রুমমেট মানেই শুধু একই রুমে থাকা নয়, বরং এটি জীবন ও সময় ভাগ করে নেওয়ার একটি অভিজ্ঞতা। রুমমেটের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা কখনও কখনও একটু কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি কারও ব্যক্তিত্ব ও অভ্যাস আলাদা রকমের হয়। কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে রুমমেটের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
১. খোলামেলা যোগাযোগ বজায় রাখা
রুমমেটের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে সরাসরি যোগাযোগ। আপনাদের মধ্যে যে কোনো সমস্যা বা মতের বিরোধ হলে তা পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করুন। সমস্যা বা ক্ষোভ জমে গেলে তা সম্পর্ক নষ্টের কারণ হতে পারে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট কোনো সময়ে মিটিং বা চা-কফির আড্ডায় নিজেদের চাহিদা ও সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারেন। হালকা মেজাজে কথা বলুন, যাতে তা মনোমালিন্যের কারণ না হয়। খোলামেলা আলোচনা সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়, একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথও সহজ করে।
২.
যার যার গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং ব্যক্তিগত স্থানকে সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রুমমেটের অনুমতি ছাড়া তাদের কোনো ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহার না করা, তাদের ব্যক্তিগত কাজের সময় বাধা না দেওয়া বা বিরক্ত না করা উচিত। যদি দেখেন তারা পড়াশোনা বা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, তাহলে শান্ত থাকা ও অহেতুক উচ্চ শব্দ না করা– এগুলো ভদ্রতা ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।
৩. দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া
রুম শেয়ার করার মানে দায়িত্বও শেয়ার করা। ঘর পরিষ্কার রাখা, খাবার তৈরি করা, গোছগাছ এবং অন্যান্য কাজ ভাগাভাগি করলে উভয়ের জন্যই জীবন সহজ হয়ে যায়। একটি কাজের তালিকা তৈরি করে সাপ্তাহিক বা মাসিক কাজ ভাগাভাগি করে নিলে কাজ অনেকটাই কমে আসে। যেমন এক সপ্তাহ একজন রান্না করবে, অন্যজন রান্নাঘর পরিষ্কার করবে। নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে রুমমেটের সঙ্গে সমস্যা হবে না বরং একসঙ্গে কাজ করতে করতে সম্পর্ক আরও ভালো হয়। একইসঙ্গে এটি পারস্পরিক সম্মানের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
৪. অর্থনৈতিক বিষয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচালনা করা
অর্থনৈতিক বিষয় রুমমেটদের মধ্যে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ব্যাপারে শুরু থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। খরচ ভাগাভাগি করার একটি স্পষ্ট হিসাব করে নিন। বিদ্যুৎ বিল, ভাড়া বা ইন্টারনেট বিলের মতো খরচগুলো কীভাবে ভাগ হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। প্রতি মাসের খরচ ট্র্যাক করুন এবং এ ব্যাপারে হেলাফেলা করবেন না। যদি কোনো মাসে আপনি বেশি খরচ করেন অথবা কম খরচ করেন, তাহলে তা রুমমেটকে জানিয়ে রাখুন।
৫. নিয়মকানুন মেনে চলা
একসঙ্গে বসবাস করলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন তৈরি করা জরুরি। কখন ঘরে অতিথি আনা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করুন। সম্ভব হলে আগে থেকে প্ল্যান করে রাখুন। ঘুমের সময় বা ব্যক্তিগত সময়ের সময়সূচি মেনে চলুন। যদি আপনার রুমমেট সকালে ঘুম থেকে ওঠে আর আপনি রাতে জেগে থাকেন, তাহলে এমনভাবে চলুন যাতে কেউ বিরক্ত না হয়। আলো জ্বালা, শব্দ করা এসব বিষয়ে খেয়াল রাখুন। পার্টি বা বন্ধুবান্ধবের আড্ডা আয়োজন করার আগে রুমমেটের অনুমতি নিন। এ রকম কিছু নিয়মকানুন উভয়ের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে এবং অপ্রয়োজনীয় বিরোধ এড়াতে সাহায্য করে।
৬. বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখা
রুমমেটের সঙ্গে শুধু এক রুমে থাকা নয়, বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুললে একসঙ্গে থাকা হয়ে ওঠে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের। প্রয়োজনের সময় পাশে থাকুন যদি রুমমেটের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাদের সহযোগিতা করুন। মাঝে মধ্যে রুমমেটের পছন্দের খাবার, ছোট কোনো উপহার এনে দিয়ে বা তাদের বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করে তাদের মন ভালো করে দিন। একসঙ্গে সময় কাটাতে পারেন– সিনেমা দেখা, বাইরে খেতে যাওয়া বা একটি ছোট ট্যুর অথবা পিকনিকের পরিকল্পনা করতে পারেন। পরস্পরের সঙ্গে ভালো স্মৃতি এভাবেই গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু দৈনন্দিন জীবনকে মধুর করে তোলে না, বরং একসঙ্গে থাকার একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। v
তথ্যসূত্র: টাইমস ইন্ডিয়া, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ব্লগ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে নতুন তত্ত্ব কতটা বিশ্বাসযোগ্য
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সোলার সিস্টেম রিসার্চের বিজ্ঞানীরা চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে চাঞ্চল্যকর নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন। তাঁদের মতে, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে থেইয়া নামের মঙ্গল গ্রহ আকৃতির একটি গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের পর চাঁদের জন্ম হয়েছে। সেই সংঘর্ষে থেইয়া সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে কেবল পৃথিবীর ভূত্বক ও চাঁদের মধ্যে খনিজের চিহ্ন হিসেবেই থেইয়ার প্রমাণ দেখা যায়।
পৃথিবী ও চাঁদের খনিজের অনুপাত সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে থেইয়ার রহস্যময় উৎস উন্মোচনের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী টিমো হপ জানান, গ্রহ গঠনের জন্য সংঘর্ষ হওয়া শত শত গ্রহাণুর ভ্রূণগুলোর মধ্যে থেইয়া সম্ভবত অন্যতম ছিল। থেইয়া একসময় অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের মধ্যে একটি স্থিতিশীল কক্ষপথে ছিল। সৌরজগতের বিকাশের প্রথম ১০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর একটি লুকানো প্রতিবেশী ছিল, যা এখন সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। যখন থেইয়ার সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়, তখন সেই আঘাতে টিকে থাকা সব উপাদান হয় পৃথিবীর মধ্যে মিশে গেছে বা চাঁদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগৎ যখন গঠিত হয়, তখন বিভিন্ন উপাদানের আইসোটোপ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তখন থেইয়া গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করেছিল। সংঘর্ষের সময় থেইয়া ও আদি-পৃথিবী একসঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের গ্রহ ও চাঁদের জন্ম হয়। এই তথ্য সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে পাওয়া শিলা ও অ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে চাঁদ থেকে আনা শিলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রহাণু থেকে লোহার আইসোটোপ পরিমাপ করেছেন। দেখা গেছে, চাঁদ ও পৃথিবীর লোহার আইসোটোপের অনুপাত একই রকম আছে। থেইয়া ও আদি-পৃথিবী এত ভালোভাবে একসঙ্গে মিশে গিয়েছিল, তাদের আর আলাদা করা সম্ভব না। তবে থেইয়ার ঠিক কতটা অংশ চাঁদে ও কতটা অংশ পৃথিবীতে মিশেছিল, তা বের করা অসম্ভব। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী হপ বলেন, আইসোটোপিক গঠনের এই সাদৃশ্য থেইয়ার প্রাথমিক গঠন সরাসরি পরিমাপ করাও অসম্ভব করে তুলছে।
যদি থেইয়া সৌরজগতের শীতল বাইরের প্রান্তে গঠিত উল্কাপিণ্ডের মতো হতো, তবে আদি-পৃথিবী সম্পূর্ণ ভিন্ন আইসোটোপের মিশ্রণ ধারণ করত। থেইয়া ও আদি-পৃথিবী উভয়ই সম্ভবত সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ অঞ্চল থেকে আসা শিলাময় অ-কার্বনেশিয়াস উল্কাপিণ্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে। ধারণা করা হয়, থেইয়া প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছিল। এরপরে বৃহস্পতির মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে পৃথিবীর দিকে ঠেলে দেয়। এটি সূর্যের চারপাশে একটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল কক্ষপথে ছিল।
সূত্র: ডেইলি মেইল