টানা দুই সপ্তাহ বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে। গতকাল শুক্রবার শেষ হওয়া সপ্তাহে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। গতকালও মার্কেটে সোনার দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

এদিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছার পর আজ শনিবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম কিছুটা বেড়েছে। কম দামে কেনার সুযোগ কাজে লাগাতে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে সংবাদে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববাজারে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে পতনের মুখে সোনা। খবর রয়টার্সের

স্পট মার্কেটে গতকাল সকালে সোনার দাম দশমিক ৪ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ২২৮ ডলার ৫০ সেন্টে নেমে আসে। এর আগে গত ২২ এপ্রিল সোনার দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারে ওঠে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সোনার দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। গতকাল ইউএস গোল্ড ফিউচার্সের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ২৪৩ দশমিক ৩০ ডলার হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, দাম বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ‘বার্গেইন হান্টিং’, অর্থাৎ সোনার দাম কমে যাওয়ায় অনেকেই তা কিনে রাখছেন। অনেক বিনিয়োগকারীর আশা, দীর্ঘ মেয়াদে সোনার চাহিদা বাড়তি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার দাম এখনো সর্বোচ্চ দামের তুলনায় কয়েক শ ডলার কম। এ অবস্থায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, সোনার চাহিদা এখনো শেষ হয়নি।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, বাণিজ্যনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে গত এক মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ১১৪ দশমিক ৪৭ ডলার বেড়েছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে সেনার দাম অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন থেকে চীনের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা শুরু করেন, তখন থেকেই সোনার দাম কমতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক নিয়ে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে এবং বেইজিংও আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করার প্রবণতা কমেছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে স্বর্ণের ভবিষ্যৎ এখনো ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জেরে বিশ্ববাজারে যেভাবে সোনার দাম বাড়ছে, তাতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৭০০ ডলারে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান মার্কস।

এর আগে তাদের পূর্বাভাস ছিল আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ ডলার। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ মেয়াদে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬৫০ ডলার থেকে ৩ হাজার ৯৫০ ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা ও সোনাভিত্তিক ইটিএফ তহবিলে বিনিয়োগ বাড়বে—এই অনুমানের ভিত্তিতে এই পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাক্স।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন র দ ম কম গতক ল দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ