পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে
Published: 9th, February 2025 GMT
পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূল্যস্ফীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, কর্মসংস্থান এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘‘চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট-ডিসেম্বর এই ৫ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে। গত তিন বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মত বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
গবেষণার ফলাফল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে: কৃষি উপদেষ্টা
রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার অধিকার রয়েছে: আসিফ নজরুল
মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছর নয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া পরিশোধে ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর ফলে চলতি বছর প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূপ খনন করে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘‘বর্তমানে টাকা ছাপানো বন্ধ আছে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ আছে। নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় অব্যাহত রয়েছে। দেশের ১ কোটি পরিবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে। ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ মজুত আছে আর আমদানি হচ্ছে তাতে পণ্যের দাম আরো কমে আসবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশে কোরিয়ান ইপিজেড নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। জমি জটিলতার কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পারছিল না। পতিত স্বৈরাচারেরা এই সমস্যা তৈরি করেছিল। এখন এই ভূমির সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। কোরিয়ান ইপিজেডকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এখানে বিনিয়োগে কোনো সমস্যা নেই। এই ইপিজেডে কোরিয়ার বিভিন্ন বড় কোম্পানি রয়েছে। আশা করছি, সমস্যা সমাধানের ফলে সেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।’’
শফিকুল আলম জানান, ‘‘গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার।’’
প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’’
বৈঠকে গত ৬ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থ সচিব ড.
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরের মধ্যে খুন সবচেয়ে কম সংঘটিত হয়েছে।’’
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের পালিয়ে যেতে যারা সহায়তা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের বেশিরভাগই ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে গেছে। ওই সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পুলিশকে কাজে ফেরাতে অনেক সময় লেগেছে। এরপর এই অপরাধে কারা জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।’’ বাসস
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমস য আগস ট বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।
আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।
অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।