ছুটিতে নানাবাড়ি বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
Published: 2nd, April 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে নানাবাড়ি বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে ফাতিমা সিদ্দিকা (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাচই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফাতিমা সিদ্দিকা লোহাগড়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চোরখালী এলাকার মোশাররফ হোসেন মোল্যার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি বেড়াতে আসে শিশু ফাতিমা। মঙ্গলবার বিকেলে অন্য শিশুদের সঙ্গে পুকুরে গোসলে নেমে ডুবে যায় সে। পরে স্থানীয়রা পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, ‘‘এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’’
ঢাকা/শরিফুল/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের দুর্বলতা কাটাতে কেন বেসরকারি থেকে নিয়োগ হবে না
সংস্কারের প্রক্রিয়ায় আমরা যারা বিভিন্নভাবে সরকারি কর্মচারী বা প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল, তাদের সবার লক্ষ্য ছিল জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রতিবেদনের ওপর। এই প্রতিবেদনের অনেক সুপারিশ এতই হতাশ করেছে যে সরকারকেও দেখে মনে হচ্ছে, তারা জনপ্রশাসন সংস্কারের আশা ছেড়ে দিয়ে অন্যগুলো নিয়ে চিন্তা করছে।
হবেই–বা কী করে, যে প্রশাসনের প্রতি মানুষের এত ক্ষোভ, এই কমিশন তাদের দিয়েই গঠন করা। ফলাফল, তাদের লাভের দিক দেখা হবে, এটাই স্বাভাবিক। এদিকে জনপ্রশাসনের কর্মচারীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়েও নিজেদের কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিছুদিন আগে দেশে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে স্পষ্ট করে এই দেশের ব্যবসার প্রতিবন্ধকতার একটা ছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারি লোকজনকে বললে কেউ বিশ্বাসই করবেন না। তাঁরা নিজেদের সংশোধনের চেষ্টাও করবেন না। তাঁদের সবার মিলিত চেষ্টার ফলই তো ছিল ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ র্যাঙ্কিংয়ে ১৬৮–তে থাকা। কিন্তু ২০০৬ সালে এই আমলাতন্ত্র দিয়েই কিন্তু আমাদের র্যাঙ্কিং ছিল ৬৫। তার মানে কিন্তু আমাদের দিয়ে সম্ভব ছিল।
আরও পড়ুনজনপ্রশাসন ঠিক হোক, তা ভেতরের লোকজনই চায় কি২৬ ডিসেম্বর ২০২৪এখন ফ্যাসিস্ট আমলের আমলাদের মানসিকতায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। তাঁরা রয়ে গেছেন তাঁদের জায়গাতেই। এর মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছে নতুন গ্রুপ ‘বঞ্চিত’ শ্রেণি। নজিরবিহীনভাবে অনেক আমলার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত কিছু করেও কি গতি আসছে? জনপ্রশাসন সংস্কার প্রস্তাবনা সরকারি খাতে মানুষ কমিয়ে এফিসিয়েন্ট না করে বরং আরও নতুন নতুন সরকারি নিয়োগের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে বেতন ভাতা বাবদ ২০ শতাংশ খরচ কমানোর কথা বলা হয়েছিল, যা নিয়ে এখনো কোনো কথা হচ্ছে না।
ব্যবসায় একটা বিধিবিধানের কথা সবাই জানে—৮০: ২০ রুল। এর মানে, কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ২০ শতাংশ কাস্টমার থেকে ৮০ শতাংশ ব্যবসা আসে। আমরা মজা করে সরকারি খাতেও এই রুলের কথা বলি। এখানে ২০ শতাংশ পরিশ্রমী কর্মচারীর মাধ্যমেই ৮০ শতাংশ কাজ হয়। নিজেরাই খেয়াল করে দেখতে পারেন। বিশ্বাস না হলে করপোরেট অফিসের মতো ‘ডেইলি ওয়ার্ক রিপোর্ট’ চালু করলেই বোঝা যাবে কে কী কাজ করছেন। আর সরকারি চাকরিতে ঢুকলে কখনোই চাকরি যাবে না—যত দিন এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তত দিন প্রশাসনকে কোনোভাবেই গতিশীল করা যাবে না।
প্রবাসী মেধাবী বাংলাদেশিদের অবশ্যই আমরা দেশে ফিরিয়ে আনব। আবার দেশে থাকা মেধাবী ও অভিজ্ঞ লোকদের কথাও আমরা ভুলব না। এই সরকারের অন্যতম সফল উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আমার মতো নগণ্য মানুষকেও বারবার লিখতে হচ্ছিল কেন বেসরকারি খাত থেকে উপদেষ্টা পরিষদে একজনকে নেওয়া হচ্ছে না। অবশেষে আমাদের কথা সরকার শুনল এবং তার ম্যাজিক আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
সেটা হবে দেশের নীতিনির্ধারণে একটা বড়সড় সংস্কার। দেশের জনগণের ভেতর থেকেই এ ব্যাপারে জনমত গড়ে ওঠা উচিত, যাতে ব্যাপারটা সরকার (সেটা যে সরকারই হোক) মেনে নিতে বাধ্য হয়। দলমতভেদে নানা রকম আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু দিন শেষে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভালো চাইলে কিছু কিছু জায়গায় দলমত-নির্বিশেষে কিছু সিদ্ধান্তে সবারই উচিত একইভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা।এরপর আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কথা। ফ্যাসিস্ট সরকারের ধসিয়ে দিয়ে যাওয়া আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক খাতকে দাঁড় করাতে কী প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দারুণ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁরা সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন; কারণ, তাঁরা আমলাতন্ত্রকে কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা জানেন, যা দেশের বাইরে থেকে জানা বেশ কঠিন।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর যোগ্যতা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তিনি নিজেও এই আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন। তাঁর সব চেষ্টা সত্ত্বেও গত ছয় মাসে দেশের বিনিয়োগ কমছে। বাস্তবতা হচ্ছে সরকারে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পর লুৎফে সিদ্দিকীর মতো আরেকজন ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও বড় কোনো সাফল্য আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, তাঁদের একার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের প্রেজেন্টেশন দেশের আমলাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বিনিয়োগ সম্মেলনে অন্য সরকারি কর্মচারীদের ইংরেজি শুনে অনেককেই উঠে যেতে দেখেছি। চিন্তা করেন তো, আশিক চৌধুরীর জায়গায় একজন সচিব যদি বসে থাকতেন, তাহলে কী হতো? তাঁদের ‘কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং’ তো আমরা গত ৫০ বছরেই দেখে আসছি।
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই স্রেফ বয়স ও পদে সিনিয়র বিবেচনায় বিভিন্ন স্পেশালাইজড প্রতিষ্ঠানের পদে কাউকে নিয়ে বসানো হয়, তাতে ওই সেক্টরে কারও স্পেশালাইজড এক্সপার্টিস আছে কি না, এটা মোটেই বিবেচনার বিষয় নয়। কয়েক বছর আগে স্পারসোর সর্বোচ্চ পদে আসীন—এমন একজন সচিবকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হলো খুব, যখন দেখা গেল মানুষটা ছিল কৃষিতে স্নাতকোত্তর এবং পরবর্তী সময়েও তাঁর কাজের সঙ্গে সঙ্গে স্পারসোর দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
এভাবেই যেখানেই ওপরের পোস্ট হয়, অনভিজ্ঞ আমলা থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলাফল তো হাতের সামনেই। কিন্তু বিশেষায়িত খাত, যেমন বিনিয়োগ সেক্টর, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, জনস্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, শেয়ারবাজার, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যটন, পানি ব্যবস্থাপনা, সড়ক পরিকল্পনাসহ নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ খাতের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে থাকা তো উচিত নিজ নিজ খাতে অভিজ্ঞ মানুষদের। সেটা হতে পারে সরকারি খাত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বা প্রবাসী অথবা দেশীয় বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুনবেসরকারি খাতের সংস্কার কেন এখনই করতে হবে২৬ নভেম্বর ২০২৪বহু তরুণ কিংবা অভিজ্ঞ মানুষ আছেন দেশ ও দেশের বাইরে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তাঁরা কখনোই ওই সব পদের বসার সুযোগই পান না, বিসিএস তাঁদের আরাধ্য নয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের উপযুক্ত জায়গায় ডাকলে দেশের জন্য অনেক কম সুবিধাতেই কাজ করবেন। কারণ, তাঁদের কাছে দেশ সবার আগে।
আমাদের তাই যিনি যোগ্য (বেসরকারি বা প্রবাসী), তাঁকেই পদ দেওয়ার দাবি করা উচিত। যদি সেটা সম্ভব হয়, তাহলে এই আমলাতন্ত্রের চিরায়ত সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পরবর্তী সময়ে সরকার হিসেবে যারাই আসবে, তাদেরও এই কাজের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সেটা হবে দেশের নীতিনির্ধারণে একটা বড়সড় সংস্কার। দেশের জনগণের ভেতর থেকেই এ ব্যাপারে জনমত গড়ে ওঠা উচিত, যাতে ব্যাপারটা সরকার (সেটা যে সরকারই হোক) মেনে নিতে বাধ্য হয়। দলমতভেদে নানা রকম আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু দিন শেষে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভালো চাইলে কিছু কিছু জায়গায় দলমত-নির্বিশেষে কিছু সিদ্ধান্তে সবারই উচিত একইভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা।
সুবাইল বিন আলম, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।
ই–মেইল: [email protected]