সিরাজগঞ্জে নানা অভিযোগে বিএনপির ৮ নেতার পদ স্থগিত
Published: 3rd, May 2025 GMT
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের আট নেতার সব পদ স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। একই অভিযোগে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আরও তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে এ বিষয়ে পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা বিএনপি। বিষয়টি আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ।
প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লাপাড়া উপজেলায় যাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল সরকার, সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, সাবেক সদস্যসচিব মুকুল হোসেন, সদস্য আশরাফুল ইসলাম, পঞ্চকোকড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী এবং বড়হর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে এনায়েতপুর থানার জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু হাসান, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ জালাল এবং পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো.
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নেতা-কর্মীদের বিরত রাখতেই অভিযোগ প্রাথমিক যাচাইয়ের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দলের স্বার্থে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক ক সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের আসল কারণ
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ইরানের ভয়ংকর পাল্টা জবাব সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে যাচ্ছেন, ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রয়োজন ছিল। ইসরায়েলি জনসাধারণের কাছে বেশ কিছু যুক্তি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার কেন বিনা প্ররোচনায় একতরফা আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার প্রকৃত কারণ কেউই ব্যাখ্যা করেনি।
ইসরায়েলি সরকার দাবি করে, এই হামলাটি ছিল একটি ‘প্রতিরোধমূলক’ অভিযান। এর উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পক্ষ থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির তাৎক্ষণিক অনিবার্য হুমকি মোকাবিলা করা। এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের হামলা নিঃসন্দেহে দীর্ঘ সময় ধরে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একটি প্রতিরোধমূলক আক্রমণে আত্মরক্ষার একটি উপাদান থাকতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়। এ ধরনের কোনো জরুরি অবস্থার উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়াও ইসরায়েল ১২ জুন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনে ২০০০ সালের গোড়ার দিকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য ইরানের প্রতি নিন্দা জানানো এ ধরনের জরুরি অবস্থা বলে মনে করছে বলে মনে হচ্ছে। আইএইএ মনে হচ্ছে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। প্রতিবেদনে এমন কিছু ছিল না, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ইতোমধ্যে জানত না।
ইসরায়েলি সরকার ‘প্রতিরোধমূলক’ হামলার ধারণার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক সত্ত্বেও বলেছে, অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘শিরশ্ছেদ’ ঘটানো।
পণ্ডিত ও নীতিনির্ধারকরা সাধারণত একমত, ইসরায়েলের এই কর্মসূচি ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে যদি তারা নিজে থেকে এ ধরনের হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
এ অভিযানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ইসরায়েল কখনোই ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড ধ্বংস করার ইচ্ছা পোষণ করেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি থেকে শুরু করে গ্যাসক্ষেত্র এবং তেল ডিপো পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক ও সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে। তারা ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের ওপরেও একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি, যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেনি। কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় শামখানিকে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদের মতো তাঁর হত্যাকাণ্ডও ইসরায়েলি কৌশলের প্রতিফলন। ইসরায়েল প্রায়ই নির্দিষ্ট কিছু লোককে ‘নির্মূল’ করার চেষ্টা করে এই আশায়, এসব ব্যক্তির মৃত্যু তাদের নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলবে। শামখানির মৃত্যুকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা নষ্ট করার চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যাই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডগুলো ইরানের সরকারি কর্মকর্তাদের জীবনযাপনের সর্বস্তরে ইসরায়েলের শক্তি প্রদর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনার অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘শিরশ্ছেদ’ নয়।
তৃতীয় কারণ হলো, তেহরানে ‘শাসন পরিবর্তন’ শুরু করতে ইসরায়েল মন স্থির করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘ইরানের গর্বিত জনগণকে’ ‘একটি দুষ্ট ও দমনকারী শাসন থেকে মুক্তি’র জন্য দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে স্পষ্টভাবে এ কথাটি বলেছিলেন।
সব ইরানি ইসরায়েলি হামলার জন্য অপেক্ষা করছে– এই ধারণা ইরানের রাজনীতির চালিকাশক্তি সম্পর্কে গভীর অজ্ঞতা প্রদর্শন করে। যদিও অনেক ইরানি নিঃসন্দেহে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতা করে, তবুও রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন সব ইরানি সব দিক থেকে ‘দেশপ্রেমিক’। বাইরের উপাদানগুলো দ্বারা তাদের দেশের ওপর অন্যদের এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার যে কোনো চেষ্টা থেকে ইরানের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সমর্থন করার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর নেতানিয়াহুর স্বঘোষিত আপসহীন সমালোচক হিসেবে অসংখ্য ইসরায়েলি যেমন নজরে পড়েন এবং এখন সরকারকে সোচ্চারভাবে সমর্থন করছেন, যেখানে সবচেয়ে জোরালোভাবে রয়েছেন সংসদীয় ‘বিরোধী দলের’ সদস্যরা। একইভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অসংখ্য বিরোধী এখন ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সরকারের সমর্থনে দেশটির পতাকার পেছনে সমাবেশ করছেন।
নিঃসন্দেহে নেতানিয়াহু বছরের পর বছর ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন; অপেক্ষায় ছিলেন সঠিক সময়ের। এবারের সময়টি এসেছে শুক্রবার। ইসরায়েলের পেছনে বিশ্বকে একত্র করার জন্য এটি একটি মরিয়া চেষ্টা, ঠিক যেমন ইসরায়েল সৃষ্টির পর থেকে এটি যে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করেছে– তা অস্বীকার করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ওরি গোল্ডবার্গ: বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক পরামর্শদাতা; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম