সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা যাবে না, আমি এটা চাই না: তথ্য উপদেষ্টা
Published: 4th, May 2025 GMT
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন করা যাবে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করা যাবে, গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রশ্ন করা যাবে; কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা যাবে না-আমি চাই না, এই জিনিসটা থাকুক।”
রবিবার (৪ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “সংবাদমাধ্যমের যারা নীতি নির্ধারক আছেন, যেখান থেকে তাদের নিউজ বা মতামত তৈরি হয়, সেটাকে অবশ্যই প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত।”
আরো পড়ুন:
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
আত্মহত্যা নয় খুন হয়েছেন সাগর-রুনি, হত্যায় অংশ নেন ২ জন
বগুড়ায় ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন সহসা করা সম্ভব মন্তব্য করে মাহফুজ আলম বলেন, “গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে ‘ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়া’ যে নীতির কথা বলা হয়েছে, তা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইনের কিছু কিছু ধারা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বসা দরকার। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে পাঠানো দরকার কোনো লুপ হোল আছে কি না জানার জন্য। এটুকুর জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। এরপর আমরা এটি ক্যাবিনেটে তুলব। আইন আকারে যেন আসে, চেষ্টা করব।”
বিটিভি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ বেতার প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “বিটিভি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ বেতারকে একত্র করে একটি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান করার পক্ষে আমি। তবে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে আরো আলোচনা হতে পারে।”
বিজ্ঞাপনের হার পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে একমত জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “ডিএফপিতে এটা বাড়ানোর আলোচনা করেছি। তবে যাদের প্রচার সংখ্যা দুই হাজারও না, কিন্তু এক লাখ, দুই লাখ দেখিয়ে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করেছে, তাদের তথ্য উন্মোচন করা হবে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সেমিনারে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজয়ানুল হক রাজা ও এএফপির ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম বক্তব্য রাখেন।
ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুইডেন দূতাবাস বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কিমিতে ১৮ কোটি খরচেও মেলেনি সুফল
রংপুর নগরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে শ্যামাসুন্দরী খাল। প্রায় ৩০০ বছর আগে খনন করা খালটি দিয়ে আগে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হতো। কিন্তু চলতি শতাব্দীর প্রথম দিকে দখল-দূষণে রূপ হারাতে শুরু করে। নগরের বাসিন্দাদের ফেলা আবর্জনা আর বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে খালটি। এর সংস্কারে দুই দশকে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা খরচও হয়েছে। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নতুন করে নেওয়া হয়েছে আরও ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দখল আর দূষণের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে শ্যামাসুন্দরী। স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা; নাগরিকের সচেতনতার অভাবে আশীর্বাদের খালটি অভিশাপে পরিণত হয়েছে। মরণাপন্ন খালটি বাঁচাতে সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও তার সুফল মেলেনি। নতুন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্প নিলেও কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক, ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম রানা, কলেজছাত্র হাসিনুর রহমানসহ কয়েকজনের ভাষ্য, নির্বাচনের সময় শ্যামাসুন্দরীর অবস্থা পরিবর্তনের কথা সবাই বলেন। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠে না। নদী গবেষকরা বলছেন, খালটি বাঁচাতে আগে পুনরুদ্ধার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে খালটির অস্তিত্ব বিলীন হলে জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তিতে পড়বেন নগরের বাসিন্দারা।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে দুটি প্রকল্পসহ শ্রীবৃদ্ধি ও দূষণমুক্ত করতে অন্তত ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার করা হয়। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার বছরই সংস্কার ও সৌন্দর্য বাড়াতে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সব মিলিয়ে দুই দশকে ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি সংস্কারে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সে হিসাবে কিলোমিটারে ১৮ কোটি টাকার বেশি খরচেও সুফল পাননি নগরবাসী।
সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালটি জেলা প্রশাসনের। তারা শুধু পরিষ্কার করেন। এ জন্য তেমন বরাদ্দ থাকে না। খালের সংস্কারে টেকসই প্রকল্প প্রয়োজন।
খালটি রক্ষা ও সংস্কারে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় নগরবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর প্রায় দেড় দশকে অবস্থার উন্নতি হয়নি। স্বচ্ছ পানির খালটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মশা-মাছি আর পোকা-মাকড়ের প্রজননক্ষেত্রই শুধু নয়; দখল-দূষণে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও নগরীর পানি খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খোকসা ঘাঘট নদীতে পড়ত। এখন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
২০২০ ও ’২১ সালে বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। খালটির অস্তিত্ব বিলীন হলে ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হবে। যদিও রংপুর পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে খাল পরিষ্কারের পাশাপাশি গাছ লাগাবেন তারা। এর পর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানে কাজ করবেন।
সরেজমিন জানা গেছে, একসময় খালটির প্রস্থ ছিল ৬০ থেকে ১২০ ফুট। কিন্তু অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় তা ১৫ ফুটে দাঁড়িয়েছে। দুই পারের বাসিন্দারা বাড়ির টয়লেটের লাইন যুক্ত করায় মলমূত্র সরাসরি খালে পড়ছে। অনেকেই বাড়ির আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলছেন। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে।
বর্ষাকালে শ্যামাসুন্দরীর নোংরা পানি বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় বলে জানান ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার বাসিন্দা নওশাদ বেগম। সঙ্গে মশার কামড় তো আছেই। এসবের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মত তাঁর। হাজিপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালে খালের উন্নয়নে আমরা বাড়ি ভেঙে জায়গা ছেড়েছি। গাছপালা কেটেছি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। আগের চেয়ে এখন অবস্থা বেশি নাজুক।’
সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে রংপুর অঞ্চলের মহারাজা জানকী বল্লভ সেনের মা শ্যামাসুন্দরী সেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর স্মৃতি অম্লান করে রাখাসহ ম্যালেরিয়া দূর করার জন্য নগরীর সিও বাজার থেকে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল খনন করেন জানকী বল্লভ সেন।
শ্যামাসুন্দরী নগরীর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম বলে জানান রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, প্রশাসন ১১৭ জনকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করলেও আর অগ্রগতি হয়নি। শ্যামাসুন্দরীর পানি প্রবাহ বাড়ানো না গেলে পুরো নগরবাসী বিপদে পড়বেন।
এটি রক্ষা করা জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন এ গবেষক। তাঁর ভাষ্য, এ কাজের জন্য সমন্বিত প্রকল্প নিতে হবে। ঘাঘটের উৎসমুখ খুলে দেওয়াসহ অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ বন্ধ করা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, শ্যামাসুন্দরীপারের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে
বেশ অগ্রগতি হয়েছে।