রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আংশিক শ্রুত হিসেবে রয়েছে উল্লেখ করে তা শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগে উত্থাপন করা হয়েছে।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আজ রোববার সকালে বিষয়টি উত্থাপন করেন আপিলকারী পক্ষের আইনজীবী।

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কার্যতালিকা ওয়াচ (নজর রাখবেন) করবেন। মঙ্গলবার বা বুধবার কার্যতালিকায় আসবে।’

আদালতে আপিলকারী পক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

পরে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ কার্যতালিকায় নজর রাখতে বলেছেন। মঙ্গলবার বা বুধবার আপিলটি কার্যতালিকায় আসবে। সেদিন শুনানি হতে পারে বলে আশা করছি।’

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েক দিন শুনানি হয়।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।

তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র যত ল ক য় আপ ল ব ভ গ আইনজ ব আগস ট ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার আশিক এখন কোথায়

‘তোমার আগে আর কেউ নেই, তোমার পরেও আর কেউ নেই/ যেখানেই যাই যেদিকে তাকাই, শুধু তুমি শুধু তুমি, আমি আশিক তুমি প্রিয়া’—নব্বই দশকের অন্যতম সুপারহিট সিনেমার গান। এটি আওকাত হোসাইন পরিচালিত ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার গান। এ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউড পেয়েছিল নতুন চিত্রনায়ক ফয়সালকে। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও ঢালিউড নায়ক হিসেবে এ সিনেমা দিয়েই অভিষেক হয় তাঁর। পরের বছর একই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি বড় পর্দায়। এখন কোথায় আছেন কেমন আছেন তিনি?

পর্দায় ফয়সাল নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর আসল নাম শামিম ইব্রাহিম। তবে শিশুশিল্পী হিসেবে মাস্টার শামিম নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি এখন পরিবার নিয়ে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। ২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান এ চিত্রনায়ক। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে সুখের সংসার তাঁর। চাকরি করছেন দেশটির একটি গ্যাস কোম্পানিতে। হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোর কথা হয় তাঁর সঙ্গে, ‘জানান তিন দশক পর এখনো মানুষজন তাঁর খোঁজ করেন। যা তাঁকে আপ্লুত করে।’
বাংলা চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক ফয়সালের সময়কাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪। এই ১৫ বছরে শিশুশিল্পী হিসেবেই পর্দায় বেশি দেখা গেছে তাঁকে। ১৯৭৯ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমায় কয়েক মিনিটের একটা চরিত্রে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘নান্টু ঘটক’, ‘তিনবাহাদুর’, ‘এতিম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘লালুগুলু’, ‘রেশমি চুড়ি’, ‘সাক্ষী’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘বড় মা’, ‘নসিব’ ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’, নান্টু ঘটক সিনেমায় ‘জন্ম, মৃত্যু আর বিয়া’ এবং ‘পাঙাশ মাছের পেটি’ গানে তাঁর অভিনয় শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার গল্প শোনা যাক ফয়সালের ভাষ্যে, ‘বাবা পাকিস্তান আমল থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যুক্ত ছিলেন। তাই মাত্র ৯ বছর বয়সেই শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পাই। এই মনে আছে, তখন তো কী করছি, অভিনয় কেন করছি এসব বুঝতাম না।’

আরও পড়ুনমমতাজ কোথায় আছেন, জানেন না কেউ০৪ মার্চ ২০২৫

কৈশোরে অভিনয় ছেড়ে সংগীতে মনোযোগী হন ফয়সাল। যদিও সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন শৈশবেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু একাডেমির হয়ে তবলা বাজাতে লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ পান । এরপর ড্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন অবসকিউর ব্যান্ডে। ব্যান্ডটিতে থাকা অবস্থায় মাইলসের হয়েও কয়েকটি শোতে বাজান তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে বাজান তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাজান নগরবাউলের সঙ্গে। সর্বশেষ দেশ ছাড়ার আগপর্যন্ত ড্রামস বাজান পেন্টাগনে। সংগীত নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই ১৯৯০ সালে ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ জয়ী মৌসুমীর বিপরীতে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন। এরপর ১৯৯৩ সালে নির্মাতা আওকাত হোসাইন তাঁকে প্রথমবার নায়ক হিসেবে ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমায় প্রস্তাব দেন, এ নির্মাতার ‘সাক্ষী’ সিনেমার শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপরের বছর এই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমা দিয়ে তাঁর ঢালিউড অধ্যায় শেষ হয়। এরপর ২০০৭ সালে একটি মুঠোফোন কোম্পানির পেসার হান্টের বিজ্ঞাপনে সর্বশেষ অভিনয়ে দেখা যায় ফয়সালকে।

আরও পড়ুন৬৫০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, কোথায় আছেন সেই অভিনেতা২৫ মার্চ ২০২৩

অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির পাশাপাশি সংগীতের সঙ্গে যুক্ত আছেন ফয়সাল। স্থানীয় একটি রক ব্যান্ডে ড্রামস বাজান তিনি। চলচ্চিত্রের তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইউটিউবের মাধ্যমে খোঁজ রাখেন তিনি। ‘তিন দশক হয়ে গেছে, কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। নাঈমের (চিত্রনায়ক) সঙ্গে আর কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ আছে। ২০২৩ সালে দেশে এসে এফডিসিতে গিয়ে সবাইকে খুব মিস করেছি। তবে তখন আমি কাউকে চিনি না, আমাকেও কেউ না (হাসি)।’ বললেন এক কালের এই ব্যস্ত অভিনেতা, সংগীতশিল্পী।  
বাংলাদেশি ব্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে পারফর্ম করলে পুরোনো সতীর্থদের সাক্ষাৎ মিস করেন না তিনি। সময় মিলে গেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা  করেন, বাজান। তাঁর ভাষ্যে, ‘দুই দিন আগে মাইলস ডালাসে পারফর্ম করে গেছে। খুব ইচ্ছে ছিল যাওয়ার, কিন্তু পরিবারের একটি দুঃসংবাদে আমার যাওয়া হয়নি। তবে দুই পুত্রকে পাঠিয়েছিলাম।’

শামিম ইব্রাহিম ওরফে ফয়সাল এখনো স্বপ্ন দেখেন অভিনয়ে ফেরার। তবে বাস্তবতাও বোঝেন। মনে করেন, এখন আর ফেরার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ, এই সময়ের নির্মাতাদের কেউ চেনেন না তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমি টাকার জন্য কখনো অভিনয় করিনি। এখনো ইচ্ছে হয়, যদি একটা ভালো চরিত্র পেয়ে অভিনয়ের সুযোগ পেতাম। কিন্তু এই সময়ের কেউ তো আমাকে চেনেন না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরাজের বাদ পড়া ও শান্তকে রাখা নিয়ে যা বললেন লিপু
  • স্ত্রীর নাক সুন্দর, তাই ঘুমন্ত অবস্থায় নাক কামড়ে নিলো স্বামী
  • ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন
  • ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই
  • শর্তসাপেক্ষে স্বাধীনতা চান না বাঁধন
  • তাসকিনের চোটে সুযোগ শরিফুলের, থাকছেন শান্তও
  • ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার আশিক এখন কোথায়
  • আ.লীগ নিষিদ্ধ, নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ১২ দফা
  • সোহরাওয়ার্দীতে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু