নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান চলছে নিবন্ধন (লাইসেন্স) নবায়ন ছাড়াই। স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ অনিয়ম বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চলতি অর্থবছরের দুই-তৃতীয়াংশ সময় পেরিয়ে গেলেও নিবন্ধন নবায়ন ছাড়া কার্যত অবৈধভাবে চলছে ৪টি বেসরকারি ক্লিনিকের কার্যক্রম। এ ছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকটি মেডিসিন সেন্টারের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বেপরোয়া কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে মিনি হসপিটাল। একই লাইসেন্সে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার কথাও জানান তারা।
নবীগঞ্জ এলাকায় ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের নামে তিনটি শাখা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। সীমিত পরিসরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার হলেও হাসপাতাল নামে তারা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জনবল সংকটসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিতে পারে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নবীগঞ্জসহ জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর এসব দুর্বলতা ও ব্যর্থতাকে পুঁজি করেই গড়ে ওঠে বেসরকারি চিকিৎসাসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেই সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বা অনুমোদনের  ব্যাপারে খুব একটা সচেতন না হওয়ায় তারা অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 
ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসা নেওয়া আব্দুল মালিক নামে এক রোগী জানান, এখানে গলাকাটা ব্যবসা চলছে। রোগীদের অতিরিক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় মোটা টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফিও বেশি। আউশকান্দি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে অপর একটি সেবা প্রতিষ্ঠানে আসা রহিমা বেগম বলেন,  ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসার পর ডাক্তার রোগী দেখার আগেই তিন হাজার টাকার পরীক্ষা করতে দিলেন তাঁর সহকারীর মাধ্যমে। সেগুলোসহ ডাক্তার রোগী দেখবেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্যে– বেআইনিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস বলেছেন, লাইসেন্স না থাকলে কোনো অবস্থায় বেসরকারি হসপিটাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর বিধান নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল নাম দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের কোনো ধরনের ফি বা জরিমানা দিয়ে ক্লিনিক চালানোর বিধান নেই। অনেকেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হসপিটাল বা মিনি হাসপাতাল নাম দিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন। বিষয়টি নজরে আসছে না স্বাস্থ্য বিভাগের কারোই। এ বিষয়ে বলেছেন, তারা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
চলমান পরিস্থিতির ব্যাপারে সচেতন মহলের প্রশ্ন– লাইসেন্স নবায়ন না করেই কীভাবে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান চলছে এবং কোনো দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নেবে? যদিও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই, তারা নবায়ন ফি জমা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণ জিজ্ঞাসা, শুধু ফি দিয়েই যদি প্রতিষ্ঠান চালান যায়, তাহলে লাইসেন্সের প্রয়োজন কি? মাসে বা বছরে কিছু করে টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালালেই হয়।
নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব (একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনস্টিক সেন্টার) এর ব্যাপারে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, উপজেলায় ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে পৌর শহরের হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতাল এবং আউশকান্দি বাজারের কেয়ার মেডিকেল সার্ভিসের লাইসেন্স ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নবায়ন করা হয়নি। এতে করে জনসাধারণ ঝুঁকি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে। কোনো দুর্ঘটনা হলে নিজেদের অসতর্কতাই হবে মূল কারণ।
স্থানীয়রা বলছেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলতে পারে না। লাইসেন্সের মেয়াদ চলে যাওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ হয়ে যায়। নিয়ম অনুসারে যতদিন পর্যন্ত নতুন করে লাইসেন্স না পাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যাদের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তারা নিজেরাই প্র্যাকটিস করেন সেখানে বসে। আর এখানে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করার সাহস পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত লাইসন্সে নবায়ন করতে পারেনি তারা সরকারি নবায়ন ফি জমা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইসেন্স নবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই হাসপাতাল অবৈধ হয়ে যায়। এ সময় তাদের সব ধরনের কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে বিবেচ্য।
এই কর্মকর্তা বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনার বৈধতা নেই। এ ব্যাপারে  খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক নামে লাইসেন্স নিয়ে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হসপিটাল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক অমিতের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তাঁর জানা নেই। প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের ব্যাপারে ব্যবস্থাপক বলতে পারবেন। পরে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হটলাইন সেবায় থাকা ব্যক্তিও। নবীগঞ্জ ইউনাইডেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হসপিটালের পরিচালক মাহবুবুল আলম সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও প্রথমে সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে তিনি দেশের বাইরে বলে জানান।
হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন রত্ন দেব বিশ্বাস বলেছেন, লাইসেন্স না থাকলে বেসরকারি হসপিটাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর বিধান নেই। সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা নিষেধ। লাইসেন্স ছাড়া ফি বা জরিমানা দিয়ে ক্লিনিক চালানো যায় না। এক লাইসেন্সে একাধিক হসপিটাল চালানোরও বিধান নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ড য় গনস ট ক স ন ট র ড য় গনস ট ক স ন ট র র হসপ ট ল ব যবস থ ব সরক র এক ধ ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আমানত রক্ষা করা ইসলামের সামাজিকতার সৌন্দর্য

আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান আত্মকেন্দ্রিকতার প্রভাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসলামের একটি মৌলিক মূল্যবোধ—‘আমানত’—চিন্তা ও চর্চা থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে।

অথচ আমানত শুধু একটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক ধারণা নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত আত্মিক ও নৈতিক দায়িত্ব, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষের ওপর অর্পণ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে এই আমানতের গুরুত্ব অত্যন্ত জোরালোভাবে বর্ণিত হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত জুলুমকারী ও মূর্খ।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২)

এই আয়াতে আমানতের মর্যাদা ও এর ওজনের গভীরতা প্রকাশ পায়। আল্লাহর এই দায়িত্ব মানুষের ওপর অর্পিত হওয়া তার বিশেষত্বের প্রমাণ, তবে এটি একই সঙ্গে তার জন্য একটি বড় পরীক্ষা।

নিশ্চয়ই আমরা আমানত পেশ করেছিলাম আসমান, জমিন ও পাহাড়ের সামনে, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা হতে ভীত ছিল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল।সুরা আহযাব, আয়াত: ৭২আমানতের ব্যাপকতা

‘আমানত’ শব্দটির অর্থ শুধু আর্থিক বা সামাজিক বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি ব্যাপক ধারণা, যা মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমানতের মধ্যে রয়েছে:

ব্যক্তিগত আচরণে সততা: কথায়, কাজে ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সত্যবাদিতা।

সামাজিক দায়িত্ব: পরিবার, সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন।

পরিবেশের প্রতি যত্ন: আল্লাহর সৃষ্টির খিলাফা হিসেবে প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা।

আধ্যাত্মিক আনুগত্য: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ও তাঁর আদেশ পালন।

আমানত একটি ইবাদতের অংশ, যা শুধু দুনিয়ার জন্য নয়, বরং আখিরাতের জবাবদিহির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে।

আরও পড়ুনইসলামে আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব২২ জুলাই ২০২২নবী–যুগে আমানতের উদাহরণ

ইসলামের প্রাথমিক যুগে নবীজি (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদিনার সমাজ আমানতের একটি জীবন্ত উদাহরণ। মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

এই সম্পর্ক শুধু সম্পদের বণ্টন নয়, বরং পারস্পরিক দায়িত্ব ও বিশ্বাসের একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এমনকি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর আনসারি ভাই সা’দ ইবনে রাবী (রা.) তাঁর সম্পদের অর্ধেক এবং এমনকি তাঁর স্ত্রীদের একজনকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই ত্যাগ ও বিশ্বাস আমানতের প্রকৃত চিত্র। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭৮০)

মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা আমানতের বাস্তব প্রয়োগ। আনসাররা তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ এবং এমনকি হৃদয়ের ভালোবাসা মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

এই ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে মদিনার সমাজে একতা, সহানুভূতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, যা আজও মুসলিম সমাজের জন্য একটি আদর্শ।

আধুনিক সমাজে আমানতের অবক্ষয়

দুর্ভাগ্যবশত, আজকের সমাজে আমানতের চর্চা দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, গোষ্ঠীবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদগুলোতে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বিভেদ, পারিবারিক স্বার্থপরতা এবং একে অপরের প্রতি সন্দেহ সমাজের ঐক্যকে ভঙ্গ করছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায়, অসৎ আচরণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসের অপব্যবহার।

এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও ‘নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা’ একটি নতুন সামাজিক আদর্শ হয়ে উঠেছে। মানুষ অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এটি শুধু সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ: আল্লাহ তা’আলা মানুষকে এই পৃথিবীর খলিফা বানিয়েছেন, যার মধ্যে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বও অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু আজকের উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস, নদী ও বাতাসের দূষণ এবং প্রাণপ্রবাহের ক্ষতি আমানতের এই দিকটিকে উপেক্ষা করছে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার পর পৃথিবীতে পুনরায় বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৬)

প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো এটিকে সংরক্ষণ করা, অপচয় রোধ করা এবং সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা।

আরও পড়ুনপ্রলোভনের এই যুগে নিজেকে রক্ষার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫আমানতের নষ্টের ভবিষ্যদ্বাণী

নবীজি (সা.) আমানতের অবক্ষয় সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন: ‘মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৫)

এই হাদিসটি একটি গভীর সতর্কবাণী। এটি ইঙ্গিত করে যে একটি সময় আসবে যখন বিশ্বস্ততা এতটাই বিরল হয়ে পড়বে যে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী আধুনিক সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে স্বার্থপরতা ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষ ঘুমাবে আর আমানত তার হৃদয় থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে...এমন সময় আসবে যখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন বিশ্বস্ত মানুষ আছে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮৬আমানতের পুনর্জাগরণের উপায়

আমানতের মূল্যবোধকে পুনরায় জীবন্ত করতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে:

সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা: কথা ও কাজে সততা বজায় রাখা এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

দায়িত্বশীলতা ও সততা: পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ।

ন্যায়পরায়ণ আর্থিক আচরণ: ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততা।

প্রকৃতির প্রতি যত্ন: পরিবেশ সংরক্ষণ, অপচয় রোধ ও সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা।

পারস্পরিক সহযোগিতা: সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য গড়ে তোলা।

আমানত শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত, যা আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্যের প্রকাশ। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। আমানতের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে আমরা একটি দয়ালু, ন্যায়ভিত্তিক ও ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এটি আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।

আরও পড়ুনআখিরাতে বিশ্বাস সত্কর্মের অনুপ্রেরণা০৪ মে ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ