‘কোন গর্তে কতটুকু পানি, না জাইনে আন্দাজে চলতি হয়’
Published: 8th, July 2025 GMT
‘কোন গর্তে কতটুকু পানি, না জাইনে আন্দাজে চলতি হয়। আন্দাজ না খাটলি ওষ্ঠা খাইয়ে পড়তি হবে গর্তে। নিজের অবস্থা যাই হোক, প্যাসেঞ্জারের অবস্থা বেহাল। গর্তের পানির সঙ্গে ইটের গুঁড়া আর পানি-কাদায় গা ধুইয়ে উঠতি হয় সবার। ধাক্কা সামলাতে না পারলি হাত-পা ভাঙে। দিনকে দিন গর্তগুলো বড় হয়ে ভয়ংকর অবস্থা হচ্ছে।’ কথাগুলো খুলনার কয়রা উপজেলার ভ্যানচালক কালাম মোল্লার।
উপজেলার দেয়াড়া গোপালের মোড় থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থার এভাবে বর্ণনা দিচ্ছিলেন এই ভ্যানচালক। চার বছরের বেশি সময় ধরে সড়কের এ অংশজুড়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে গর্তগুলো। ভ্যান ও অটোরিকশার যাত্রীদের নিয়মিত নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে গর্তে পড়ে। বড় যানবাহনগুলো চলাচলের সময় কাদা-পানি ছিটকে পথচারী এবং পাশের দোকান ও বাড়িঘরের বিভিন্ন সামগ্রী ভিজে ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন এ সাত কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সদর থেকে ডুমুরিয়ার বেতগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬৪ কিলোমিটার সড়কের পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সড়ক যথাযথ মানে উন্নীত ও মজবুতকরণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ধীরগতি ও নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কোনো অভিযোগে কর্ণপাত না করে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইচ্ছামতো সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত খুঁড়ে ফেলে রাখে। অসমাপ্ত এসব স্থানে সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট কাজ ফেলে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। পরে আর কাজ হয়নি।
এ সড়কের কয়রায় জীর্ণ সাত কিলোমিটার অংশে তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কামিল মাদ্রাসা, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি কলেজ, হাসপাতাল ও দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। রোগী ও শিক্ষার্থীরা এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের ওই অংশ দিয়ে পরীক্ষার্থীদের ভ্যান ও অটোরিকশা অথবা মোটরসাইকেলযোগে আসতে হয় তাদের। অনেকেই গায়ে-পায়ে কাদা মেখে কেন্দ্রে আসছেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, হেঁটে ১০ মিনিটের পথ বৃষ্টি হলে এক ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যায় না। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে যেতে হচ্ছে। এতেও ঘটছে দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে পোশাক, বই-খাতা নষ্ট হয়। বাড়তি পোশাক নিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে তাদের।
সড়কের দুরবস্থার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কয়রা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরদার জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, কয়রা-খুলনা সড়কের কয়রা উপজেলা অংশে সাত কিলোমিটার সড়ক প্রায় চার বছর ধরে বেহাল। এ ছাড়া পাইকগাছা উপজেলা অংশেও সড়ক খুঁড়ে ফেলা রাখায় পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হয় গাড়িচালকদের। পণ্য আনা-নেওয়ায় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিপদে পড়তে হচ্ছে।
গাড়িচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘একটি প্রধান সড়কে এত দুরবস্থা দেশের কোথাও দেখিনি। মাঝেমধ্যে গাড়ি গর্তে পড়ে চাকা আটকে যায়। দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় তখন। ইঞ্জিনও বিকল হয়ে যায়।’
সড়কের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কাজ শেষ না করলে বরাদ্দের টাকা কেটে রাখা হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে ঠিকাদারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ইউএনও রুলী বিশ্বাস বলেন, দাপ্তরিক কাজে সপ্তাহে একাধিকবার এ পথে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। সড়কটির এমন খারাপ অবস্থা কেবল কয়রা উপজেলা অংশে, তা নয়; ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম পর্যন্ত বাঁকে বাঁকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জেলা সমন্বয় সভায় বারবার বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চীনা ক্ষেপণাস্ত্রের চালান হাতে পেয়েছে ইরান
ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য চীনা ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা এইচকিউ-৯বি ইরানের হাতে এসে পৌঁছেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় শক্তিশালী করতেই নিজেদের অস্ত্রভান্ডার সমৃদ্ধ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে তেহরান।
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করতে চাচ্ছে ইরান। সেই লক্ষ্যেই চীন থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ করেছে দেশটি।
একজন আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, গত ২৪ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর চীনের তৈরি ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তেহরানে পাঠানো হয়েছে। আরেক আরব কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা তেহরানের এই প্রতিরক্ষা জোরদারের প্রচেষ্টা বিষয়ে সচেতন এবং হোয়াইট হাউসকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে ইরান ঠিক কতটা ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা হাতে পেয়েছে, তা নিশ্চিত করেননি ওই আরব কর্মকর্তারা। ইরান এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মূল্য তেল দিয়ে শোধ করছে। চীন ইরানি তেলের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক এবং মার্কিন প্রশাসনের তথ্যমতে, গত মে মাসে ইরানের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ জ্বালানি রপ্তানি হয়েছে চীনে।
মিডল ইস্ট আই বলেছে, চীন ও ইরানের মধ্যে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক যে ক্রমেই বাড়ছে, ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ তারই ইঙ্গিত দেয়।
আলজাজিরা জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের বিরোধ আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সহজেই সমাধান করা সম্ভব। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি হামলার পর দু’পক্ষের মধ্যে আস্থার বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
সোমবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পেজেশকিয়ান। শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নেন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল পডকাস্টার টাকার কার্লসন। পেজেশকিয়ান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব ও বিরোধ খুব সহজেই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্ররোচনায় ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়েন। পেজেশকিয়ান আরও বলেছেন, সংঘাতের সময় ইসরায়েল তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তারা সেই অনুযায়ী কাজও করেছে, তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করেছি। তারা আলোচনা করতে চায়। স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।