ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা চুরান্দা গ্রামের শিক্ষকেরা ভোরবেলা স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রার্থনা পরিচালনা করেন। প্রার্থনায় বলা হয়, বাতাসে দোল খাওয়া আখরোটগাছ আর পাখির ডাকের শব্দ যেন কামানের গর্জনে ঢেকে না যায়।

ছাত্রছাত্রীরা যদিও প্রতিদিনের মতোই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে, শিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, ‘অভিভাবকদের মধ্যে ভয় অনেক বেশি। কারণ, সম্প্রতি পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) দুই পাশের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি (ভারত–পাকিস্তান) সংঘর্ষের দিকে গড়াতে পারে।’

কাশ্মীর সীমান্তের চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তান ও ভারতের তল্লাশিচৌকি থেকে দুই দেশের সেনাদের দেখা যায়। সেখানকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, গত কয়েক দশকে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এ গ্রামের অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুবার যুদ্ধ করেছে এবং গত কয়েক দশকে সীমান্তে অনেকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ফলে যখন প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তখন কীভাবে আতঙ্ক নিয়ে সবকিছু দেখতে ও অপেক্ষা করতে হয়, তা এখানকার (নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পারের) বাসিন্দারা জানেন।

গত সপ্তাহে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ পর্যটক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। ইসলামাবাদ বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে।

গ্রামে দেড় হাজার মানুষের জন্য ছয়টি বাংকার আছে। দুই পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে। সীমান্তে যদি উত্তেজনা বাড়ে, আমরা কোথায় যাব? ভয় তো আছেই। কারণ, এই গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।—আবদুল আজিজ, কাশ্মীরের চুরান্দা গ্রামের বাসিন্দা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সীমান্তের চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তান ও ভারতের তল্লাশিচৌকিগুলোতে মোতায়েন দুই দেশের সেনাদের দেখা যায়। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, গত কয়েক দশকে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এ গ্রামের অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন।

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি জরুরি তহবিল প্রস্তুত রেখেছে এবং নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি গ্রামগুলোতে দুই মাস চলার মতো খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

২৫ বছর বয়সী আবদুল আজিজ বলেন, ‘গ্রামে দেড় হাজার মানুষের জন্য ছয়টি বাংকার আছে। দুই পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে। সীমান্তে যদি উত্তেজনা বাড়ে, আমরা কোথায় যাব? ভয়–আতঙ্ক তো আছেই। কারণ, এই গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’

আরও পড়ুনকাশ্মীর হামলা: ভারত কীভাবে পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে পারে, ইতিহাস কী বলে০১ মে ২০২৫

দুই মাসের খাবার, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী মজুত

অন্যদিকে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চকোথি গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ির কাছে পাহাড়ি এলাকায় সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছেন।

আমরা কিছুতেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিটি সন্তান প্রস্তুত। —মোহাম্মদ নাজির, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা

‘লোকজন তাঁদের বাড়িতে বাংকার তৈরি করেছেন। গুলি চললে তাঁরা বাংকারে ঢুকে পড়েন’, বলেন ২২ বছর বয়সী ফাইজান আনায়েত। রাওয়ালপিন্ডি শহর থেকে কাশ্মীরে পরিবারের সদস্যদের দেখতে এসেছেন তিনি। ফাইজান রাওয়ালপিন্ডিতে এসি মেরামতের কাজ করেন।

৭৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজির ফাইজানের প্রতিবেশী। বাংকার প্রস্তুত করার কাজ থেকে বিরতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারের শিশুরা তখন বাংকারের সামনে ক্রিকেট খেলছিল।

নাজির বলেন, ‘আমরা কিছুতেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিটি সন্তান প্রস্তুত।’

আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের প্রতিক্রিয়া যেন আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ না নেয়: জে ডি ভ্যান্স০২ মে ২০২৫সড়কে জুমার নামাজ আদায় করছেন কাশ্মীরি মুসলিমরা। পাশে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র এক সদস্যের সতর্ক পাহারা। শ্রীনগর, ২ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যিক ফলবাগানে প্রযুক্তির ছোঁয়া

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ফলবাগানের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। দেশি-বিদেশি উচ্চমূল্যের ফল ফসলের আবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা কৃষিতে আসার ফলে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। 

বর্তমানে সীমিত পরিসরে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এর ব্যাপক প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। অধিকতর লাভজনক বাণিজ্যিক বাগান গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এই প্রেক্ষাপটে স্মার্ট গার্ডেন, ড্রিপ ইরিগেশন, মালচিং ফিল্ম, ড্রোন, সেন্সর প্রযুক্তি এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার সমন্বয়ে রূপ নিচ্ছে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা।

স্মার্ট গার্ডেন হলো এমন এক আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাগান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, যেখানে স্বয়ংক্রিয় ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উন্নতমানের ফসল উৎপাদন করা হয়। এখানে তাপমাত্রা, আলো, আর্দ্রতা এবং মাটির গুণাগুণ সেন্সরের মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে উৎপাদন ব্যয় কমায় এবং ফলনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। 

ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি মাটিতে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে পানির অপচয় কমে এবং গাছের সুষম বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। পানিসাশ্রয়ী আরেকটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি হলো মালচিং ফিল্মের ব্যবহার, যা মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমায়।

উন্নত দেশে কৃষিকাজে ড্রোন ও সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের ফসল উৎপাদন ও বাগান ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ এবং দক্ষ করে তুলেছে। এর মাধ্যমে ফলবাগানের রোগ ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ভুলভাবে চিহ্নিতকরণ এবং শুধু প্রয়োজনীয় স্থানে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা যায়। 

টিস্যুকালচার প্রযুক্তির ব্যবহারে ফলবাগানে উন্নত গুণমানসম্পন্ন, রোগমুক্ত এবং মাতৃগুণাগুণ সম্পন্ন চারা উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘টিস্যুকালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে এই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তৃত করছে। 

টিস্যুকালচার প্রযুক্তির সাহায্যে অল্প জায়গায় বড়সংখ্যক উন্নতমানের একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চারা একসঙ্গে উৎপাদন করা সম্ভব। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং কৃষকের আয়ও বেড়ে যায়। কলা, আনারস, স্ট্রবেরি, আঙ্গুরের মতো উচ্চমূল্যের ফসল চাষে ইতোমধ্যে টিস্যুকালচারের সফল প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।
ফল ও সবজি সংরক্ষণেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এ ক্ষেত্রে ফারমারস মিনি কোল্ডস্টোরেজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।  
বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকার, কৃষিবিদ, উদ্যোক্তা এবং কৃষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। 
লেখক: প্রকল্প পরিচালক, টিস্যুকালচার অ্যান্ড হর্টিকালচার উন্নয়ন প্রকল্প, ডিএই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ