অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতায় নতুন এক ধারণা নিয়ে হাজির হয়েছে ইয়্যামেজিং। ইয়্যামেজিং মূলত একটি লয়ালটি ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক সাশ্রয়ী স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা একইসঙ্গে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুলে দিচ্ছে সুবিধা ও সম্ভাবনার নুতন দুয়ার। চট্টগ্রামের দুই তরুণ এস এম রিফাত ও নওশাদ আরেফিন এই প্ল্যাটফর্ম উদ্ভাবন করেছেন। তারা দু’জনই চট্টগ্রামের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নিজেদের মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ব্যতিক্রমী এই ধারণাটি গড়ে তুলেছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা এতটাই সন্তুষ্ট যে, তারা বলছেন ইয়্যামেজিং কেবল একটি অ্যাপ নয়, এটি একটি ‘অ্যামেইজিং’ অভিজ্ঞতা। এটি দেশের শপিং সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা তাদের।
ইয়্যামেজিং-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে লগইন করে দেখতে পাবেন প্রতিদিনের ডিল, চ্যাট করতে পারেন মার্চেন্টদের সঙ্গে, অর্ডার দিতে পারেন, এমনকি ইন-স্টোর কেনাকাটার পরও পেতে পারেন ক্যাশব্যাক। সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্যাশব্যাক সরাসরি চলে যাবে ব্যবহারকারীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। এটির আরেকটি বড় দিক হলো ইয়্যামেজিং নিজে কোনো পণ্য মজুত করে না, টাকাপয়সাও নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্রাহকদের থেকে টাকা পান এবং নিজেরাই ইনভেন্টরি ও ডেলিভারি কন্ট্রোল করেন। ফলে তারা তাদের মূলধন আটকে না রেখে ব্যবসার গতি ধরে রাখতে পারেন। এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে আছেন কানাডিয়ান-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এস এম রিফাত। গাজীপুরের বিশেষায়িত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে স্নাতক শেষে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। সে দেশে স্নাতকোত্তর শেষে চাকরিও শুরু করেছিলেন এই তরুণ। এরই মধ্যে একবার দেশে বেড়াতে এসে রিফাত উপলব্ধি করেন বাংলাদেশে লয়ালটি মার্কেটের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এর পর শৈশবের বন্ধু, আইবিএ ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা করা নওশাদ আরেফিনকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন কঠিন ও চ্যালেঞ্জের এই পথচলা।
দুই বন্ধুর যোগাযোগটা চট্টগ্রামের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেই। কলেজের বারান্দায় সহপাঠীরা যখন হইচই করতে ব্যস্ত থাকত, তখন দুই বন্ধুর ঝোঁক ছিল প্রযুক্তির প্রতি। রিফাতের বাবা ছিলেন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। থাকতেন নগরের নাসিরাবাদে। চট্টগ্রামের আলো-বাতাসে প্রায় ১৬ বছর কেটেছে রিফাতদের। আর নওশাদের বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বাসা নগরের জামালখানে। প্রতিদিন বিকাল হলেই দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করতেন একদিন প্রযুক্তির বদৌলতে তরুণদের জন্য কিছু করবেন। হয়েছেও তাই। এ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের। তবে কিছুতেই স্বপ্ন পূরণ করা থেকে পিছপা হতে রাজি নন তারা। এ কারণে দীর্ঘ প্রস্তুতির পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শুরু হয় দুই বন্ধুর স্বপ্নের উড়ান। ওইদিন থেকে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে ইয়্যামেজিং-অ্যাপটি। শুরুতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে অ্যাপটিতে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই অ্যাপটি এক হাজারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা পার করেছে কয়েক হাজারের ঘর।
ইয়্যামেজিং-এর এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনিয়ে এস এম রিফাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম আমার ভালো লাগার; ভালোবাসার শহর। এই শহরে আমার অনেক স্মৃতি। এখানে পড়ালেখা করে বিদেশে বেশ ভালো চাকরি করলেও মনটা পড়ে থাকত দেশেই। একবার দেশে ঘুরতে এসে দেশেই কিছু করার তাগাদা অনুভব করি। সেই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করি বন্ধু নওশাদ আরেফিনকেও। ইয়্যামেজিং মূলত একটি লয়ালটি ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক সাশ্রয়ী স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা একইসঙ্গে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এনে দিচ্ছে সুবিধা ও সম্ভাবনার নুতন দিগন্ত। এটি চালুর শুরুতেই আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আর এই সাফল্যই প্রমাণ করে, বাংলাদেশে লয়ালটি প্ল্যাটফর্মের বিশাল চাহিদা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যাত্রা কেবল শুরু হলো। এটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং প্রিমিয়াম মার্চেন্টদের যুক্ত করা আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে এটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় স্বপ্নও আছে আমাদের।’
মেধাবী এই দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থীর এমন অনন্য উদ্যোগে আনন্দিত ও গর্বিত ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্টরা। দুই তরুণের এমন সাফল্যের গল্প অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন তারা। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উদ য গ প ল য টফর ম দ র জন য দ ই বন ধ ব যবস নওশ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরে পৃথক এই কর্মসূচি পালিত হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান ওরফে খুশি ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫) নিহত হন।

আজ সকালে সুনামগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর মোড়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এখানে ‘কথায় কথায় অবরোধ, এখন তোমার কোথায় বোধ’, ‘আর কত খুশি মরলে, প্রশাসনের টনক নড়বে’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচি চলাকালে সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফিটনেসবিহীন যান চলাচলে বাধা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বেলা একটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাকবিল হোসেন, জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, আশরাফ হোসেন; টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী হুমায়ুন আহমদ, শান্ত রায়, সুমাইয়া আক্তার, আমিন উদ্দিন, পূর্বা তালুকদার, তাহমিদা জাহান, বুশরা আক্তার প্রমুখ।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে মেয়েকে তুলে দেন অটোরিকশায়, ১০ মিনিট পর পেলেন মৃত্যুর খবর১৮ ঘণ্টা আগে

বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে এখন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অথচ প্রশাসন, পুলিশ উদাসীন। এই সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে। অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালান। কিন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ তুচ্ছ কোনো কিছু অজুহাত পেলেই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোহান্তিতে ফেলেন। সড়কে এসব হত্যা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থী স্নেহা, আফসানার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে একই দাবিতে মানববন্ধন করে বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এরপর একই স্থানে মানববন্ধন করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখা। এসব কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, নিহত শিক্ষার্থী আফসানা জাহানের মামা সাইফুল ইসলাম (ছদরুল), সাংবাদিক লতিফুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান পীর, শিক্ষক শাহিনা চৌধুরী, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক, উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী, বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপদেষ্টা নুরুল হাসান আতাহের, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্ণ বাবু দাস প্রমুখ।

আরও পড়ুনজন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, ব্যাগে ছিল সহপাঠীদের দেওয়া উপহার৪ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন। আজ দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ