেখে দেশের উন্নয়ন ও মঙ্গল করা যায় না।’
অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য একটি হবে, সেটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য। সেটি ধরে রাখতে হবে এবং সেটিই আমাদের শক্তি। আমাদের স্বপ্ন হবে নতুন বাংলাদেশ, সবার আগে নতুন বাংলাদেশ। পারস্পারিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হবে। স্বর্গ থেকেও প্রিয় মাতৃভূমি। গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের অবদান ও রক্তের সম্মান আমাদের দিতে হবে। মতভেদ থাকবে কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা এগিয়ে যাবো সেটিই প্রত্যাশা ‘
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ,আরও এগিয়ে যাব।’
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘এক বছর আগের যে চেতনা ছিল সেটি অপস্রিয়মাণ। এটি দুঃখজনক। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসছি কিন্তু ঐক্য খুবই নিতান্ত। অন্যদিকে শত্রুরা বেড়ার ওপরে বসে আছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সমাজে তাদের দোসররা বিরাজ করছে। সবার কাছে বিনীত আবেদন কালবিলম্ব না করে আসুন জুলাই চেতনাকে জাগরুক করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যাই। সবকিছু কিন্তু এই মুহূর্তে সমাধান করা যাবে না। যতটুকু ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি সেটি নিয়েই আপাতত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
জামায়াতের মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াতসহ সকলেরই অবদান রয়েছে। এই দুই দলের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার। আজকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। আমরা অতীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিশ বছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আগামীতেও থাকব ইনশাআল্লাহ।’
আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেন আর ক্ষমতায় না আসতে পারে। কারণ দেশের ৪-৫ কোটি মা-বোন মনে করে, আওয়ামী লীগ আসলে তাদের সন্তানদের হত্যা করবে। কারণ তাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিল। সে কারণে তারা কিন্তু তাদের সুর নরম করবে এবং আবারও রাজনীতিতে আসতে চাইবে। এ ব্যাপারে সবাইকে এক থাকতে হবে। তারা ফিরলে রক্তে লাল করে ফেলবে। আমরা নতুন স্বপ্ন দেখতে চাই।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র জ ল ই অভ য ত থ ন গণত ন ত র ক ত র ক রহম ন গণতন ত র অন ষ ঠ ন সরক র র ক ষমত য় আম দ র আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম
বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। তারা বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভিত শক্ত করতে সাংবাদিকদের, বিশেষত আইন সাংবাদিকদের কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
রোববার রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘আইন সাংবাদিকদের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো)।
সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত আইন সাংবাদিকদের সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ অংশীদারিত্বে নিমকো এই কর্মশালা আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতা দেয় সুইডেন দূতাবাস।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
তথ্য সচিব আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভিত্তি মজবুত করতে সাংবাদিকদের, বিশেষত আইন বিষয়ক সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম।’
কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগীয় সংস্কার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি পৃথক জুডিশিয়াল সচিবালয় গঠন, জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরায় কার্যকরকরণ, সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন চালু এবং বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত আইন পাসের অগ্রগতি তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশাগত দায়িত্ব নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। গণমাধ্যমই পারে জনগণের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিতে।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামান এনডিসি। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা কেবল সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করেন না, তারা সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূতও বটে।’
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন পরিচালনা করেন ইউএনডিপি’র সিনিয়র রুল অব ল’ অ্যাডভাইজর রোমানা শোয়েগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম চৌধুরী, এপি’র ব্যুরো চিফ জুলহাস আলম এবং বাংলা আউটলুকের মুক্তাদির রশিদ।
বক্তারা বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া কাভার করতে হলে সাংবাদিকদের অবশ্যই আইনের মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্যের উৎস রক্ষা, সাক্ষ্য যাচাই, আদালতের ভাষা বুঝে সহজভাবে উপস্থাপন এবং সংবেদনশীলতার বিষয়গুলো সবসময় গুরুত্ব দিতে হবে।
কর্মশালার সঞ্চালনা করেন নিমকোর সহকারী পরিচালক ও কর্মশালার পরিচালক তানজিম তামান্না।
উপস্থিত ছিলেন নিমকোর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আব্দুল কাইয়ুমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।