এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৩৫। এদিকে গত মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত—উভয় খাতেই মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কমেছে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এপ্রিল মাসের এই চিত্র পাওয়া গেছে।

বিবিএসের হিসাব অনুসারে, গত এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে এই হার ৯ দশমিক ৬১।

গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৪ সালের এপ্রিলে যদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা কিনে আপনার সংসারের খরচ চালাতে ১০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে এ বছরের এপ্রিলে একই পণ্য ও সেবা কিনে সংসার চালাতে খরচ লাগল ১০৯ টাকা ১৭ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ১৭ পয়সা।

মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। ধরুন, আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়।

বিবিএসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঈদের পরের চাহিদা একটু কম থাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে। এপ্রিলে বাজারে শাকসবজির দামও নাগালের মধ্যে ছিল। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে একটু স্বস্তি এসেছে।

সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও এক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এক বছর ধরে (২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আছে। এই হার ১০ দশমিক ২১।

কোথায় কত মূল্যস্ফীতি

এপ্রিলে দেশে শহর ও গ্রাম—উভয় এলাকায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এ মাসে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ; মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এপ্রিলে গ্রামাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪০ ও ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪১ ও ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এপ্রিলে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ; মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এপ্রিলে শহরাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৩ ও ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ১৮ ও ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

মজুরি বৃদ্ধির হার কম

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না মজুরি। বিবিএসের হিসাবে, গত এপ্রিলে জাতীয় মজুরির হার হয় ৮ দশমিক ১৯। এর মানে হলো, মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে জাতীয় মজুরির হার কিছুটা বেড়েছে। তাই মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে।

মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। গ্রাম-শহরনির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এই হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।

বর্তমানে অর্থনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো। দুই বছরের বেশি ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। এর কিছুটা সুফলও মিলেছে।

কয়েক বছর ধরে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি। ক্ষমতাসীন সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তা হচ্ছে না বলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা একাধিকবার দাবি করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ যবহ র ভ ত ছ ল ৯ দশম ক ও ৯ দশম ক ব ব এস র ৮ দশম ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।

শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”

আরো পড়ুন:

হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান  

দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে

বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”

বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”

২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ