বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে পাঠদান বর্জন করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা আজ শনিবার তিন দফা দাবিতে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। চলমান আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন কর্মচারীকে ঢাকায় বদলির প্রতিবাদে ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে শুরু করেন। এতে প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আন্দোলনরত ছয়জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো শিক্ষক ক্লাসে আসছেন না।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অচলাবস্থা বিরাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক অভিভাবক। পল্লব পাল নামে একজন বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা আন্দোলনে থাকায় বাসায় বাচ্চাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। ঘরে বসে মুঠোফোনের প্রতি আসক্তিও বাড়ছে। শাপলা মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমাদেরও সমর্থন আছে; কিন্তু এভাবে পাঠদান বর্জন করে শিক্ষকেরা আন্দোলনে থাকায় সন্তানদের পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ১১টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া মডেল স্কুল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া মডেল স্কুলের উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু পরে বগুড়া মডেল স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারের সচিবদের সংগঠন বিয়াম ফাউন্ডেশনকে। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ‘বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া’ নামকরণ করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীন ১১টি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে নয়টি পরে জাতীয়করণ করা হয়। অথচ অজ্ঞাত কারণে বগুড়া মডেল স্কুল ও ঢাকা মডেল স্কুল দুটি বিয়াম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শিক্ষকেরা বলছেন, ১১টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠায় বিয়াম ফাউন্ডেশনের কোনো অবদান ছিল না। অবদান ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের। অথচ বগুড়া মডেল স্কুল সরকারীকরণের বদলে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিয়াম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। শিক্ষক-জনবলের সংখ্যা ১৮০। শিক্ষকেরা জানান, দীর্ঘ দুই দশকে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভালো ফল অর্জনে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অন্যতম একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের পেছনে পুরো কৃতিত্ব শিক্ষক ও অভিভাবকদের। বিয়াম ফাউন্ডেশনের ন্যূনতম অবদান নেই।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০ বছরে বিয়াম ফাউন্ডেশন অবকাঠামো নির্মাণে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এক টাকাও খরচ করেনি। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও বেতনের টাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো হলেও বিয়াম ফাউন্ডেশন শুধু কর্তৃত্ব খাটিয়ে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও বেতনের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবছর বিয়াম ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও ১৮০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ন্যায্য পদোন্নতি, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।

সমাবেশে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবদুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন, হাসিব বিন আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় শিক্ষকেরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া আগামীকাল রোববার বগুড়ার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো.

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের এখতিয়ার সরকারের। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে সরকারের কাছে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরতে বাধা নেই; কিন্তু ক্লাস বর্জন ও পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নিজেদের দাবি আদায় কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

পদাধিকারবলে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পাঠদান বর্জন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষকেরা যে আন্দোলন করছেন, সেটি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কেউ কোনো দাবি আদায়ের চেষ্টা করলে তা বরদাশত করা হবে না। শিক্ষকদের কোনো দাবি থাকলে তাঁরা লিখিতভাবে আমাকে জানাতে পারতেন। সেটি না করে তাঁরা ক্লাস বর্জন করে চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র করণ র শ ক ষকদ র

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের কেজি ৮০–৮৫ টাকা, সবজিও চড়া

বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।

করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যেমন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। এদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।

ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা।চার মাস পর আবার মূল্যস্ফীতি বাড়ল

মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

গত জুন মাসে দেশের যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল, তা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণ হলো, জুলাইয়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। শাকসবজির দামও ছিল চড়া।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ