হাওরাঞ্চলে কৃষকের ফসল রক্ষায় সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ ব্যয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পরিশেষে সব ব্যয় কার্যত অপব্যয়ে পর্যবসিত হওয়ার চিত্র বহু বছর ধরে জাতি পৌনঃপুনিকভাবে প্রত্যক্ষ করে আসছে। সুনামগঞ্জের ১৪টি হাওরে ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিদ্যমান গতিপ্রকৃতি সেই ধারায় ধাবিত হচ্ছে।

এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে অনেক বাকি, অথচ কাজের মেয়াদ শেষ হতে মাত্র দুই মাস বাকি। এই অবস্থায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারদের ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে কাজ শেষ করার তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। এতে হাওরাঞ্চলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের নামে সরকারি কোষাগারের শত শত কোটি টাকা যে শুধু অপচয় হচ্ছে তা নয়, বরং প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি স্তরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে কীভাবে দুর্নীতি ও ঔদাসীন্য কৃষকের ভাগ্যকে ধ্বংস করে।

খাই হাওরে মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্সের মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণকাজের মানকে স্পষ্টতই তুচ্ছজ্ঞান করেছে। সেখানে মাটির স্তর ঠিকমতো না কেটে, বালু ও জিও ব্যাগের প্রয়োজনীয় স্তর ছাড়াই পাকা ব্লক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ইতিমধ্যেই বৃষ্টিতে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ঠিকাদার আতাউর রহমান খান লিমিটেড এবং মেসার্স প্রীতম এন্টারপ্রাইজের যৌথ প্রকল্পেও একই চিত্র। সেখানে নদীতীরবর্তী অংশে খাড়া মাটি ফেলে রেখে ব্লক বসানো হয়েছে, যা বর্ষার প্রথম ধাক্কাতেই ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা স্পষ্ট বলছেন, ঠিকাদারেরা শুষ্ক মৌসুমের সঠিক সময়ে কাজ শুরু না করে বর্ষার ঠিক আগে তাড়াহুড়া করে নির্মাণের নামে কাগজে-কলমে প্রকল্পকে ‘সম্পন্ন’ দেখানোর ফন্দি আঁটছেন। এই অসাধুতা শুধু বর্তমান প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০১৭ সালে হাওরে ফসলহানির পর ঠিকাদারদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পুনরায় তাঁদের দায়িত্ব দেওয়ায় পাউবো কীভাবে দুর্নীতির দুষ্টচক্রকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তা স্পষ্ট।

মেসার্স নুনা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি ভজন তালুকদার দাবি করছেন, ‘মাটির কাজ শেষ’। অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, বরাম হাওরের বাঁধে মাটির কাজ এখনো অসম্পূর্ণ। এ রকম মিথ্যা দাবি এবং তদারকি কমিটির নিষ্ক্রিয়তা প্রকল্পটিকে কেলেঙ্কারির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অভিযোগের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষের ভূমিকা। স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, পাউবো কর্মকর্তারা নির্মাণকাজের তদারকির নামে শুধু কাগজে-কলমে প্রতিবেদন বানিয়েছেন। খাই হাওরের বাঁধে মাটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বালু-জিও ব্যাগ ছাড়াই পাকা ব্লক বসানো হয়েছে—এমন জঘন্য ত্রুটি চোখের সামনে থাকলেও তাঁরা চুপচাপ দেখেছেন। উপরন্তু ঠিকাদারদের অর্ধেক কাজের বিনিময়ে ৪৫ শতাংশ বিল মঞ্জুর করেছেন।

পাউবো কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করছেন। এটি অনিয়মকে বৈধতা দেওয়ার চক্রান্ত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক ‘পাউবো আর ঠিকাদার একাকার’ বলে যে মন্তব্য করেছেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সেটিকে যথার্থ বলেই মনে হয়। 

এই সংকটের সমাধান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের কালোতালিকাভুক্ত করা, দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রকল্পের সামগ্রিক আর্থিক অস্বচ্ছতার তদন্ত জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের তদারকিতে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে সরকারি টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। না হলে হাওরের বাঁধ শুধু কাগজেই থাকবে, আর কৃষকের ফসল বারবার ভেসে যাওয়ার করুণ গল্পের পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি আংশিক) সংসদীয় আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় সেনবাগ উপজেলার পরিষদ সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মশাল হাতে নিয়ে শত শত নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মশাল মিছিলটি সেনবাগ উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

আরো পড়ুন:

জকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের প্যানেলকে ‘ভাড়াটিয়া’ আখ্যা দিয়ে একাংশের বিক্ষোভ

বিচারকের ছেলে হত্যার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ

এ সময় নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীরা নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তন করে কাজী মফিজুর রহমান মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। 

গত ৩ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুককে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়। 

মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘‘জয়নুল আবদীন ফারুক কয়েকবার সংসদ সদস্য হয়েও সেনবাগে উন্নয়ন করেননি। দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। বিপরীতে কাজী মফিজুর রহমান নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উন্নয়ন বঞ্চিত সেনবাগের মানুষ পরিবর্তন চান তিনি।’’

ঢাকা/সুজন/বকুল  

সম্পর্কিত নিবন্ধ