পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূল্যস্ফীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, কর্মসংস্থান এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। 

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট-ডিসেম্বর এই ৫ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে। গত তিন বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মত বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত হয়েছে।’’

আরো পড়ুন:

গবেষণার ফলাফল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে: কৃষি উপদেষ্টা 

রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার অধিকার রয়েছে: আসিফ নজরুল

মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছর নয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। 
 
প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া পরিশোধে ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এর ফলে চলতি বছর প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূপ খনন করে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’

প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘‘বর্তমানে টাকা ছাপানো বন্ধ আছে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ আছে। নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় অব্যাহত রয়েছে। দেশের ১ কোটি পরিবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে। ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ মজুত আছে আর আমদানি হচ্ছে তাতে পণ্যের দাম আরো কমে আসবে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘দেশে কোরিয়ান ইপিজেড নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। জমি জটিলতার কারণে তারা বিনিয়োগ করতে পারছিল না। পতিত  স্বৈরাচারেরা এই সমস্যা তৈরি করেছিল। এখন এই ভূমির সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। কোরিয়ান ইপিজেডকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এখানে বিনিয়োগে কোনো সমস্যা নেই। এই ইপিজেডে কোরিয়ার বিভিন্ন বড়  কোম্পানি রয়েছে। আশা করছি, সমস্যা সমাধানের ফলে সেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।’’

শফিকুল আলম জানান, ‘‘গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার।’’ 

প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’’

বৈঠকে গত ৬ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থ সচিব ড.

মো. খায়রুজ্জামান।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরের মধ্যে খুন সবচেয়ে কম সংঘটিত হয়েছে।’’ 

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের পালিয়ে যেতে যারা সহায়তা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের বেশিরভাগই ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে গেছে। ওই সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পুলিশকে কাজে ফেরাতে অনেক সময় লেগেছে। এরপর এই অপরাধে কারা জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।’’ বাসস

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমস য আগস ট বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে মাইক্রোসফট

প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো চার ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন = ১০০০ বিলিয়ন) ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছেছে মাইক্রোসফট। গতকাল শুক্রবার কোম্পানিটির শেয়ারের দরের ঊর্ধ্বগতিতে এই মাইলফলকে পৌঁছায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো চার ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য স্পর্শ করে চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া। মাইক্রোসফট এখন সেই ক্লাবের দ্বিতীয় সদস্য।

গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে আজুর থেকে আয় হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। এই ঘোষণা আসার পরপরই মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। গতকাল লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে মাইক্রোসফট চার ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

গত এক দশকে ক্লাউড কম্পিউটিং খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট। এরই ফল আজুরের এই সাফল্য। রাজস্বের দিক দিয়ে আজুর এখন গুগল ক্লাউডকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও এখনো অ্যামাজনের ওয়েব সার্ভিসেসের (এডব্লিউএস) পরেই অবস্থান করছে। আজুর এখন মাইক্রোসফটের প্রায় সব খাতে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চ্যাটজিপিটিসহ বিভিন্ন এআই প্রকল্প, অফিস সফটওয়্যার, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম, গেমিং প্ল্যাটফর্ম এক্সবক্সসহ নানা সেবার পেছনে রয়েছে এই ক্লাউড অবকাঠামো।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ভবিষ্যতের কম্পিউটিং প্রযুক্তির প্রয়োজন মেটাতে যে সক্ষমতা গড়ে তোলা দরকার, তাতে নিজেদেরকে অনেকটাই প্রস্তুত করে ফেলেছে মাইক্রোসফট। চলতি বছরের শুরুতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ‘স্টারগেট প্রকল্প’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা সে সময় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমি আমার ৮০ বিলিয়নের জন্য প্রস্তুত।’

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অ্যামি হুড জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণে পরবর্তী প্রান্তিকেই আরও ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে মাইক্রোসফটের। এই গতিতে বিনিয়োগ চলতে থাকলে ২০২৬ অর্থবছরে কেবল ক্লাউড ও এআই খাতেই কোম্পানিটির ব্যয় ১২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সূত্র: দ্য ভার্জ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৫%
  • জুলাই মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৯%
  • জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৮ কোটি ডলার
  • ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে মাইক্রোসফট