Prothomalo:
2025-08-08@18:13:22 GMT

অভিভাবকশূন্য বেসিস

Published: 6th, May 2025 GMT

গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির পদত্যাগ করেন। এর পরদিন ১ মে বেসিসের প্রশাসক মুহম্মদ মেহেদি হাসান সহায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেন। ৪ মে নির্ধারিত সময়ে (১২০ দিনের মধ্যে) নির্বাচন না করতে পারার কারণে পদত্যাগ করেন মুহম্মদ মেহেদি হাসান। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, আগামী ২০ জুলাই চাকরিজীবন থেকে অবসরে যাওয়ার কারণে যাবতীয় সংস্কার শেষ করে বেঁধে দেওয়া ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন না করার অক্ষমতার কথা। প্রশাসক ও সহায়ক কমিটি না থাকায় বেসিস এখন অভিভাবকশূন্য।

এদিকে দীর্ঘ ১৬ বছর ৮ মাস পর বেসিস থেকে ১ মে পদত্যাগ করেছেন বেসিসের সচিব হাশিম আহমেদ। আজ মঙ্গলবার বেসিস অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বেসিস সচিবালয়ে ৩৪ জন কর্মী ইতস্তত ঘোরাফেরা করছেন। কয়েকজন কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাথার ওপর ছাদ নেই। কী করব আমরা জানি না। একটি অডিট চলছে; কিন্তু ওরা যদি আমাদের কাছে কোনো কাগজ চায়, আমরা দিতে পারব না। আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। অনুমতি ছাড়া আমরা কিছু দিতে পারি না। এমন সময় সই করারও কোনো মানুষ নেই। এককথায় আমরা অভিভাবকহীন অবস্থায় আছি।’ আমাদের কাছে মনে হয়েছে গত ২৭ বছরে বেসিসের এমন অবস্থায় আসা একটি বিরল ঘটনা।

সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান প্রাইডসিস আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শিল্পের ট্রেড বডি হচ্ছে প্রাণ। যারা আমাদের শিল্প নিয়ে কথা বলবে, আমাদের হয়ে কথা বলবে। কিন্তু এই ট্রেড বডিটা এখন ধ্বংসের পথে। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আসলে পারেনি এই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে। তাদের উচিত ছিল সবাইকে নিয়ে এগোনো। সরকারের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কাছে আমাদের কথা পৌঁছানো; কিন্তু তাঁরা সেটি করেননি। আমাদের অনেক সুযোগ ছিল, আমরা সেটি এখনো নষ্ট করছি। বর্তমানে সময়ে বিডাকেন্দ্রিক যে ব্র্যান্ডিং শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ সেখানে তথ্যপ্রযুক্তিতে একটি বিশাল উপলক্ষ হতে পারত। সেই সুযোগ আমরা নিতে পারিনি। আমাদের হয়ে সেখানে কেউ কথা বলেননি। যা বলা হয়েছে, সেটি খুব দুর্বল। দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি মনে করছি, বাংলাদেশের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে ব্র্যান্ডিংটা হচ্ছে, বাংলাদেশের এখানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবস্থান রাখা উচিত ছিল সবার ওপরে। যেখানে সবার নিচে আছে তথ্যপ্রযুক্তি। আর এটা শুধু ট্রেড বডি দিয়ে সম্ভব। যা সংস্কার দরকার সেটি করে অতি দ্রুত ট্রেড বডি নির্বাচন দিয়ে এবং নতুন একটি নির্বাচিত কমিটিকে এনে তাড়তাড়ি এই শূন্যস্থান পূরণ করা যেতে পারে।’

অ্যাসোসিওর আজীবন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ এইচ কাফি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে আইসিটি খাতে কাজ করছি, আমাদের খারাপ লাগাটা একটু বেশিই। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সংস্থা এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) ও ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন, টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্স (উইটসা) প্রতিনিধিরা যখন আমাদের নিয়ে কথা বলেন, তখন খারাপ লাগে। আমি অনুরোধ করব, অনেক হয়েছে, এবার নিজেরা নিজেদের খাতটির ক্ষতি না করি।’

বেসিসের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে জানান, বেসিসের সদস্যরা এখানে যার যার অবস্থানে ব্যবসা করে যাচ্ছে; কিন্তু এই সংগঠনে যখন গায়ের জোর বা মাস্তানির একটি প্রভাব পড়ে, সেখানে সংগঠন ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই হবে না। আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে একটি সমাধান আনা যেতে পারে। আমরা আসা করব, আমাদের আইসিটি খাতের যাঁরা অভিভাবক আছেন, তাঁরা এটি দ্রুত একটি সমাধানের পথ বের করবেন।

প্রসঙ্গত, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক খাতের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসেও (বেসিস) পরিবর্তন আসে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সরকার বেসিস প্রশাসক নিযুক্ত করে। প্রশাসককে সহায়তা করতে ও বেসিসের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাফেল কবিরের নেতৃত্বে গত ৮ ডিসেম্বর বেসিস সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল পদত য গ আম দ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে

১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।

এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।

আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।

এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ