৭ দিনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি ১৫ দিনেও
Published: 7th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ১৫ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গত ২২ এপ্রিল এই কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এই সপ্তাহেও প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। এখন চার সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। কমিটিতে নতুন করে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের যুক্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। রাখা হবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম নগরের অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে গত ৬ বছরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নগরের হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৪ ঘণ্টা পরে পরদিন সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে নগরের চাক্তাই খাল থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
এভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা তদন্তে এর আগে কোনো কমিটি গঠন করেনি নালা ও খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ‘সিটি করপোরেশন-সিডিএ: খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন গত ২১ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন ছাড়া তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতিখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মহিউদ্দিন মুরাদ এবং সদস্যসচিবের দায়িত্বে আছেন প্রকৌশলী মো.
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, খালে পড়ে কী কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তা মোটামুটি সবাই জানেন। ওখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য তা খুলে নেওয়ায় খালের পাশটি অরক্ষিত হয়ে যায়। এতে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি খালে পড়ে যায়। কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে যাতে আর কারও মৃত্যু না হয় এবং এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে অরক্ষিত খাল ও নালা-নর্দমাগুলো টেকসই ও স্থায়ীভাবে সুরক্ষিত করার পথ খুঁজছেন। এ জন্য কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের যুক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চুয়েটকে চিঠি দেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়ার কারণে প্রতিবেদন জমা দেওয়া যায়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, বিশেষজ্ঞ সদস্যদের পরামর্শে কার্যকর সুপারিশ দেবে কমিটি। যাতে এসব সুপারিশ সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও ওয়াসাসহ সেবা সংস্থাগুলো উন্নয়নকাজ পরিচালনার সময় অনুসরণ করে। এগুলো সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে অন্তত আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
চট্টগ্রাম নগরের নালা ও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দায়ভার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএর। সংস্থা দুটির হাতে নগরের ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালার দায়িত্ব। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে খালে পড়ে, যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে সিডিএ। সেখানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে সংস্থাটি। ২০১৮ সাল থেকে নগরের ৩৬ খাল ও বড় নালাগুলোয় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিডিএ। এ কাজ এখনো চলমান। আর নালায় পড়ে যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেগুলো সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চশমা খালে পড়ে মুহূর্তে তলিয়ে যায় সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি এই ঘটনার জন্য সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করেছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের হাত থেকে ১৪ মামলার আসামি ছিনতাই
ঠাকুরগাঁও পুলিশের গ্রেপ্তার করা ১৪ মামলার এক আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে একদল লোক; শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যরাও মারধরের শিকার হয়েছেন।
বুধবার (৮ মে) রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
৪৮ বছর বয়সি আসামি শাহজাহান আলী পাশের গ্রাম আরাজি পাইকপাড়ার শামসুল হকের ছেলে। মাদক, প্রতারণাসহ প্রায় ১৪টি মামলার আসামি তিনি।
আরো পড়ুন:
প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রেমিক গ্রেপ্তার
সীমান্ত এলাকার এসপিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ আইজিপির
পুলিশ বলছে, ঠাকুরগাঁও সদর থানার এএসআই মাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের চার সদস্য মাদারগঞ্জ এলাকায় আসামি শাহজাহানকে ধরতে অভিযান চালান। তারা শাহজাহানকে ধরে ফেলেন। তবে হঠাৎ আশপাশ থেকে কিছু লোক এসে পুলিশের হাত থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের চার সদস্য মারধরের শিকার হন। তবে থানা থেকে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি সারোয়ার খান বলেন, “অভিযানে পুলিশ সদস্য কম থাকায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যথেষ্ট পুলিশ সদস্য থাকলে আসামি ফসকে যাবার সুযোগ ছিল না। সেই আসামিকে ধরার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি দ্রুতই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।”
ঢাকা/হিমেল/রাসেল