ইন্টারকে হারাতে বার্সেলোনাকে যা করতে হবে
Published: 6th, May 2025 GMT
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারের লড়াই মাঠে ফিরছে আজ। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে সান সিরোতে বার্সেলোনাকে আতিথেয়তা দেবে ইন্টার মিলান। আগের লেগে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৩-৩ গোলে ড্র করে স্প্যানিশ ও ইতালিয়ান জায়ান্টরা। আজ রাতের খেলাটা দু’দলেরই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পুনরুত্থানের লড়াই। সবশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা ঘরে তোলে বার্সা। এরপর কেটে গেছে ১০ বছর। ইন্টার মিলানের অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ। তারা শেষবার ইউরোপ সেরার তকমা পায় ২০০৯-১০ মৌসুমে। তাই আজ দু’দলই যে মাঠে নিজেদেরকে নিংড়ে দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সান সিরোতে আজকের ম্যাচই নির্ধারণ করবে কারা উঠবে ফাইনালে।
বার্সার জন্য ম্যাচটির গুরুত্ব যেমন আকাশচুম্বী, তেমনি কঠিনও। কারণ, আজকের ম্যাচে ইনজুরির কারণে দলে থাকছেন না গুরুত্বপূর্ণ দুই ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো বালদে ও জুল কুন্দে। তবে স্বস্তির খবর হলো, আক্রমণভাগে ফিরছেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভান্ডোভস্কি।
ইন্টার মিলানকে হারাতে হলে আজকের ম্যাচে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল দারুণভাবে কাজে লাগাতে হবে বার্সেলোনাকে। প্রথমটি হচ্ছে, সেট-পিসে আরও শক্ত হতে হবে। প্রথম লেগে ইন্টারের তিন গোলের মধ্যে দুইটি এসেছিল সেট-পিস থেকে। শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও উচ্চতায় এগিয়ে থাকা ইন্টারের খেলোয়াড়দের সামলানো ছিল বার্সার রক্ষণভাগের জন্য কঠিন কাজ, যা আজও হতে পারে।
বার্সাকে আজ সেট-পিস ডিফেন্ডিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। রোনাল্ড আরাউহোর মতো শক্তিশালী ডিফেন্ডারকে কাজে লাগানো, কিংবা ছোটখাটো গড়নের খেলোয়াড়দের দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক মুভমেন্ট তৈরি করা— এই কৌশলগুলো বিবেচনায় আনতে পারেন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক।
চলতি মৌসুমে বার্সেলোনা হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে সুযোগ তৈরি করতে খুব একটা সমস্যা ভোগ করেনি। তবে সুযোগ যেটাই আসবে সেটাই কাজে লাগাতে হবে। প্রথম লেগেও ইন্টারের শক্তিশালী রক্ষণভাগ ভেদ করে বেশ কিছু ভালো সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। আজকের ম্যাচে রাফিনহা, লামিন ইয়ামাল, ফেরান তোরেস এবং দানি ওলমোদের এগিয়ে আসতে হবে। সুযোগ পেলেই নিখুঁতভাবে তা গোলে রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলেই ইন্টারের জালে গোলের বৃষ্টি ঘটানো সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাতালানদের নিজেদের বিশ্বাস করা। চলতি মৌসুমে বার্সা বারবার দেখিয়েছে, তারা নিজেদের ওপর আস্থা রাখে। প্রথম লেগেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ ড্র করেছে তারা। আজও সেই মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। বার্সা যদি মনে করে, তারাই সেরা এবং মাঠে তা ফুটিয়ে তোলে, তাহলে ইন্টার মিলানকেও রুখে দেওয়া কঠিন হবে না।
মোট কথা, সান সিরোতে আজ রাতের ৯০ মিনিট নির্ধারণ করবে, বার্সা কি পারবে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ফাইনাল অবধি যেতে, নাকি থেমে যাবে সেমিফাইনালেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইন ট র ম ল ন ইন ট র ম ল ন আজক র ম য চ ইন ট র র ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা
পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে লুটপাটের শিকার হয়েছিল। তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এ জন্য এসব ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে প্রতিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঁচজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) পদত্যাগ করতে বলেছে।
ফলে এখন থেকে ব্যাংক পাঁচটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসক দল। তারাই ব্যাংকগুলো একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংকে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। আজ বুধবার পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে একাধিক চিঠি দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত জানায়।
আলোচ্য পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নিয়ন্ত্রণের তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের এবং বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা দুজনেই আবার তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাঁচ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সব কটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়। এরপর ব্যাংকগুলোয় নানা অনিয়ম সংঘটিত হওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তহবিল জোগানের পাশাপাশি সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোটিই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে এগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমানতকারীরা চলতি মাসেই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। এসব ব্যাংকের কারও চাকরি যাবে না।
কোন ব্যাংক ডুবাল কেব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে কোন প্রতিষ্ঠানে কার বেশি ঋণ, সে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে এস আলম, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠী জড়িত। এস আলম গ্রুপ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত। এ ছাড়া সিকদার, নাসা ও দেশবন্ধু গ্রুপের নেওয়া ঋণের আদায় নেই। ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের একই পরিণতির জন্য দায়ী এস আলম গ্রপ। এক্সিম ব্যাংকের ক্ষেত্রে দায়ী করা হয় নাসা, বেক্সিমকো, এস আলমসহ আরও কয়েকটি গ্রুপকে।
চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়, ‘আপনাদের ব্যাংক আর্থিকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এককভাবে কার্যকর হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে অক্ষম।’
একীভূত করার পর অধিগ্রহণজানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসক দলের কার কী কাজ হবে, তা–ও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে প্রশাসক করে বাকিদের মধ্যে মানবসম্পদ, তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক বিভাগ ও কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব কর্মকর্তা ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ভবিষ্যতে একীভূত হওয়ার দিকে কীভাবে যাবে, তার পথনকশা তৈরি করবেন। এতে সহায়তা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এরপর নতুন ব্যাংক গঠন হলে সেই ব্যাংকটি পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায় ও জনবল অধিগ্রহণ করে নেবে। একীভূত করার পর অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, একীভূত ব্যাংকটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। এই ব্যাংকের আমানতকারীদের জমা রাখা অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংকটি হবে সরকারি মালিকানাধীন, তবে পরিচালিত হবে বেসরকারিভাবে। ফলে কর্মীদের বেতন হবে বাজারভিত্তিক, আমানতকারীরাও মুনাফা পাবেন বাজারের হারে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে গঠন করা হবে সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক। সেটির মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আজ সকালে ব্যাংক পাচটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, এখন থেকে এসব ব্যাংক চলবে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতায়। এ নিয়ে বিকেলে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জনবলের কী হবেএকীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে বর্তমান ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার। এই ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই এখন খেলাপি।
সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি। ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ১৫ হাজার জনবল।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাঁচ ব্যাংকে জনবল যা আছে, তারা সবাই থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখা কোথায় স্থানান্তর করা যায়, তা যাচাই করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারও চাকরি যাবে না। ভবিষ্যতে একীভূত ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলে তখন চাহিদা অনুযায়ী জনবল থাকবে।
কে কোন ব্যাংকের প্রশাসকএক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান। ইউনিয়ন ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তাঁরা সবাই ব্যাংকগুলোতে গিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন।
পরের সরকার উপকৃত হবেসামনে রাজনৈতিক সরকার এলে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হবে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘এসব ব্যাংকের যে আর্থিক অবস্থা, তাতে বোঝা যায়, তারা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। আমরা টাকা দিয়ে চালিয়ে রেখেছি। একীভূত করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পরবর্তী সরকার উপকৃত হবে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের চাপ নিতে হবে না। কোনো সরকার ভালো উদ্যোগ বাতিল করে না। এটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি।’