স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত এবং সহজলভ্য করতে বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে বলছেন তারা। 

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর আগেও কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি হাসপাতালের সেবামূল্য বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করে; তবে সেটি চূড়ান্ত রূপ দিতে পারেনি।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা, স্বাস্থ্যসেবার ফি ও রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। এই মূল্য বা ফি-এর তালিকা দৃশ্যমান জায়গায় প্রদর্শন করতে হবে। এসব বিধান না মানলে ব্যবস্থা নিতে পারবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ জন্য রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা জরুরি।
এই প্রতিবেদন তৈরির আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনমত জরিপ করে। সেই জরিপে চিকিৎসাসেবা সহজ করতে সব ধরনের ওষুধের দাম সরকার থেকে বেঁধে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। জানা যায়, সরকারি বিশেষায়িত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসাসেবার মান সম্পর্কে ৬৪ জেলার শহর এবং গ্রামের ৮ হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর এ জরিপ করা হয়। 

জরিপের তথ্য বলছে, সরকারি সেবায় দুরবস্থার কারণে বড় অংশ ছুটছে বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা অনেক ব্যয়বহুল। ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করে, বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে খরচ অনেক বেশি। ওষুধের ক্ষেত্রে একই চিত্র বলে জানিয়েছে ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে অবহেলার শিকার হয়েছে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। বেসরকারিতে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধ, অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসকের পরামর্শ মূল্য নির্ধারণে মত দিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ।

এ ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.

সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন সমকালকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ফি নমুনা (রোগ নির্ণয়ে) পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে এই সুপারিশ করা হয়েছে। অনেক হাসপাতাল ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করে। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। রোগীর সুরক্ষা, অর্থ বরাদ্দ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। এই আইনের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বেসরকারি হাসপাতালের সেবা মূল্যে বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই মূল্য দুই বছর পর পর হালনাগাদ করার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর নির্ভরশীল। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে চিকিৎসাসেবা সবকিছুই অনিয়ন্ত্রিত। এই সংকট নিরসনে ২০১৯ সাল থেকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবামূল্য নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় শুরু হয়। চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবামূল্য নির্ধারণে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ১৩৯টি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার তালিকা দেওয়া হলেও ৪৪টি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো মূল্য প্রস্তাব করা হয়নি। এ ছাড়া ৮টি বিশেষায়িত পরীক্ষা এবং ২১টি অস্ত্রোপচারের মূল্যও রাখা হয় প্রস্তাবের বাইরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব পরীক্ষা ও সেবামূল্যের প্রস্তাব করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেগুলোর কিছুই হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেসরকারি হাসপাতালের সেবামূল্য নির্ধারণের পূর্বশর্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস করা। অন্যথায় মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি নতুন কোনো সুপারিশ নয়। এটা অনেক আগের প্রস্তাব। আমার এটা নিয়ে কাজও করেছি। তবে চূড়ান্ত কোনো কিছু দাঁড় করাতে পারেনি। নতুন যে সুপারিশ এসেছে এটা নিয়ে আমরা কাজ করব। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোর মানের দিকেও নজর দেব। মান ভালো না হলে আমরা নিবন্ধন না দেওয়ার অনুরোধ করব। পাশাপাশি সেবার মানের ওপর ভিত্তি করে হাসপাতালগুলোর ক্যাটেগরি নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সেবামূল্য অসংগতিপূর্ণ। নীতিমালা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেবামূল্য নির্ধারণে কাজ চলমান রয়েছে। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ব সরক র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারের খাতে তালিকাভুক্ত ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। ফলে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারহোল্ডারা।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এই লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকা স্টক একাসচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

লাভেলোর শেয়ার অধিগ্রহণ ও ঋণ চুক্তি যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি

রেনাটার ৯ মাসে মুনাফা কমেছে ৩০ শতাংশ

এর আগে সোমবার (৫ মে) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।

তথ্য মতে, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৩ জুলাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ প্রদানে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩ জুন।

সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৫১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.৫৯ টাকা।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩২.৪২ টাকা।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্যসীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ