ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভার তিন শিক্ষকের কাঁধে
Published: 8th, July 2025 GMT
বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো মৌলিক বিষয় পড়ানোর কোনো শিক্ষক নেই। বিজ্ঞান বিভাগসহ অন্যদের ব্যবহারিক ক্লাস বন্ধ। প্রতিটি ক্লাসে বিশেষ যত্নের জন্য শ্রেণিশিক্ষক দূরের কথা, নিয়মিত পাঠদানের শিক্ষকই নেই। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে এক অসম্ভব লড়াইয়ে নেমেছেন তিনজন মাত্র শিক্ষক।
ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এভাবেই অনিশ্চয়তা আর অপূর্ণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বক্তব্য প্রদান আর আলোচনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে দ্রুত কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সমস্যা সমাধানে।
এমন চিত্র তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের। এককথায় বলতে গেলে মাত্র দু’জন শিক্ষকের কাঁধে চাপছে প্রতিষ্ঠানের ওই ৬০০ শিক্ষার্থীর পাঠদানের দায়িত্ব, যা রীতিমতো অসম্ভব বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, সেদিন সকালেই তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক বিষয়ের শিক্ষক রুপেশ দাশ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এদিকে চলতি মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (বিডিবি) এ যোগদানের জন্য চলে যাবেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক তপু বিশ্বাস। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাড়া মাত্র দুইজন শিক্ষক থাকবেন ওই বিদ্যালয়ে। পরবর্তী সময়ে তাদেরই চালাতে হবে ওই ৬০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের এই সংকটকাল নিয়ে উদ্বিগ্ন ওই দুই শিক্ষক– ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক জামাল উদ্দিন এবং সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক এ এইচ এম লিয়াকত। ৯টি পদের মধ্যে শূন্য পদগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইসলামিয়াত, শারীরিক শিক্ষা, শূন্য হবে কৃষি শিক্ষা এবং বিএড প্রশিক্ষণে আছেন জীববিজ্ঞানের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষকের পদ জাতীয়করণের পর থেকেই শূন্য। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে কর্মরত আছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক ফয়যুল হুসাইন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবারই জানানো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা সদরে ১৯৫০ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি ১৯৫৪ সালে নিম্ন মাধ্যমিক ও ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরে ১৯৮৭ সালে বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়কণের আগে বিদ্যালয়টিতে ১৩ জন শিক্ষক ও ৫০০ শিক্ষার্থী ছিল। জাতীয়করণের পর থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট শুরু হয়। জাতীয়করণের তিন যুগ পরও পূরণ হয়নি প্রধান শিক্ষকের পদ। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১২ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। তা ছাড়া বিদ্যালয়ে অনুমোদিত একজন অফিস সহকারী, একজন অফিস সহায়কের পদও শূন্য।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, মঙ্গলবার আঞ্চলিক উপপরিচালকের সিলেট দপ্তরে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষক পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। তাদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চলছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের স্যান অ্যান্টোনিও শহরে প্রবল বৃষ্টির কারণে গুয়াডালুপ নদীর পানি বেড়ে এই বন্যা হয়। বন্যার পানিতে কের কাউন্টির নদী তীরবর্তী সামার ক্যাম্প ‘মিস্টিক’ প্লাবিত হয়। এতে ক্যাম্পে অংশ নেওয়াদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন মেয়ে ও তাদের একজন মেন্টর মারা গেছেন। এ ছাড়া আরো ১০ জন ক্যাম্পার ও একজন মেন্টর নিখোঁজ রয়েছেন।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প
ব্রিকস দেশগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
সোমবার এক বিবৃতিতে ক্যাম্প মিস্টিক বলেছে, “এই অকল্পনীয় ট্র্যাজেডিতে পরিবারগুলোর পাশাপাশি আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।”
অস্টিন আমেরিকান-স্টেটসম্যানের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্যাম্প মিস্টিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ৭০ বছর বয়সী রিচার্ড ইস্টল্যান্ড শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন।
স্থানীয় যাজক ডেল ওয়ে বিবিসিকে বলেন, “পুরো সম্প্রদায় তাকে (রিচার্জ ইস্টল্যান্ড) মিস করবে। তিনি একজন বীর হিসেবে মারা গেছেন।”
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কের কাউন্টি। এখানে কমপক্ষে ৮৪ জনের প্রাণ গেছে, যার মধ্যে ২৮ জনই শিশু। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ত্রাভিস, বার্নেট, কেন্ডাল, উইলিয়ামসন এবং টম গ্রিন কাউন্টিতেও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
কের কাউন্টির বন্যাকে বড় ধরনের বিপর্যয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগামী শুক্রবার টেক্সাস সফর করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
বন্যা আরো বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। ফলে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া বিপর্যয়ের চার দিন পার হওয়ায় জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে মৃতের সংখ্যাও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ