এবার আমদানি পণ্য খালাস শুরু চট্টগ্রাম বন্দরের আরএসজিটি টার্মিনালে
Published: 3rd, May 2025 GMT
বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া আরএসজিটি চিটাগং (সাবেক নাম পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল) টার্মিনালে এত দিন শুধু জাহাজে রপ্তানি কনটেইনার বোঝাই করা হতো। টার্মিনালে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের পর এখন জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনারও খালাস শুরু হয়েছে। অর্থাৎ টার্মিনালটিতে পুরোদমে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ শুরু করল টার্মিনালটি পরিচালনাকারী সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বা আরএসজিটি।
আরএসজিটি জানায়, গত বুধবার আমদানি পণ্যের ১ হাজার ৭০০ একক কনটেইনার নিয়ে পতেঙ্গা টার্মিনালে পৌঁছায় ‘এমভি মায়ের্সক চট্টগ্রাম।’ জাহাজটি থেকে এসব কনটেইনার খালাস করেন আরএসজিটির কর্মীরা। এরপরই জাহাজটিতে রপ্তানির প্রায় ২ হাজার ৪০০ একক কনটেইনার বোঝাই করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার একক কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়েছে এক জাহাজে। শনিবার জাহাজটি মালয়েশিয়ার বন্দরের উদ্দেশে আরএসজিটি চিটাগং টার্মিনাল ছেড়ে যায়।
গত বছরের জুনে এই টার্মিনাল সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরএসজিটির হাতে দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম টার্মিনাল, যেটি প্রথমবার সরকারি–বেসরকারি অংশীদারির আওতায় দীর্ঘ মেয়াদে পরিচালনার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
টার্মিনালটির পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর শুধু জাহাজে রপ্তানি কনটেইনার বোঝাই করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। কারণ, আমদানি কনটেইনার নামানোর পর স্ক্যানিং করে বন্দর ইয়ার্ডের বাইরে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্ক্যানার মেশিন না থাকায় এত দিন আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর সুযোগ ছিল না।
আরএসজিটি জানিয়েছে, সম্প্রতি কোম্পানিটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নতুন স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করেছে। স্ক্যানারটি ঘণ্টায় ১৫০ একক কনটেইনার স্ক্যানিং করতে সক্ষম। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পর এখন জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার খালাস শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরএসজিটি চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যারউইন হেইজ এক বিবৃতিতে জানান, ‘আমরা পরীক্ষামূলক থেকে পূর্ণাঙ্গ পরিচালন কার্যক্রমে যাচ্ছি। এটি আরএসজিটি চিটাগং টার্মিনালের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রাহক এবং অংশীদারদের জন্য বিশ্বমানের পরিষেবার মান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণে অবদান রাখতে পেরে গর্বিত।’
জাহাজ থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করলেও এখনো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বহর যুক্ত হয়নি এই টার্মিনালে। কারণ, আরএসজিটি এই টার্মিনালে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর যন্ত্রপাতি তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে সানি মেরিন হেভি ইন্ডাস্ট্রিকে। পতেঙ্গা টার্মিনালের উপযোগী করে তা বানানো হচ্ছে। তার আগেই এখন জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হচ্ছে।
আরএসজিটি জানিয়েছে, টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ৫৬ মিলিয়ন ডলারের কনটেইনার ওঠানো–নামানোর যন্ত্রপাতি তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে তারা। এসব যন্ত্রপাতি তৈরির পর দেশে পৌঁছাবে। এসব যন্ত্রপাতি যুক্ত হলে টার্মিনালের দক্ষতা আরও বাড়বে। তাতে আগামী ২০২৬ সালে টার্মিনালটির বার্ষিক ছয় লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সক্ষমতা তৈরি হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।