ট্রাম্পের চাপ সামলাতে অর্থনীতি ঢেলে সাজানোর ঘোষণা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর
Published: 4th, May 2025 GMT
কানাডার অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর গত শুক্রবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
মার্ক কার্নি বলেন, ‘বড় কিছু করার জন্য আমি রাজনীতি করছি, বড় কিছু হওয়ার জন্য নয়। কানাডাবাসী আমাকে দ্রুত বড় পরিবর্তন আনার অধিকার দিয়েছেন, আমি নিরলসভাবে সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করব।’
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) কানাডার পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিবারেল পার্টির মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও একই পার্টির। এই নিয়ে টানা চারবার দলটি কানাডা শাসন করছে।
নির্বাচনে লিবারেল পার্টি ১৬৯টি আসন পায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ছিল ১৭২টি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও কার্নি সরকার পার্লামেন্টে যেকোনো আইন সহজে পাস করতে পারবে। দুটি হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনী এলাকায় ভোট পুনর্গণনা করা হয়। এর মধ্যে কুইবেকে হারলেও অন্টারিওতে আরেকটি নতুন আসন পায় লিবারেল পার্টি।
নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কার্নি। এটা তাঁকে জয় পেতে সহায়তা করেছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের ‘অচলাবস্থাকে তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার’ বলে উল্লেখ করেন কার্নি। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য ও নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী মঙ্গলবার আমি ওয়াশিংটনে যাচ্ছি। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয় ফয়সালা করার চেষ্টা করব।’
কার্নি বলেন, ‘কানাডার নাগরিকেরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য। আমি মনোযোগ ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজ করব। আমাদের মনোযোগ থাকবে তাৎক্ষণিক বাণিজ্য চাপ মোকাবিলার ওপর। একই সঙ্গে দুটি সার্বভৌম দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কের দিকেও আমরা মনোযোগ দেব।’
তবে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেই বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের দাবি
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে যাঁদের বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে তাঁদের মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জুলাই শহীদদের গণকবরের পাশে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি জানান। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের গণকবরে থাকা শহীদদের পরিচয় শনাক্তের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রতিটি মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করে তাঁদের পরিবারের কাছে মর্যাদার সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমাদের সন্তানের রক্তের ওপর গঠিত সরকারই যদি এভাবে শহীদদের অবহেলা করে, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি নিয়ে আমরা আশঙ্কায় আছি।’
জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এক বছর ধরে ১১৪টি পরিবার এখনো তাদের স্বজনদের কবর শনাক্ত করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত তারা স্বজনদের শেষ চিহ্নটুকু খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের সহযোগিতা করছে না। উচ্চ আদালত থেকে কবর শনাক্ত করে পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে রায় দিলেও সরকার গড়িমসি করছে। আমরা অবিলম্বে এসব মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা আর কোনো টালবাহানা দেখতে চাই না।’
মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিখোঁজ হন গাড়িচালক মাহিন মিয়া। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে মাহিন মিয়ার মরদেহ খুঁজে পাননি স্ত্রী জেসমিন আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১৮ জুলাই আমার স্বামী মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নেন। কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। তাঁর লাশটাও দেখতে পাইনি। পরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অনেকগুলো লাশ নাকি রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে তাঁর কবর কোনটা, সেটি আজও জানতে পারিনি। আমার সন্তানকে তাঁর বাবার কবরটা পর্যন্ত দেখাতে পারিনি।’
যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে মারা যান পোশাক ব্যবসায়ী সোহেল রানা। কিন্তু আজও তাঁর মরদেহ খুঁজে পায়নি পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘এক বছর ধরে আমার ছেলের লাশের সন্ধান পাইনি। কবরটা কোথায় দেওয়া হয়েছে, সেটিও জানতে পারিনি। আমাদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?’