অস্ট্রেলিয়ায় আজ শনিবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। জনমত জরিপগুলোতে লেবার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বী পিটার ডাটনের চেয়ে এগিয়ে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির কূটনৈতিক নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা অস্ট্রেলীয় ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে রেকর্ড ৮০ লাখ ভোটার আগেই ভোট দিয়েছেন।

আবাসনব্যবস্থার উন্নতি ও অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘মেডিকেয়ার’কে আরও শক্তিশালী করার মতো মূলনীতি বাস্তবায়নে আমাদের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন।অ্যান্থনি আলবানিজ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বিদেশে অস্ট্রেলিয়ার কয়েক হাজার নাগরিক ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ৮৩টি দেশে স্থাপিত কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থী সরকার এ মেয়াদে ‘খুবই শক্ত ভিত’ গড়ে তুলেছে। আবাসনব্যবস্থার উন্নতি ও অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘মেডিকেয়ার’কে আরও শক্তিশালী করার মতো মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য তাঁদের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্ন শহরে দেওয়া এক বক্তব্যে আলবানিজ বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যগুলো পূরণ করার কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’

ডাটনও তাঁর দিন শুরু করেছেন মেলবোর্নে। সেখানকার বেশ কয়েকটি আসনের ফল অনিশ্চিত। তা যেকোনো দিকেই যেতে পারে। ডাটন ‘দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য’ লিবারেল-ন্যাশনাল জোটকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে রেকর্ড ৮০ লাখ ভোটার আগেই ভোট দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ডাটন লিখেছেন, ‘লেবার সরকারের অধীন অস্ট্রেলীয়দের জীবনযাত্রার মান নজিরবিহীনভাবে কমেছে।’

নির্বাচনে দুই বড় দলই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া–সংক্রান্ত চাপের বিষয়টিকে তাদের প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে। তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, সেটি দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।

অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা মিত্র। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যে ঘাটতি থাকে। এরপরও অস্ট্রেলিয়াকে ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি। অস্ট্রেলীয় পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ডাটনকে ‘ট্রাম্পের মতো একজন রক্ষণশীল নেতা’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছে লেবার পার্টি। তাদের আশা, অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি যে ব্যাপক নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে, তা কিছুটা হলেও বিরোধী নেতার ওপর প্রভাব ফেলবে।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় লেবারই টিকে যাবে না নতুন কেউ আসবে২৮ এপ্রিল ২০২৫

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডাটন দুই দশক ধরে পার্লামেন্টে সীমান্ত নীতিতে কঠোর অবস্থান দেখানোর মধ্য দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হাজার হাজার সরকারি চাকরি কমানোর অঙ্গীকার করেছেন।

তবে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের সরকারি সংস্থায় কর্মী ছাঁটাইয়ের মনোভাবের সঙ্গে যেন তাঁকে তুলনা না করা হয়, সে চেষ্টাও করেন ডাটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ করার পর ডাটন পিছিয়ে পড়েন। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসেও ডাটন জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন।

লেবার সরকারের অধীন অস্ট্রেলীয়দের জীবনযাত্রার মান নজিরবিহীনভাবে কমেছে।পিটার ডাটন, লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের নেতা

গতকাল শুক্রবার দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত জনমত জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ও লিবারেল ন্যাশনাল জোট ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাবে।

রাজনৈতিক কৌশলবিদেরা বলছেন, ট্রাম্প এ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রভাব ফেলবেন না। আলবানিজ দৃঢ়ভাবে প্রচার চালিয়েছেন। ডাটন ভুল করেছেন। তাঁর ভুলগুলোর একটি ছিল, সরকারি কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব।

লেবার পার্টিকে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হতে পারে বলে কয়েকটি জনমত জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি ছাত্রদের ভিসা ফি আরও বাড়ছে২৮ এপ্রিল ২০২৫

জনমত বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান রয় মর্গান বলেছে, ২০০৭ সাল থেকে স্বতন্ত্র ও ছোট দলের ভোট দ্বিগুণ হয়েছে এবং প্রতিটি নির্বাচনে তা বাড়ছে।

নির্বাচনে দুই বড় দলই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া–সংক্রান্ত চাপের বিষয়টিকে তাদের প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে। তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, সেটি দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।

২০২২ সালের নির্বাচনে প্রাথমিক ভোটের ভাগ প্রায় সমান ছিল। লেবার পেয়েছিল ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ, লিবারেল-ন্যাশনাল জোট ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ ও অন্যরা ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। রয় মর্গানের প্রধান নির্বাহী মিশেল লেভিন বলেছেন, এ বছরও এক-তৃতীয়াংশ ভোটার স্বতন্ত্র ও ছোট দলকে ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় আগাম ভোট গ্রহণ শুরু, সামান্য এগিয়ে আলবানিজের দল২২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বনয ত র র ভ ট গ রহণ আলব ন জ র সরক র ব যবস থ কর ছ ন ৮০ ল খ র ড টন দশম ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

তিন উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে আমিনুলের ব্যাখ্যা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সবশেষ বোর্ড সভায় তিনজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া মানা হয়নি বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে। বিসিবি জানিয়েছে, সাখাওয়াত হোসেনকে ক্রিকেট টুরিজম উপদেষ্টা, ব্যারিস্টার শেখ মাহাদি হাসানকে আইনি উপদেষ্টা ও সৈয়দ আবিদ হোসেন সামিকে ক্রিকেট উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে সভাপতি সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে পারেন। কিন্তু উপদেষ্টা হতে হবে ‘দেশের খ্যাতনামা ক্রিকেটার/প্রখ্যাত ক্রিকেট সংগঠকদের’ কেউ। যে তিন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা কেউই ক্রিকেটার বা সংগঠক নন।

কোন প্রক্রিয়ায় তারা নিয়োগ পেয়েছে সেটা নিয়েই উঠেছে বিরাট প্রশ্ন। কোনো পারিশ্রমিক কিংবা নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেমে তারা কাজ করবেন না। তারপরও তাদের নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ধারনা দিলেন, তাদের নিয়োগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘অ‌্যাডজাস্ট’ করবেন তিনি। এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গেও কথা বলবেন।

আরো পড়ুন:

হান্নান এবার বিসিবির কোচিংয়ে

এইচপি স্কোয়াডে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ছেলে সানদিদ

গণমাধ‌্যমে আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘চলার পথে যত আইনি সহায়তার প্রয়োজন, সেজন‌্য ব‌্যারিস্টার মাহাদিকে আইন উপদেষ্টা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটের মানুষ হওয়াতে আইনগত অনেক কিছু জানা নেই। উনার পরামর্শে আইনি বিষয়গুলো সামলাবে বিসিবি।’’

ক্রিকেট উপদেষ্টা হিসেবে সামির নিয়োগ দিয়ে আমিনুলের দাবি, ‘‘ক্রিকেটে এখন অনেক ব্যাপার চলে এসেছে। ডিজিটালাইজেশন বলুন, স্ট্রিমিং বলুন, সামাজিক মাধ্যম সামলানো, এরপর আমরা যেহেতু তৃণমূলে যাচ্ছি, তাদেকে আমরা কীভাবে সম্পৃক্ত করব, করার পর তাদেরকে কীভাবে গড়ে তুলব, এজন্য আমাদের সাপোর্ট দরকার। তাকে আমরা ওই কাজগুলিতে ব্যবহার করব।’’

ট্যুরিজম উপদেষ্টা ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরবে বলে আশাবাদী আমিনুল, ‘‘বাংলাদেশের ট্যুরিজম ও হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি এখন নাম্বার ওয়ান। আমাদের কক্সবাজার ভেন্যু, সিলেট ভেন্যু, এছাড়াও ঢাকায় যখন খেলা হয়, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের পাশাপাশি ২০২৭ সালে মেয়েদের অনূধর্ব-১৯ বিশ্বকাপ আছে এখানে, সে বছর এশিয়া কাপ আছে, ২০৩১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে, এই ধরনের সব ইভেন্ট ধরে যেন তাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।’’

সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও তিনজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন বলে দাবি করলেন আমিনুল। তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে সমালোচনাও হয়নি। আমিনুলের দাবি, আইন উপদেষ্টা বাদে বাকি দুজনের পরামর্শ বোর্ড চাইলে গ্রহণ করবে। নয়তো তারা কেউই নিজের ইচ্ছাতে বোর্ডকে কোনো পরামর্শ দেবেন না।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ