ছবি: সংগৃহীত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছাড় দিবার অবকাশ নাই

পহেলা জুলাই হইতে সড়ক-মহাসড়কে পুরাতন বাস-মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করিবার যেই প্রজ্ঞাপন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জারি করিয়াছে, উহার প্রতি আমরা সতর্ক সাধুবাদ জানাই। দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ  পুরাতন গাড়ি। রাজধানীসহ বড় শহরগুলির সাংবৎসরিক সমস্যা যানজটের পশ্চাতেও রহিয়াছে এহেন জরাজীর্ণ যানবাহন। ফলে উক্ত সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানাইবার কোনো কারণ নাই। তবে পূর্বেও বহুবার এই প্রকার আদেশ জারি করা হইয়াছে। বিশেষত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই বিষয়ে আদালত আদেশ প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে এবং ইহার পর কয়েক দফায় রাজধানীতে ২০ বৎসরাধিক পুরাতন বাস এবং ২৫ বৎসরাধিক পুরাতন পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইয়াছিল, যাহা পালিত হয় নাই। ২০২৩ সালের মে মাসে বিআরটিএ সড়ক-মহাসড়ক হইতে পুরাতন যান প্রত্যাহারের আদেশ জারি করিলেও শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপনটিই প্রত্যাহার করিতে বাধ্য হয় সংস্থাটি। এহেন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই আমরা বিআরটিএর সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনকে ‘সতর্ক’ সাধুবাদ জানাইয়াছি। ইহাও বলা প্রয়োজন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-তে স্পষ্ট বলা হইয়াছে, ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত, রংচটা, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত নির্ধারিত রং পরিবর্তন করিয়া জরাজীর্ণ, বিবর্ণ বা পরিবেশ দূষণকারী কোনো মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ সহস্র টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের যেই বিধান রহিয়াছে, উহা অদ্যাবধি কার্যকর হয় নাই বলিলেই চলে। এই সকল যানবাহন ‘ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স’ পায়ই বা কীরূপে– বিআরটিএ এই প্রশ্নেরও জবাব দেয় নাই। 
ইহা কাহারও অজানা নহে, মূলত পরিবহন মালিকদের চাপে বিগত সরকারের সময় আলোচ্য নির্দেশনা কার্যকর করা যায় নাই, যাহা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে থাকিবার কথা নহে। এতৎসত্ত্বেও বায়ুদূষণ হ্রাস করিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করিয়া ধ্বংস করিবার সময় এপ্রিলে সমাপ্ত হইলেও বাস্তবে উহা কার্যকর হয় নাই। তবে কি পরিবহন মালিকদের স্তম্ভশক্তি ব্যাপক অদ্যাবধি? আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়ককে অচল যানবাহনমুক্ত করিতে অন্তর্বর্তী সরকার নূতন করিয়া যেই উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে; আপসহীন না হইলে উহা হইবে পূর্ববৎ। অবশ্য আমরা দেখিয়াছি, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাগণ ইতোমধ্যে তাহাদের সহিত বৈঠক করিয়াছেন। উক্ত বৈঠকে পরিবেশ উপদেষ্টা বলিয়াছেন, আমরা সড়ক হইতে পুরাতন যানবাহন প্রত্যাহার করিতে ছয় মাস সময় দিয়াছি। অর্থাৎ পরিবহন মালিকদের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হইয়াছে। এখনই সময় বিআরটিএর প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নে কঠোর হইবার।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র দেশে নিবন্ধিত বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ৮০ সহস্রপ্রায়। তন্মধ্যে ৩০ সহস্রপ্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ। আর ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাঙ্ক-লরির উল্লেখযোগ্য অংশের মেয়াদ উদ্দীর্ণ হইয়াছে অনেক আগেই। সড়কে ঐ সকল যানবাহন কতটা ঝুঁকি লইয়া চলাচল করে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই বিপুলসংখ্যক যানবাহন একযোগে সড়ক হইতে প্রত্যাহার করিলে শূন্যস্থান পূরণ হইবে কী প্রকারে, তাহাও মস্তিষ্কে ধারণ করা প্রয়োজন। নচেৎ তদ্দরুন যেই অসুবিধা যাত্রীসাধারণকে ভোগ করিতে হইবে, উহার ছুতা দেখাইয়াও অচল পরিবহনগুলিকে সড়কে ধরিয়া রাখিবার প্রয়াস চলিবে– এই কথা বুঝিতে কোনো বিশেষজ্ঞ-জ্ঞানের আবশ্যকতা নাই। চূড়ান্ত কথা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনা হ্রাসের মাধ্যমে জীবনের নিরাপত্তা বিধানে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিবহন সড়ক হইতে প্রত্যাহার করিতেই হইবে। তৎসহিত সংশ্লিষ্ট ভোক্তাদিগের ভোগান্তি হ্রাসে বিকল্প ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা চাই। নতুবা অতীতের ন্যায় তাহা হইবে সকলই গরল ভেল। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ