বেসরকারি হাসপাতালে সেবা মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব
Published: 6th, May 2025 GMT
স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত এবং সহজলভ্য করতে বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে বলছেন তারা।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর আগেও কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি হাসপাতালের সেবামূল্য বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করে; তবে সেটি চূড়ান্ত রূপ দিতে পারেনি।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা, স্বাস্থ্যসেবার ফি ও রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। এই মূল্য বা ফি-এর তালিকা দৃশ্যমান জায়গায় প্রদর্শন করতে হবে। এসব বিধান না মানলে ব্যবস্থা নিতে পারবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ জন্য রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা জরুরি।
 এই প্রতিবেদন তৈরির আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনমত জরিপ করে। সেই জরিপে চিকিৎসাসেবা সহজ করতে সব ধরনের ওষুধের দাম সরকার থেকে বেঁধে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। জানা যায়, সরকারি বিশেষায়িত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসাসেবার মান সম্পর্কে ৬৪ জেলার শহর এবং গ্রামের ৮ হাজার ২৫৬টি পরিবারের ওপর এ জরিপ করা হয়। 
জরিপের তথ্য বলছে, সরকারি সেবায় দুরবস্থার কারণে বড় অংশ ছুটছে বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা অনেক ব্যয়বহুল। ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করে, বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে খরচ অনেক বেশি। ওষুধের ক্ষেত্রে একই চিত্র বলে জানিয়েছে ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে অবহেলার শিকার হয়েছে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। বেসরকারিতে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধ, অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসকের পরামর্শ মূল্য নির্ধারণে মত দিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ।
এ ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.                
      
				
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর নির্ভরশীল। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে চিকিৎসাসেবা সবকিছুই অনিয়ন্ত্রিত। এই সংকট নিরসনে ২০১৯ সাল থেকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবামূল্য নির্ধারণের বিষয়টি আলোচনায় শুরু হয়। চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবামূল্য নির্ধারণে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ১৩৯টি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার তালিকা দেওয়া হলেও ৪৪টি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো মূল্য প্রস্তাব করা হয়নি। এ ছাড়া ৮টি বিশেষায়িত পরীক্ষা এবং ২১টি অস্ত্রোপচারের মূল্যও রাখা হয় প্রস্তাবের বাইরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব পরীক্ষা ও সেবামূল্যের প্রস্তাব করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেগুলোর কিছুই হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মূল্য নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেসরকারি হাসপাতালের সেবামূল্য নির্ধারণের পূর্বশর্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস করা। অন্যথায় মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।
 বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি নতুন কোনো সুপারিশ নয়। এটা অনেক আগের প্রস্তাব। আমার এটা নিয়ে কাজও করেছি। তবে চূড়ান্ত কোনো কিছু দাঁড় করাতে পারেনি। নতুন যে সুপারিশ এসেছে এটা নিয়ে আমরা কাজ করব। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোর মানের দিকেও নজর দেব। মান ভালো না হলে আমরা নিবন্ধন না দেওয়ার অনুরোধ করব। পাশাপাশি সেবার মানের ওপর ভিত্তি করে হাসপাতালগুলোর ক্যাটেগরি নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সেবামূল্য অসংগতিপূর্ণ। নীতিমালা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেবামূল্য নির্ধারণে কাজ চলমান রয়েছে।
  
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ব সরক র পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার রাস্তায় টেসলা, রোলস–রয়েস, পোরশেসহ ২৫০০ বিলাসবহুল গাড়ি
রাজধানী ঢাকার রাস্তায় চলে বিশ্বের আলোচিত টেসলা গাড়ি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ছয়টি টেসলা গাড়ির নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। শুধু টেসলা নয়; রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি, পোরশের মতো বিলাসবহুল অভিজাত গাড়ি এখন ঢাকার রাস্তার বুক চিড়ে চড়ে বেড়ায়।
অন্যদিকে রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো অভিজাত গাড়িও ঢাকার রাস্তায় অহরহ দেখা যায়। এ গাড়িগুলো যেন দেশের ধনীদের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে দেশে এখন আড়াই হাজারের বেশি এমন বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি আছে। এই গাড়িগুলোর দাম ১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা। দেশের একশ্রেণির অতিধনী ব্যবসায়ীরা এসব বিলাসবহুল গাড়ি চালান।
গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, এমন বিলাসবহুল দামি গাড়ির গ্রাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারের মতো। কেউ কেউ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন।
দেশে বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ ও আউডি (অনেকে অডি বলেন) ব্র্যান্ডের গাড়ি। রাজধানীর ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাস্তায় এমন দামি গাড়ি মাঝেমধ্যে দেখা যায়।
এক দশক আগেও রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ি অনেক কম দেখা যেত। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা ও বসুন্ধরার মতো অভিজাত এলাকায় এখন প্রায়ই দেখা মিলে রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। সাধারণত রাতের দিকে অভিজাত এলাকায় এমন গাড়ির আনাগোনা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে আড়াই হাজারের বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে শুধু রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি হয়েছে ১২টি। আর গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ৮টি রোলস-রয়েস নিবন্ধিত হয়েছে।
গত জুলাই মাসে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পরে রোলস-রয়েসের ‘স্পেক্টার’ মডেলের গাড়ি। যার দাম ফিচারভেদে প্রায় ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা। তখন এই দামি গাড়ি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।
টেসলা ব্র্যান্ডের ‘মডেল এস’ গাড়ি