সরকারীকরণের দাবিতে বগুড়ার বিয়াম কলেজে পাঠদান বর্জন করে আন্দোলনে শিক্ষকেরা
Published: 3rd, May 2025 GMT
বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারীকরণের দাবিতে পাঠদান বর্জন করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা আজ শনিবার তিন দফা দাবিতে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। চলমান আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন কর্মচারীকে ঢাকায় বদলির প্রতিবাদে ২৮ এপ্রিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে শুরু করেন। এতে প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আন্দোলনরত ছয়জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো শিক্ষক ক্লাসে আসছেন না।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অচলাবস্থা বিরাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক অভিভাবক। পল্লব পাল নামে একজন বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা আন্দোলনে থাকায় বাসায় বাচ্চাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। ঘরে বসে মুঠোফোনের প্রতি আসক্তিও বাড়ছে। শাপলা মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমাদেরও সমর্থন আছে; কিন্তু এভাবে পাঠদান বর্জন করে শিক্ষকেরা আন্দোলনে থাকায় সন্তানদের পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ১১টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া মডেল স্কুল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া মডেল স্কুলের উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু পরে বগুড়া মডেল স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারের সচিবদের সংগঠন বিয়াম ফাউন্ডেশনকে। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ‘বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া’ নামকরণ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীন ১১টি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে নয়টি পরে জাতীয়করণ করা হয়। অথচ অজ্ঞাত কারণে বগুড়া মডেল স্কুল ও ঢাকা মডেল স্কুল দুটি বিয়াম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শিক্ষকেরা বলছেন, ১১টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠায় বিয়াম ফাউন্ডেশনের কোনো অবদান ছিল না। অবদান ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের। অথচ বগুড়া মডেল স্কুল সরকারীকরণের বদলে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিয়াম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। শিক্ষক-জনবলের সংখ্যা ১৮০। শিক্ষকেরা জানান, দীর্ঘ দুই দশকে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভালো ফল অর্জনে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অন্যতম একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের পেছনে পুরো কৃতিত্ব শিক্ষক ও অভিভাবকদের। বিয়াম ফাউন্ডেশনের ন্যূনতম অবদান নেই।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০ বছরে বিয়াম ফাউন্ডেশন অবকাঠামো নির্মাণে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এক টাকাও খরচ করেনি। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও বেতনের টাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো হলেও বিয়াম ফাউন্ডেশন শুধু কর্তৃত্ব খাটিয়ে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও বেতনের ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবছর বিয়াম ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও ১৮০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ন্যায্য পদোন্নতি, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
সমাবেশে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবদুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন, হাসিব বিন আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় শিক্ষকেরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া আগামীকাল রোববার বগুড়ার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো.
পদাধিকারবলে বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পাঠদান বর্জন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষকেরা যে আন্দোলন করছেন, সেটি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কেউ কোনো দাবি আদায়ের চেষ্টা করলে তা বরদাশত করা হবে না। শিক্ষকদের কোনো দাবি থাকলে তাঁরা লিখিতভাবে আমাকে জানাতে পারতেন। সেটি না করে তাঁরা ক্লাস বর্জন করে চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র করণ র শ ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
২১ লাখ দর্শক দেখলেন ‘গাগা-ঝড়’
গত বছর প্রায় একই সময়ে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর কোপাকাবানা সৈকতে কনসার্ট করেছিলেন ম্যাডোনা। তাঁর সেই কনসার্ট দেখতে ভিড় করেন ১৪ লাখ দর্শক। এবার ‘পপ কুইন’কেও ছাড়িয়ে গেলেন লেডি গাগা। গতকাল শনিবার রাতে কোপাকাবানা সৈকতে তাঁর কনসার্টের হাজির ছিলেন ২১ লাখ দর্শক। লাখো দর্শকের সামনে মঞ্চে পাওয়া যায় চেনা গাগাকে, নাচে-গানে মাতিয়ে রাখেন ৩৯ বছর বয়সী গায়িকা-অভিনেত্রী।
অনেক দিন ধরেই ব্রাজিল সফরে যান না গাগা, স্থানীয় লোকজনের কাছে এই কনসার্ট তাই বড্ড বেশি পাওনা ছিল। কনসার্ট দেখতে যে তাঁরা ভিড় করবেন, সেই ইঙ্গিত গত শুক্রবার রাতেই পাওয়া গিয়েছিল।
এদিন কনসার্টে গান আর তুমুল করতালির ফাঁকে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন গাগা। এএফপি