ওয়েবসাইটের তথ্য জালিয়াতি প্রতারণার ফাঁদে ৭০০ শিক্ষক
Published: 8th, July 2025 GMT
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ওয়েবসাইটে অবৈধভাবে ভার্চুয়াল অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তথ্য জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সিলেটের ১০ থেকে ১২ জনসহ দেশব্যাপী প্রায় ৭০০ শিক্ষক প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়।
জালিয়াতিতে সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরবি প্রভাষক ও লাইব্রেরিয়ান পদের শিক্ষকরা। উত্তীর্ণ শিক্ষকদের তথ্য দিয়ে প্রতারকরা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আবেদন করে টাকাও জমা দিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আবেদন করতে পারছেন না। আবেদন করার চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট সাইটে প্রবেশই করতে পারছেন না তারা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবেদনের শেষ তারিখ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের প্রায় ৭০০ শিক্ষক। এদিকে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করাসহ বঞ্চিতদের পুনরায় আবেদনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর তদন্ত শুরু করেছে এনটিআরসিএ। সূত্রের তথ্য মতে, সোমবার বগুড়া থেকে প্রতারণায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান-৩) মাইনুল ইসলাম। ওই ব্যক্তি লাইব্রেরিয়ান পদে বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে জালিয়াতি করেন। বিষয়ভিত্তিক সবাই জানে কতটি পদ রয়েছে। যে বা যারা ভুয়া আবেদন করেছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ৪ জুন। যারা উত্তীর্ণ তথা চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠান পছন্দ করে আবেদন দাখিলের জন্য ১৬ জুন ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ২২ জুন থেকে আবেদন শুরু করেন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। নিয়ম অনুযায়ী উত্তীর্ণ শিক্ষক তাদের রোল, ব্যাচ ও জন্ম তারিখ দিয়ে ওয়েবসাইটে লগইন করে আবেদন জমা দেওয়ার কথা। সেটি করতে গিয়ে শত শত শিক্ষক ব্যর্থ হন। সে সময় ভার্চুয়াল জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
যাদের রোল, জন্ম তারিখ ও ব্যাচ ব্যবহার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত। এর মধ্যে একজন কুমিল্লার লাকসামের প্রভাষক রহমত আলী। তিনি ৯৫ মার্কস পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি সমকালকে জানান, তাঁর তথ্য দিয়ে অন্য একজন আবেদন করেছেন। যার সঙ্গে তাঁর ছবি, নাম ও স্বাক্ষরের মিল নেই। তাঁর মতো সাত শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের রাফি উদ্দিন, সিলেটের আব্দুর রাজ্জাক, আবুল কাশেমসহ একাধিক শিক্ষক এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। তারা আবেদনে উল্লেখ করেন, চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে পারছেন না। হ্যাকার চক্র তাদের রোল, ব্যাচ ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দিয়ে আবেদন সাবমিট করে রেখেছে। এ বিষয়ে এনটিসিআরসিএর আরেক সহকারী পরিচালক এসএম আতিয়ার রহমান (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন-৩) সমকালকে জানান, বিষয়টি তারা জেনেছেন। শিক্ষকদের আবার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনট আরস এ এনট আরস এ শ ক ষকর ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘রব্বানা হাবলানা’: পরিবারের জন্য এক অমূল্য দোয়া
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের নেককারদের নেতা বানাও।’ এই কথাগুলো কোরআনের সুরা ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতে লিপিবদ্ধ আছে।
মূল আরবি দোয়াটির উচ্চারণ হলো, ‘রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইয়ুন ওয়াজাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’
এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং পরিবারের কল্যাণ, সন্তানের নেক আমল এবং নিজের নেতৃত্বের জন্য আল্লাহর কাছে এক হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা।
আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪দোয়ার তাৎপর্যপবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানে আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এই আয়াতে তাঁদের একটি আকাঙ্ক্ষা কথা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা আল্লাহর কাছে এমন একটি পরিবারের প্রার্থনা করেন, যাঁরা তাঁদের চোখের শীতলতা এবং হৃদয়ের শান্তির উৎস হবে।
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল হতে শেখায়। এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।
এই দোয়ার দ্বিতীয় অংশ, ‘আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও,’ বোঝায় যে একজন মুমিনের উচিত নিজের পরিবারকে নেক পথে পরিচালিত করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্যের পথপ্রদর্শক হওয়া। (মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৮)
আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।কখন এই দোয়া করতে হয়‘রব্বানা হাবলানা’ দোয়াটি পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময় পড়া যায়—নামাজের পর, সিজদায় বা দৈনন্দিন জীবনে যখন ইচ্ছা। বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে শান্তি, সন্তানের নেক আমল বা পারিবারিক সুখ কামনায় এই দোয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করো, কারণ দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
এই দোয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আল্লামা শানকিতি বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে। একটি নেককার পরিবারই সমাজের মূল ভিত্তি এবং এই দোয়া সেই ভিত্তি মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। (শানকিতি, মুহাম্মদ আল-আমীন, আদ্বাউল বায়ান ফি ঈযাহিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৪৭৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ২০০৫)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৯৭৭)
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫