জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের বিরোধীরা। দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মুজিবুল হক চুন্নু একযোগে বলেছেন– তারা এখনও স্বপদে বহাল। 
এই তিন নেতা বলেছেন, মহাসচিব পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ অবৈধ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই তিন নেতা। আনিসুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির আড়াই কোটি টাকার হিসাব জি এম কাদের দেননি। দলীয় তহবিলে আসা চাঁদা এবং অনুদানের হিসাবও দেননি। হিসাব চাওয়ায় গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 
গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেওয়া জাপা গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পায় আগেই। অভ্যুত্থানের নেতারা এখন দলটিকে স্বৈরাচারের দোসর বলছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চাপে রয়েছে জাপা। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের পর সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, মহাসচিব মুজিবুল হককে সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের। 

আনিসুল ইসলাম বলেছেন, প্রেসিডিয়ামের যে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা বলে জি এম কাদের মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তা অবৈধ। কোরামও পূরণ হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে মহাসচিব প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান এবং আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করবেন। মহাসচিব চুন্নুর অজ্ঞাতে তথাকথিত সভা হয়েছে। গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বা কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মেলন হবে। চেয়ারম্যান পদে আনিসুল ইসলাম এবং মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থিতার ঘোষণা দেন। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের কাছ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা পাওয়া জি এম কাদেরকে সরাতে তৎপর হন জ্যেষ্ঠ নেতারা। 
প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না– এ কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন জি এম কাদের। কিন্তু ২৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি ছিল না। ক্ষুব্ধ আনিস ও হাওলাদার ২৮ জুনেই কাকরাইলে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। এটি ঠেকাতে জি এম কাদের একই স্থানে একই দিনে সমাবেশের ডাক দেন। পরে দুই পক্ষই পিছিয়ে যায়। 
গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, জাপা চেয়ারম্যান দলের যে কাউকে যে কোনো সময়ে বহিষ্কার করতে পারেন, পদও দিতে পারেন। এ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছিলেন চুন্নু। আনিসুল ইসলাম বলেছেন, যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই জাপার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু জি এম কাদের মৃত্যুপথযাত্রী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে জোর করে সই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। 

গত বছর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জি এম কাদেরকে ছেড়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জি এম কাদের একে একে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। 
আক্ষেপ করে চুন্নু বলেন, ‘এমন কী অপরাধ করলাম– প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন! মহাসচিব থেকে অব্যাহতি নিয়ে আপত্তি নেই। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জাপায় আছি। 
আনিসুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর কাউকে বাদ দেওয়া, পদ দেওয়ার ক্ষমতা নেই চেয়ারম্যানের। ফলে চুন্নুই মহাসচিব পদে রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীমের নিয়োগ অবৈধ। 
সংবাদ সম্মেলনে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও ছিলেন। ছিলেন প্রেসিডিয়ামের সাবেক ও বর্তমান সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রত্না, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা প্রমুখ। এ ছাড়া ছিলেন জাপার ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পদে থাকা নেতারা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ এম ক দ র এম ক দ র বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নে সময়সীমা বেড়েছে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (কুকসু) গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আরো ১০ কর্মদিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আরো পড়ুন:

কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে কুবিতে কুরআন বিতরণ

কুবি শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করায় ৫ যুবক আটক

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬তম সিন্ডিকেট সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যদের এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।

প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, “ছাত্র সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার জন্য সাত কর্মদিবস যথেষ্ট নয়। আমরা এরই মধ্যে চারদিন কর্মশালার মতো করে বৈঠকে বসেছি। আমরা যেহেতু এটা প্রথম করছি, অনেক বিষয় বিবেচনা করেই করতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসার পর বুঝতে পারছি, একজন আইনজ্ঞ দরকার। এজন্যই আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে আমরা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন স্যারকেও আমাদের এখানে নিয়ে আসব, যাতে আমাদের গঠনতন্ত্রটা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হয়। এজন্যই আমাদের আরও কিছুদিন সময় দরকার। আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে ১০ কর্মদিবস সময় চেয়েছি এবং তিনি সম্মতি দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “কমিটিতে আরো দুইজন সদস্য বাড়ানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের। তিনি এসে কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে আরো ১০ কর্মদিবস সময় চেয়েছেন। আমরা তাদের সময় দিয়েছি।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়নে সময়সীমা বেড়েছে
  • শাকসু নির্বাচন : গঠনতন্ত্র ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা