জার্মানির রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎস চ্যান্সেলর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি মন্দা কাটিয়ে উঠতে এবং ডানপন্থী উগ্রবাদ রুখতে চায়। ঠিক তখন মের্ৎসের এই ব্যর্থতা দেশটির রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এখন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কাকে চ্যান্সেলর বানাবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফ্রিডরিখ মের্ৎসের (৬৯) দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন জয়ী হয়। ক্ষমতায় আসতে সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের (এসপিডি) সঙ্গে জোট করেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার চ্যান্সেলর বাছাইয়ের নির্বাচন ছিল। এতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্দেসটাগে ৬৩০ জনের মধ্যে ৩১০ জন সংসদ সদস্যের ভোট পান মের্ৎস। প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে তিনি ৬ ভোট কম পান। জোটের অন্তত ১৮ জন পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) তাঁকে ভোট দেননি।

যদিও চ্যান্সেলর পদে মের্ৎসের এই কম ভোট পাওয়া মারাত্মক কোনো বিপর্যয় নয়, তবে প্রথম চেষ্টায় তাঁর সমর্থন না পাওয়া যুদ্ধ–পরবর্তী জার্মানিতে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্বদরবারে জার্মানির নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই নেতার জন্য বিষয়টি বিব্রতকর।

জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে আগামীকাল বুধবার ফ্রান্স ও পোল্যান্ড সফর করার কথা ছিল মের্ৎসের। কিন্তু নির্বাচনে ব্যর্থতা তাঁর সফরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বার্লিন শাখার প্রধান ইয়ানা পুগলিয়েরিন বলেন, ‘গোটা ইউরোপ আজ বার্লিনের দিকে তাকিয়ে ছিল এই আশায় যে, জার্মানি আবারও স্থিতিশীলতা ও ইউরোপপন্থী শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করবে। কিন্তু সে আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এর প্রভাব শুধু আমাদের সীমান্তের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।’

আরও পড়ুনজার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার১০ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর একটি আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এসব ছবি-ভিডিও ছড়ানোর পর জেলায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে গেছেন। তবে তাঁর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি ছুটিতে গেছেন।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তাঁর আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন।

ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করত। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিত। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীদের ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখে না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’

ভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। আর জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেননি।

দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন শরীয়তপুর জজ কোটের একজন আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য। কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন। যা পরিশোধের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’

গত বছরের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক হিসেবে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরে যোগদান করেন। জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুল আলম গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার ছুটিতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে রাতে তিনি ঢাকায় গেছেন। তাঁর অবর্তমানে জেলা প্রশাসক হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা লিখিতভাবে কাউকে দিয়ে যাননি। তিনি কবে ফিরে আসবেন, তা–ও আমরা বলতে পারছি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ