৫০টির বেশি ই-কমার্স উদ্যোগ গড়ে দিয়েছেন নাজমুল
Published: 3rd, May 2025 GMT
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক এবং উন্নয়নশিক্ষায় স্নাতকোত্তর করা নাজমুল হোসেনের শিক্ষাজীবন ছিল বিজ্ঞান ও সমাজভাবনার এক অসাধারণ সংমিশ্রণ। ২০১৪ সালে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। ২০১৫ সালে ঢাকায় এসে ডিজিটাল বিপণন পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন এমন এক পেশাজীবন, যা অনেক তরুণের অনুপ্রেরণার উৎস।
২০০৭ সালে একটি ধার করা মডেম দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন নাজমুল হোসেন । ২০১৩-১৫ সালে ছিলেন আপওয়ার্কের শুভেচ্ছাদূত। ২০১৪ সালে বেসিসের দেশসেরা ‘বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন তিনি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘ইল্যান্স ওডেস্ক অ্যানুয়াল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’–এ উঠে আসে তাঁর গল্প। ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন দ্য টার্টেলস টার্ন, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স বিজনেস নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
নিজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এমন একটি ইকোসিস্টেম, যা দেশের ই-কমার্স খাতের মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্য টার্টেলস টার্ন এখন শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, একটি আন্দোলন। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে ২০ হাজারের বেশি দক্ষ ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও কর্মী তৈরি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান শুধু প্রশিক্ষণ নয়, ফেসবুক অ্যাড অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং মেন্টরশিপসহ হাতে-কলমে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা দিয়ে উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’
আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম ই-কমার্স লেনদেন৩১ মার্চ ২০২৫বাংলাদেশের অন্যতম বড় ই-শপ ‘আলফাইশপ’-এর পেছনের কারিগরও নাজমুল হোসেন। দেশের ৫০টির বেশি ই-কমার্স ব্র্যান্ডের গল্পে তাঁর ছোঁয়া আছে। ইলেকট্রনিকস, ফ্যাশন, ফুটওয়্যার থেকে শুরু করে বিউটি কেয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত তাঁর সফলতার পরিধি।
নাজমুল হোসেন বাংলাদেশ ও নেপালের প্রান্তিক নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রেশিয়া বায়োকেয়ারস’ নামের একটি কমিউনিটি–নির্ভর স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড, যেটা নারীর ক্ষমতায়নের এক বাস্তব উদাহরণ।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই২২ এপ্রিল ২০২৫নাজমুল হোসেনের পরবর্তী লক্ষ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুই খাত—পোশাক ও জুতাশিল্পকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশীয় প্রযুক্তি, দক্ষতা ও ডিজিটাল বিপণনের সমন্বয়ে এই খাত দুটি হতে পারে দেশের ‘এক্সপোর্ট সুপারস্টার’। সেই যাত্রায় ‘দ্য টার্টেলস টার্ন’ হবে গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার।
বর্তমানে নাজমুলের নতুন ই-কমার্স ব্যবসা হলো ফ্রেশিয়া বায়োকেয়ারস। নাজমুল ই-কমার্স পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্য টার্টেলস টার্নের প্রায় অর্ধশত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন ৫০ তরুণ। নাজমুলের বাবা মনোয়ার হোসেন একজন পুরকৌশলী ও মা নাজনীন সুলতানা গৃহিণী। স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। তাঁদের দুই ছেলে–মেয়ে—মাহানা হোসেন (১৩ বছর) ও আজমান হোসেন (৬ বছর)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ য ট র ট লস ট র ন ই কম র স
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরে বিকাশের আয় বেড়ে ৯ গুণ, মুনাফা ১৭ গুণ
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের জন্য ২০২৪ সালটি ছিল রেকর্ডের বছর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুনাফা ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘর। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে বিকাশের রেকর্ড আয় ও মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে বিকাশের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের আয় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবারের মতো ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ এত মুনাফা ও আয় করেনি। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর বিকাশের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছর একলাফে তা ৩০০ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। বিকাশের এই মুনাফার ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংকও সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, বিকাশের সিংহভাগ মালিকানা ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে রয়েছে।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় বা ব্যবসা বেড়ে হয়েছে ৯ গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে ১৭ গুণ হয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
তিন বছর ধরে বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। এরপর ২০২২ সালে ১৮ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে বিকাশ। তবে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বা আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় ছেদ পড়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল। ২০১৮ সালে এসে তা কমে যায়। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিকাশ লোকসানে ছিল। গত বছর শেষে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে।
জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বা সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ সব সময় ব্যবসা টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ক্যাশলেস দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিকাশ এক দশক ধরে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষেবা অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এই কৌশলগত উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এনেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথকে সুগম করেছে।
২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেন ছাড়াও বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৮৯ কোটি টাকা সরকারকে কর দিয়েছে। আর ওই বছর ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।