চট্টগ্রাম নগরের হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ১৫ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গত ২২ এপ্রিল এই কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

এই সপ্তাহেও প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। এখন চার সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। কমিটিতে নতুন করে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের যুক্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। রাখা হবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রতিনিধি।

চট্টগ্রাম নগরের অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে গত ৬ বছরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নগরের হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৪ ঘণ্টা পরে পরদিন সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে নগরের চাক্তাই খাল থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

এভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা তদন্তে এর আগে কোনো কমিটি গঠন করেনি নালা ও খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ‘সিটি করপোরেশন-সিডিএ: খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গত ২১ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন ছাড়া তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতিখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মহিউদ্দিন মুরাদ এবং সদস্যসচিবের দায়িত্বে আছেন প্রকৌশলী মো.

আনিসুর রহমান। কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে হিজড়া খালের যেখানে পড়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, খালে পড়ে কী কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তা মোটামুটি সবাই জানেন। ওখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য তা খুলে নেওয়ায় খালের পাশটি অরক্ষিত হয়ে যায়। এতে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি খালে পড়ে যায়। কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে যাতে আর কারও মৃত্যু না হয় এবং এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে অরক্ষিত খাল ও নালা-নর্দমাগুলো টেকসই ও স্থায়ীভাবে সুরক্ষিত করার পথ খুঁজছেন। এ জন্য কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের যুক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চুয়েটকে চিঠি দেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়ার কারণে প্রতিবেদন জমা দেওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, বিশেষজ্ঞ সদস্যদের পরামর্শে কার্যকর সুপারিশ দেবে কমিটি। যাতে এসব সুপারিশ সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও ওয়াসাসহ সেবা সংস্থাগুলো উন্নয়নকাজ পরিচালনার সময় অনুসরণ করে। এগুলো সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে অন্তত আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।

চট্টগ্রাম নগরের নালা ও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দায়ভার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএর। সংস্থা দুটির হাতে নগরের ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালার দায়িত্ব। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে খালে পড়ে, যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে সিডিএ। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে সংস্থাটি। ২০১৮ সাল থেকে নগরের ৩৬ খাল ও বড় নালাগুলোয় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিডিএ। এ কাজ এখনো চলমান। আর নালায় পড়ে যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেগুলো সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চশমা খালে পড়ে মুহূর্তে তলিয়ে যায় সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি এই ঘটনার জন্য সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করেছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গঠন কর সদস য নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

জীর্ণ আবাসিক হলে ঢামেক শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে বাস

সেই ১৯৫৫ সালে চালু হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাস শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হল। ৭০ বছর পার হলেও প্রায় ৭৫০ ছাত্রের আবাসন সুবিধার হলটির কোনো সংস্কার হয়নি। নতুন কোনো হলও নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে হলটির জরাজীর্ণ হাল; পিলার ফেটে, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এরই মধ্যে কিছু কক্ষকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবু ছাত্রদের বিকল্প আবাসন ব্যবস্থা হয়নি।  

দুই সপ্তাহ ধরে আবাসন সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবারও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছেন।  
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তদানীন্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ভবনকে (বর্তমান ঢামেক হাসপাতালের মূল ভবন) অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে রূপান্তর করা হয়। যুদ্ধের পরে ১৯৪৬ সালে সেখানেই গড়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরপর বিভিন্ন সময় ভবনের কিছু অংশ বর্ধিত হলেও কলেজটির অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। 
গতকাল রাজধানীর বকশীবাজার-সংলগ্ন কলেজের একমাত্র হলে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের ছাদের বড় বড় পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি পিলারগুলোও ফেটে ভেতরের কংক্রিট বেরিয়ে এসেছে। 
ছাত্রদের ডা. ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনে মূলত এমবিবিএসের ছাত্ররা থাকেন। ভবনটিতে ১২০টি কক্ষ রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডা. ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনের চারতলাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেখানে শিক্ষার্থীরা থাকেন না। চারতলায় ৩০টির মতো কক্ষ রয়েছে। ফলে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো সুষম 
ব্যবস্থা হয়নি।  

হলের ভেতরে এ, বি, সি ব্লক ভবনে জ্যেষ্ঠ ছাত্র এবং ডা. মিলন ইন্টার্নি হোস্টেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্টার্ন ছাত্ররা থাকেন। সেই ভবনগুলোর অবস্থাও ভালো না। অন্যদিকে, ছাত্রীদের ডা. আলীম চৌধুরী হলেরও একই হাল। ১৯৫০ সালে নির্মিত পুরোনো এ হলটিতে সাড়ে ৫০০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। 
কলেজের ইন্টার্ন ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিগত সময়ে কলেজের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। ফলে পুরো কলেজের ভবনেরই অবস্থা ভালো নয়। সবগুলো ভবন পুরোনো। 
বর্তমান চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র (কে-৭৯) আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি সমকালকে বলেন, অনেকে হলে থাকে না নিয়মিত। তবে ওয়ার্ডে ডিউটি করতে হয় সেজন্য সবাই হলে বেড রাখে। তাই সবাইকে আবাসন সুযোগ দিতে হয়। নতুন ব্যাচের জন্য গণরুমের আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি। 
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভায় আমরা প্রতিটি দাবি নিয়ে কথা বলেছি। যেহেতু দাবিগুলো রাতারাতি বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তাই আমরা বাস্তবায়নের জন্য রূপরেখা চেয়েছি। তারা বলেছেন, সামনে সরকার মেডিকেলের জন্য যে কাজ করবে, এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বসব। ছাত্রদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা ক্লাসে ফিরব। 

কয়েক বছর আগে কলেজ এবং হাসপাতালের আমূল সংস্কারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে ঢামেকের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারের আর্থিক সংকটে প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তবে প্রবল ঝুঁকি থাকার পরও হলের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, কলেজ এবং হাসপাতালের একটি অবকাঠামো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি একনেকে পাস হয়নি। এই মহাপরিকল্পনার কারণে অন্য কোনো বড় সংস্কারও ঢাকা মেডিকেল কলেজে হয়নি। যার কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এ দুর্দশা চলছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ