জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সাম্প্রতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা দুই শতাধিক কর্মকর্তা সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যাচভিত্তিক দেখা করে এ ক্ষমা চান তারা। এদের মধ্যে ২৮ থেকে ৪০ ব্যাচের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ বিষয়ে এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নিজ উদ্যোগে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করা ইতিবাচক পদক্ষেপ। এতে আন্দোলন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে। কর্মকর্তারাও নিজেকে নিরাপদ বোধ করবেন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে ও কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন। মাঠ পর্যায়েও ফিরে আসবে আগের মতো কাজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা।

এর আগে সোমবার কর ক্যাডারের আন্দোলনকারীদের কয়েকজন কর্মকর্তা এনবিআরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ক্ষমা চাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বিসিএস (কর) ক্যাডারের। এর মধ্যে ৪০, ৩৮, ৩৩, ৩১, ৩০, ২৯, ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা ছিলেন বেশি। কর ক্যাডারে পাশাপাশি বিসিএস (শুল্ক) ক্যাডারের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাও চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তারা ক্ষমা চাইতে গেলে চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করেন। ভয়ভীতিতে না থেকে দেশের স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। 

ওই সময়ে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, আয়কর বিভাগের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা ব্যাচভিত্তিকভাবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন চেয়ারম্যান তাদের বলেছেন, ‘আমার পক্ষে ক্ষমা করতে সমস্যা নেই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ক্ষমা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।’

সদ্য উপকর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা। তারাও চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রায় দুই মাসের আন্দোলনের ইতি টেনে গত ২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। ৩০ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নিজ দপ্তরে ফিরে আসেন। ওইদিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।

এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে শুরুর দিকে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনসহ কয়েকটি দাবিতে তারা সোচ্চার থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে ‘চেয়ারম্যানের অপসারণের’ এক দফা দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আন্দোলনে অনড় থাকলে সরকার কঠোর হতে শুরু করে। 

গত ২৯ জুন ৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওইদিন রাতেই ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। এদিকে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ছিল- গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন তথ্য সরবরাহ করে সরকারকে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৮৪৫ পৃষ্ঠার মেসেজ আদান-প্রদানের বিশদ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর গত কয়েকদিনে এখন পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এছাড়া আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে এনবিআরের তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কাস্টম হাউস বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত ও রাজস্ব আহরণে ব্যাঘাত ঘটানোর দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

অবসর, বদলি ও বহিষ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার এনবিআরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এসব কিছু সরকারের সিদ্ধান্ত। এনবিআরের নয়। এনবিআর শুধু সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত র ন কর মকর ত র কর মকর ত পর য য় প রক শ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নবীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৫

স্থানীয় দু’জন গণমাধ্যমকর্মীর বিরোধের জেরে সোমবার নবীগঞ্জে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একজন, আহত শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটক হয়েছেন সাতজন। তবে এখনও কোনো পক্ষ মামলা করেনি।
সংঘর্ষের পরদিন মঙ্গলবার নবীগঞ্জ এক অচেনা শহরে পরিণত হয়। প্রতিটি সড়ক ছিল জনশূন্য। মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোড়া আর ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট ও যানবাহন।  রাস্তায় যে দু-একজন চলাচল করছিলেন, তাদের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না।
নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষে নবীগঞ্জ শহরের দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। হাসপাতাল-ক্লিনিকও রক্ষা পায়নি। 
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেনি। এখন পর্যন্ত আটক ৫ জন। কেউ নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঠিকাদার উধাও, থমকে গেছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণকাজ
  • ওয়েবসাইটের তথ্য জালিয়াতি প্রতারণার ফাঁদে ৭০০ শিক্ষক
  • নবীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৫
  • এখন তো বৃষ্টির সময়, প্রায়ই খিচুড়ি রান্না করতে হয়...
  • এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইলেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী
  • অবসরের পর আবার নতুন সূচনা: বার্সায় আরও দুই বছর থাকছেন সেজনি
  • অবসর কাটাতে ছেলের সঙ্গে কানাডায় ববিতা
  • যারা বড় আকারে সীমা লঙ্ঘন করেছে, তা ভিন্নভাবে দেখা হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
  • যে ৭টি কারণে ধোনিকে আপনার মনে রাখতেই হবে