বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর দল নিওস্ক্রিনিক্স। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। টিম নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন আশিক মুস্তাফা
নিওস্ক্রিনিক্স। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর একটি দল। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে জন হপকিন্স হেলথকেয়ার ডিজাইন কম্পিটিশনে ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দ্য জনস হপকিনস সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে অংশ নেয় ৪৪ দেশের প্রায় ৪৪০টি প্রস্তাবনা। প্রতিযোগিতার ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওস্ক্রিনিক্স দল।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য জন হপকিন্স সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য, বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যেকোনো সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান পাওয়া। যেকোনো দেশের, যেকোনো শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দলগুলো এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। প্রতিযোগিতাটি তিনটি বিভাগে হয়ে থাকে, যেগুলো হচ্ছে– ‘সলিউশনস ফর অ্যাডভান্সড হেলথ সিস্টেমস’, ‘গ্লোবাল হেলথ/হিউম্যানিট্যারিয়ান ডিজাইন’, ‘ডিজিটাল হেলথ’। এর মধ্যে ডিজিটাল হেলথ বিভাগে এই বছরের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েটের দল নিওস্ক্রিনিক্স।
টিম নিওস্ক্রিনিক্স ও তাদের উদ্ভাবন
নিওস্ক্রিনিক্স এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে, যার সাহায্যে কোনো নারী নিজেই তাঁর স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন। যেখানে একজন নারী স্তনের স্ক্রিনিং করতে পারবেন এআই-এর সাহায্যে। এছাড়াও লক্ষণ দেখে একদম প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হবে। টিম নিওস্ক্রিনিক্স সম্পর্কে জানতে চাইলে মো.
প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা
শুরুটা করেছিলেন ফাহমিদা সুলতানা। নিজের পরিবারের স্তন ক্যান্সরের রোগী থাকায় বছর দুয়েক আগে তিনি এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন হাসনাইন আদিল ও সাদাতুল ইসলাম। শুরুতে হাসনাইন অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস বা ফ্রন্টএন্ড এবং সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন। এরপর দলে যুক্ত হন এইচ এম শাদমান ও পৃথু আনান। শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছেন। পৃথু স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় পুরো কর্মযজ্ঞ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা। শুধু এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র
করে যে তারা কাজ করেছেন, তা নয়। এর আগে দেশীয়
প্রতিযোগিতায়ও এ প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন তারা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেন তারা। এরপর ১০ মার্চ
প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয়
ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন জানানো হয় বিজয়ীর নাম।
পুরস্কার হিসেবে যা পাচ্ছেন
পুরস্কার হিসেবে টিম নিওস্ক্রিনিক্স পেয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ছয় লাখ টাকা। নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণায় এই অর্থ কাজে লাগাতে চান তারা। অর্জনের পেছনে দলের বাইরের কয়েকজনের অবদানও স্বীকার করেন তারা। তাদের পুরো কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিবাতুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এই তিনজনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আগামীর স্বপ্ন
নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে মো. হাসনাইন আদিল বলেন, ‘আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীর স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করতে চাই আমরা। এরজন্য নিজেদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চাই সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে।’
আমরাও বিশ্বাস করি, তরুণদের এই প্রযুক্তি নারীর জন্য হয়ে উঠবে আশীর্বাদস্বরূপ!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ল ইসল ম ক জ কর ছ কর ছ ন ড জ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
নুসরাত ফারিয়া এক মাস পর কাজে ফিরলেন
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা নুসরাত ফারিয়া অবশেষে কাজে ফিরলেন। দীর্ঘ এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে আবারও নিজের কাজে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
গত ১৮ মে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলায় আটক হন তিনি। ওই সময় বিষয়টি ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে ২০ মে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান জামিন মঞ্জুর করলে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান ফারিয়া।
কারামুক্তির এক মাস পর নিজের ভক্ত-অনুসারীদের জন্য ফিরে এলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন, ‘১ মাস পর...’। সঙ্গে শেয়ার করেছেন কয়েকটি ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে। একটি রেকর্ডিং স্টুডিওতে মাইক্রোফোনের সামনে বসে আছেন তিনি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কাজে ফিরেছেন তিনি। ফিরেছেন ডাবিং স্টুডিওতে।
ভক্ত-অনুরাগীরাও তাকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। একজন লিখেছেন, ‘তোমার অতীতের ঘটনাগুলো ভুলে যাও, কিন্তু সেই ঘটনাগুলো থেকে পাওয়া শিক্ষা কখনো ভুলে যেও না।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘খুবই চমৎকার লাগছে আপনাকে দেখে, আপনার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা রইল।’
নুসরাত ফারিয়া, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল একজন আরজে হিসেবে। এরপর পরিচিতি পান একজন দক্ষ উপস্থাপক হিসেবে। ২০১৫ সালে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আশিকী’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি।
কঠিন সময় পেরিয়ে আবারও নতুন উদ্যমে ফিরলেন ফারিয়া। তার এ ফিরে আসা যেন শুধুই কর্মজীবনে নয়, এক আত্মবিশ্বাসী অধ্যায়েরও সূচনা।