কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার বিরাজ করছে। এরপর থেকে একের পর এক সামরিক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ রোববার ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন মোদি। খবর এনডিটিভির

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই পর্যটক। এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে নয়াদিল্লি। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছে পাকিস্তান। ওই হামলার পর থেকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। হামলার ঘটনার পর এটি ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির তৃতীয় সামরিক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রতিরক্ষা স্টাফের প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা।

এর আগে গতকাল নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠির সঙ্গে এবং তারও আগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন মোদি। এসব বৈঠককে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সরকারিভাবে মোদি-এপি সিংহ বৈঠক নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া না হলেও, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পেহেলগাম হামলার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর করণীয় ঠিক করতেই এই আলোচনা।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে—তারা নিজ বিবেচনায় সময়, লক্ষ্য ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে।

প্রসঙ্গত, দুই দেশের সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো ভারতের নতুন কোনো কৌশল নয়। ২০১৬ সালে উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলার পর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ও ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার জবাবে বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত।

বালাকোট অভিযানে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে একটি সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে আঘাত হানে ভারতীয় বিমানবাহিনী। যদিও সে সময় এক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় এবং পাইলট অভিনন্দন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক হন। পরে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তাকে ফেরত পাঠায় ইসলামাবাদ।

তবে এখনো পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক কোনো সামরিক পদক্ষেপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে এবং উভয় দেশের মধ্যে পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম নব হ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে ঢুকেছি: শেষ জাহাজ আটকের আগে ভিডিও বার্তায় শহিদুল

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আজ শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন।

তবে শহিদুল আলমের এই ভিডিওবার্তা ফেসবুকে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আজ সুমুদ ফ্লোটিলা’র সর্বশেষ জাহাজও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাহাজ আটক হওয়ার আগে গাজামুখী নৌযান থেকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আজ ৩ অক্টোবর ২০২৫। দেখতেই পাচ্ছেন, ঝকঝকা রোদ। আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তাঁরা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন। আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে, ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে।’

অনেক বড় জাহাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহুর্তে এই নয়টি যানবাহন মুক্ত আছে। আমরা আজকে ফিলিস্তিনি টাইম জোনে এসেছি। এখনো দূরত্ব আছে। তবে আজ আমরা এই আটটি ছোট নৌকাকে পার হয়ে যাব। এরপর থেকে আমাদের এই জাহাজটিই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে। কিন্তু আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারেই গাজা পর্যন্ত যাব এবং কোনো বাধাই গ্রহণ করব না।’

ত্রাণ নয়, অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা বলা প্রয়োজন, সুমুদ ফ্লোটিলায় যে নৌকাগুলো ছিল, তাদের কিন্তু দায়িত্ব ছিল ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার। আমরা কিন্তু ত্রাণের জন্য যাচ্ছি না। আমরা একটা অবৈধ অবরোধকে ভাঙব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি।’

শহিদুল আলম বলেন, ‘এই নৌকাতে অনেক সাংবাদিক আছেন, চিকিৎসক আছেন। সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দেওয়ার অজুহাতে যাচ্ছি তা না। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি, ফিলিস্তিনে আমাদের থাকার–যাওয়ার অধিকার আছে। ইসরায়েল যত মানুষ খুন করেছে এবং যত সাংবাদিক ও যত চিকিৎসক খুন করেছে, সেটার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’

শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘গত রাতেই মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএএফ) ১৪ জন চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে। আমরা দেখব, ফ্রান্স সেটার ক্ষেত্রে কী করে। এ পর্যন্ত তারা তেমন কিছুই করেনি, মিষ্টি কথা বলা ছাড়া। এখন কথার সময় পেরিয়ে গেছে। এখন লড়াইয়ের সময়, এখন কাজ করার সময়। আমরা সেটাই করছি নাগরিক হিসেবে।’

বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা করতে পারি, যেহেতু এই দেশগুলোর নেতা–নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সে ক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটাই আমরা করতে চাইব। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’

শহিদুল আলম বলেন, ‘যেমনটা দেখা যাচ্ছে, আজ সকালে সমুদ্র বেশ শান্ত। এটা অপ্রত্যাশিত, কারণ মুহূর্তের মধ্যেই এটা বদলে যেতে পারে। গতকাল খুব খারাপ অবস্থা ছিল। আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন পুরো চাঙা, লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’

‘আমরা জয়ী হব, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ জানিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, তাঁদের জাহাজে ৯৬ জন মানুষ আছেন। এরঁ মধ্যে ৮২ জন গণমাধ্যম  ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এ ছাড়া আয়োজক, ফ্লোটিলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ও জাহাজের ক্রুরা আছেন।

আরও পড়ুনফ্লোটিলা আটক আন্তর্জাতিক ‘জলদস্যুতা’, বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: দেখুন ছবিতে২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ