ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা: আতঙ্কে দিন কাটছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের বাসিন্দাদের
Published: 3rd, May 2025 GMT
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা চুরান্দা গ্রামের শিক্ষকেরা ভোরবেলা স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রার্থনা পরিচালনা করেন। প্রার্থনায় বলা হয়, বাতাসে দোল খাওয়া আখরোটগাছ আর পাখির ডাকের শব্দ যেন কামানের গর্জনে ঢেকে না যায়।
ছাত্রছাত্রীরা যদিও প্রতিদিনের মতোই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে, শিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, ‘অভিভাবকদের মধ্যে ভয় অনেক বেশি। কারণ, সম্প্রতি পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) দুই পাশের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি (ভারত–পাকিস্তান) সংঘর্ষের দিকে গড়াতে পারে।’
কাশ্মীর সীমান্তের চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তান ও ভারতের তল্লাশিচৌকি থেকে দুই দেশের সেনাদের দেখা যায়। সেখানকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, গত কয়েক দশকে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এ গ্রামের অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন।কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুবার যুদ্ধ করেছে এবং গত কয়েক দশকে সীমান্তে অনেকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ফলে যখন প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তখন কীভাবে আতঙ্ক নিয়ে সবকিছু দেখতে ও অপেক্ষা করতে হয়, তা এখানকার (নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পারের) বাসিন্দারা জানেন।
গত সপ্তাহে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ পর্যটক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। ইসলামাবাদ বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে।
গ্রামে দেড় হাজার মানুষের জন্য ছয়টি বাংকার আছে। দুই পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে। সীমান্তে যদি উত্তেজনা বাড়ে, আমরা কোথায় যাব? ভয় তো আছেই। কারণ, এই গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।—আবদুল আজিজ, কাশ্মীরের চুরান্দা গ্রামের বাসিন্দাভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সীমান্তের চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তান ও ভারতের তল্লাশিচৌকিগুলোতে মোতায়েন দুই দেশের সেনাদের দেখা যায়। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, গত কয়েক দশকে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এ গ্রামের অন্তত ১৮ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন।
পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপি জরুরি তহবিল প্রস্তুত রেখেছে এবং নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি গ্রামগুলোতে দুই মাস চলার মতো খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।২৫ বছর বয়সী আবদুল আজিজ বলেন, ‘গ্রামে দেড় হাজার মানুষের জন্য ছয়টি বাংকার আছে। দুই পক্ষই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে। সীমান্তে যদি উত্তেজনা বাড়ে, আমরা কোথায় যাব? ভয়–আতঙ্ক তো আছেই। কারণ, এই গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
আরও পড়ুনকাশ্মীর হামলা: ভারত কীভাবে পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে পারে, ইতিহাস কী বলে০১ মে ২০২৫দুই মাসের খাবার, পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী মজুত
অন্যদিকে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চকোথি গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ির কাছে পাহাড়ি এলাকায় সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছেন।
আমরা কিছুতেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিটি সন্তান প্রস্তুত। —মোহাম্মদ নাজির, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা‘লোকজন তাঁদের বাড়িতে বাংকার তৈরি করেছেন। গুলি চললে তাঁরা বাংকারে ঢুকে পড়েন’, বলেন ২২ বছর বয়সী ফাইজান আনায়েত। রাওয়ালপিন্ডি শহর থেকে কাশ্মীরে পরিবারের সদস্যদের দেখতে এসেছেন তিনি। ফাইজান রাওয়ালপিন্ডিতে এসি মেরামতের কাজ করেন।
৭৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজির ফাইজানের প্রতিবেশী। বাংকার প্রস্তুত করার কাজ থেকে বিরতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারের শিশুরা তখন বাংকারের সামনে ক্রিকেট খেলছিল।
নাজির বলেন, ‘আমরা কিছুতেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিটি সন্তান প্রস্তুত।’
আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের প্রতিক্রিয়া যেন আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ না নেয়: জে ডি ভ্যান্স০২ মে ২০২৫সড়কে জুমার নামাজ আদায় করছেন কাশ্মীরি মুসলিমরা। পাশে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র এক সদস্যের সতর্ক পাহারা। শ্রীনগর, ২ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাওলানা রইসের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে হরতালের হুশিয়ারি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিন কাদেরীকে মব সৃষ্টি করে যারা হত্যা করেছে তদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে হরতালে পালনের হুশিয়ারি দিয়েছেন সুন্নিরা। একই সঙ্গে রোববার ‘মার্চ টু গাজীপুর’ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।
শনিবার চট্টগ্রামের লালদীঘি চত্বরে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের উদ্যোগে সমাবেশে অধ্যক্ষ মুফতি অছিয়র রহমান আলকাদেরী সভাপতিত্ব করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী, পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ মছিহুদ্দৌলা, অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, পীর অধ্যক্ষ আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, অ্যাডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আমিরী, আল্লামা শাহ নূর মোহাম্মদ আলকাদেরী, আল্লামা আনিসুজ্জামান আলকাদেরী, অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, এইচ এম মুজিবুল হক শাক্কুর, অধ্যাপক জালাল উদ্দীন আজহারী, ফজলুল করিম তালুকদার, মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন তৈয়্যবী, অধ্যাপক সৈয়দ হাফেজ আহমদ, অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম আখতারী প্রমুখ।
সভায় আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী বলেন, ‘বৈষম্য ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। এত বছরেও শহীদ আল্লামা নুরুল ফারুকী হত্যার বিচারের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এবার গাজীপুরে মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনকে মিথ্যা অপবাদে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মব সৃষ্টিকারীদের শাস্তির বিকল্প নেই। অথচ, পুলিশ-প্রশাসন মামলা পর্যন্ত নেয়নি। পুলিশ কার ইন্ধনে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করছে আমরা জানি না। খুনিদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করলে পরবর্তীতে যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসন দায়ী থাকবে। খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
সভায় বক্তারা বলেন, ‘আমরা রইস হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলন করছি। অন্যদিকে সরকার রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ মানবিক করিডোরের মাধ্যমে দেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। অবিলম্বে করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। একইভাবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলাম বিরোধী সুপারিশ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’