খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা চলছেই। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষকেরা। ৪৪ দিন বন্ধের পর আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষকেরা ক্লাসে যাননি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা। ল্যাবরেটরি ও শ্রেণিকক্ষগুলোতে ধুলার আস্তর পড়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকদের কার্যালয়ে গিয়ে ক্লাস শুরুর জন্য অনুরোধ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছোট ছোট গ্রুপ করে শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছি। স্যারদের বলেছি, আমাদের যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মাফ করে দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যেকোনো ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরাও ওই সময়ের ঘটনার বিচার চাই। স্যারদের সঙ্গে কোনো অন্যায় কেউ করলে সেটারও বিচার চাই। আমরা চাচ্ছি, বিচারপ্রক্রিয়া চলতে থাকুক, পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে।’

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হযরত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে এখনো কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি।

গতকাল সোমবার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হযরত আলী প্রথমে শিক্ষার্থীদের এবং পরে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি দ্রুত ক্লাসে ফেরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং উভয় পক্ষকে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের কাছে পুনরায় ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। এরপর বিকেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্লাস শুরুর দাবিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জানান।

শিক্ষকদের অনড় অবস্থান ফুটে উঠেছে শিক্ষক সমিতির গতকালের সাধারণ সভায়। সভা শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইউজিসি প্রতিনিধিদলের পক্ষপাতমূলক আচরণে শিক্ষকেরা মর্মাহত ও উপেক্ষিত বোধ করছেন এবং তাঁরা এর তীব্র নিন্দা জানান।

আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ভিসি, শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতিতে অনড়২০ ঘণ্টা আগে১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে উপচার্য পদত্যাগ করেন। ১ মে অধ্যাপক হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকেরা সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখবেন। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার বুলিং, সামাজিক অবমাননা ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

গতকাল বিকেলে উপাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে শিক্ষকেরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ও তার পরবর্তী ঘটনাক্রম তুলে ধরেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাহিদুল ইসলাম বৈঠকের পর জানান, উপাচার্যের কাছে তাঁরা তাঁদের দাবি পেশ করেছেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না।

আরও পড়ুনকুয়েটে ৭৪ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু, তবে ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা০৪ মে ২০২৫খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকদের কার্যালয়ে গিয়ে ক্লাস শুরুর অনুরোধ করছেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র ক উপ চ র য ন ত কর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্লোগানে মুখর বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ চার মাস পর দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার অবতরণের কথা রয়েছে। দলীয় নেত্রী প্রত্যাবর্তন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার বাসভবন গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী অপেক্ষায় রয়েছেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকে।

এছাড়াও সড়কের দুই পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছেন। দিচ্ছেন নানা স্লোগান।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে রাজধানীর গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজার সামনে সকাল থেকেই জড়ো হতে শুরু করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ‘দেশনেত্রী ফিরছেন—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় স্বস্তি।’ কেউ কেউ মুঠোফোনে ফেসবুক লাইভে আছেন ফিরোজার সামনে থেকে।

রাজনীতির মাঠে খালেদা জিয়ার এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কারও কাছে এটি মাইনাস টু তত্ত্বের ব্যর্থতা, কারও কাছে এটি শুধু একজন নেত্রীর ঘরে ফেরা নয়—একটি রাজনৈতিক বার্তা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ফিরোজার’ পথে খালেদা জিয়া
  • স্লোগানে মুখর বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা
  • বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা আরও সহায়ক হবে: মির্জা ফখরুল
  • শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারসহ ৫ দাবিতে আল্টিমেটাম কুয়েট শিক্ষক সমিতির