প্রতি বছরই দুই ঈদের মাসে রপ্তানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ ঈদের মাসে গড়ে ১০ দিনের মতো কারখানা ছুটি থাকে। উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ থাকে। এতে অন্যান্য মাসের চেয়ে ঈদের মাসে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ রপ্তানি কম হয়। এ কারণে গত এপ্রিল মাসে আগের মাসের চেয়ে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১২৩ কোটি ডলার। অবশ্য ছুটি ছাড়াও গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্কভারও রপ্তানিতে গতি কমে আসার জন্য কিছুটা দায়ী।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলে গত বছরের একই মাসের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের মতো। গত বছরের এপ্রিলে যা ছিল ২৯৯ কোটি ডলার। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইপিবি। ইপিবির পুরোনো উপাত্ত থেকে দেখা যায়, গত মার্চে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪২৫ কোটি ডলার।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে যে গতি ছিল, তা হঠাৎ অনেক বেশি ধীর হয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তৈরি পোশাকের নিট ক্যাটেগিরির পণ্য রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, ঈদের কারণে আট দিন কারখানা ছুটি ছিল। সব ধরনের উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ ছিল এ সময়। মূলত এ কারণেই রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে এ কারণে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হয়েছে এ মাসের শুরুতে। ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকা ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে মার্কিন কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রপ্তানি আদেশ চূড়ান্ত করতে সময় নিচ্ছে। তারও একটা প্রভাব আছে এপ্রিলে রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে।
ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বলছে, একক মাস এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৪ হাজার ২১ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ৬৬১ কোটি ডলার।
এপ্রিলে অন্যান্য পণ্যের চেয়ে তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধি কম শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। নিটপণ্যে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সুবাদে রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় নেমে যায়নি। মাসটিতে তৈরি পোশাকের ওভেন ক্যাটেগরির রপ্তানি কমছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পোশাক রপ্তানির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৮ কোটি ডলার। গত মার্চ মাসে এ পরিমাণ ছিল ২৩৯ কোটি ডলারেরও কিছু বেশি। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৬৪ কোটি ডলারের।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের গত ১০ মাসে তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি পরিস্থিতিও মোটামুটি ভালো। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি বেশি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৯৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য। শুধু মার্চ মাসেই এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি ৭ শতাংশ কমলেও একক এপ্রিল মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল