আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান ৮টি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সাজানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকটি হয়।

চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের সন্তানদের জন্য মাসিক উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন করে। বেশির ভাগ ভাতা দেওয়ার কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে।

তবে এ খাতে মোট বরাদ্দ কমছে। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় আনার পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

সূত্রগুলো জানায়, মোট বরাদ্দ কমলেও ভাতা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় কিছু কর্মসূচি এবার বাদ দেওয়া হচ্ছে। অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরেই এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল।

অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় দেখানো হয়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে। ফলে এটাও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ। সূত্রগুলো জানায়, পেনশনকে আগামী অর্থবছরেও এ খাতের বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হবে, তবে বাদ দেওয়া হবে সঞ্চয়পত্রের সুদ পার্থক্যকে।

অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থসচিব বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে গতকাল রোববার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি ভাতা যাঁদের কাছে যায়, তাঁদের ৫০ শতাংশেরই তা পাওয়ার কথা না। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের কারণে তাঁরা এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁদের যদি বাদ দেওয়া যেত, তাহলে প্রকৃত উপকারভোগীদের ভাতা দ্বিগুণ করা যেত।

অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় দেখানো হয়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পাবেন। আর ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত ৬০ হাজার জনকে দেওয়া হবে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে, যা বর্তমানেও দেওয়া হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। ৩০ এপ্রিলের পর এনআইডি ছাড়া ভাতা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ১৮ বছরের কম বয়সী উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে এনআইডির বদলে থাকতে হবে জন্মনিবন্ধনের সনদ। অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাতা গ্রহণকারীর অভিভাবকদের এনআইডি থাকতেই হবে।

বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী—কার ভাতা কত

চলতি অর্থবছরে ৬০ লাখ ১ হাজার জনকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগী ৬১ লাখে উন্নীত করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ ৪৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বয়স্কদের মাসিক ভাতার পরিমাণ বর্তমানের ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৬৫০ টাকা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এর আনুষ্ঠানিক নাম বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা। এ ভাতা বর্তমানে পাচ্ছেন ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন। ভাতাভোগী ১ লাখ ২৫ হাজার বাড়িয়ে উন্নীত হচ্ছেন ২৯ লাখে। মাসিক এ ভাতার পরিমাণ ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে। এ জন্য ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা থেকে করা হচ্ছে ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।

বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে। উপকারভোগী বেড়ে হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার জন। আর ভাতা বেড়ে হচ্ছে ৯০০ টাকা।

তবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় প্রাথমিক স্তরে ৯০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৯৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১ হাজার ৫০ টাকা ও উচ্চতর স্তরে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মোট উপকারভোগী ১ লাখ থেকে ৮১ হাজারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। উচ্চস্তর ছাড়া বাকি তিন স্তরে উপকারভোগী কমিয়ে ১ লাখ থেকে করা হচ্ছে ৮১ হাজার। ভাতার হার আগেরটাই থাকছে।

বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে। উপকারভোগী বেড়ে হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার জন। আর ভাতা বেড়ে হচ্ছে ৯০০ টাকা।বাড়ছে বেদে ও অনগ্রসরদের ভাতাও

বেদে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ হাজার ৮৯৮ জন বর্তমানে ভাতা পান। এ সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৯৮৮ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে ৫ হাজার ৬০০ জন বিশেষ ভাতা পান মাসিক ৫০০ টাকা হারে। আগামী অর্থবছরে ৬ হাজার ১৬০ জনকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে ৬৫০ টাকা হারে।

বেদেদের সন্তানদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর স্তরে যে মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মাসিক হারে, তা আগের মতোই থাকছে। তবে মোট উপবৃত্তিভোগী ৪ হাজার ৩৯৮ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৮৩৮ জন করা হচ্ছে।

এদিকে হিজড়াদের ভাতাও ৬০০ থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা হচ্ছে। তাদের মধ্যে উপকারভোগী বাড়ছে না।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৬৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হচ্ছে। মোট উপকারভোগী ৯০ হাজার ৮৩২ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১ লাখ করা হচ্ছে। বিশেষ ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি ও মাসিক উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। ৬০ হাজার জনকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। আগামী অর্থবছরে ৬৬ হাজার জনকে দেওয়া হবে ৬৫০ টাকা করে।

শিক্ষা উপবৃত্তিভোগীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর স্তরে ভাতা থাকছে বর্তমান হারেই ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

প্রয়োজনের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভালো বরাদ্দ নেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে সামান্য ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে কিছুই হয় না। এ খাতকে নতুন করে সাজানো দরকার, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা ভাতা পান। নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, সানেম

চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে ৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে তিন গুণের কাছাকাছি করা হচ্ছে এবং বরাদ্দ করা হচ্ছে ১০৮ কোটি টাকা।

চা–শ্রমিকদের উপকারভোগী বর্তমানে ৬০ হাজার জন। তাঁদের প্রত্যেককে এককালীন ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। এর বদলে উপকারভোগী ১ লাখ ৩৭ হাজার জনে উন্নীত করে আগামী অর্থবছরে মাসিক ৬৫০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের সন্তানদের ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে মাসিক উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ বাবদ নতুন করে সহায়তা দেওয়া হবে। এটাকে নতুন সিদ্ধান্ত হবে গণ্য করা হচ্ছে।

হিজড়াদের ভাতাও ৬০০ থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা হচ্ছে। তাদের মধ্যে উপকারভোগী বাড়ছে না।

মা ও শিশু সহায়তা নামে যে কর্মসূচি রয়েছে, তাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। বর্তমানে ভাতা দেওয়া হচ্ছে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার জনকে। ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৮৫০ টাকা। আর ভাতাভোগী বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৭ লাখ ৭১ হাজার।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে কেন্দ্র করে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভালো বরাদ্দ নেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে সামান্য ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে কিছুই হয় না। এ খাতকে নতুন করে সাজানো দরকার, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা ভাতা পান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত র ভ ত র পর ম ণ হ জ র জনক জনগ ষ ঠ র হ জ র জন র বর দ দ উপব ত ত ৬৫০ ট ক উপদ ষ ট ৫০ ট ক আসছ ল সরক র বয়স ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক

ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের(তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’

‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। কলেজের গণিত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।

কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।

ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়

কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।

২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।

বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।

শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাম–ঠিকানা বদলে এনআইডি–পাসপোর্ট, উড়াল দেওয়ার আগেই ধরা সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাই
  • অর্থনীতিতে কি মন্দা ঘনিয়ে আসছে
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিশেষ নীতিমালা, আবেদন শেষ ২৩ অক্টোবর
  • চলতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮% হতে পারে: আইএমএফ
  • ‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক
  • স্বামীকে ২১ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিচ্ছেন স্ত্রী