সেন্ট্রাল মিডফিল্ডই শমিত সোমের পছন্দের পজিশন! যে পজিশনে খেলতে বেশি অভ্যস্ত তিনি। গতকাল ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি শমিতকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র দেওয়ার পরই তাঁকে ঘিরে দেশের ফুটবলে নতুন করে আলোচনার শুরু।

বাংলাদেশের জার্সিতে কোন পজিশনে খেলতে পারেন শমিত, সেটা কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে। যদি শমিতের চাওয়া গুরুত্ব দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে দেখা যাবে তাকে। এমনটা হলে নিয়মিত জায়গা পাওয়া দুই সোহেলের সাইডবেঞ্চেই কাটাতে হবে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়।

আরও পড়ুনশমিত এখন বাংলাদেশের, জুনে খেলবেন হামজার সঙ্গে১৫ ঘণ্টা আগে

বর্তমানে বাংলাদেশের হয়ে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পজিশনে কখনো সোহেল রানা, আবার কখনো মোহাম্মদ সোহেল রানাকে বেশির ভাগ সময়ই খেলতে দেখা যায়। যদিও জাতীয় দলে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার আছেন আরও দুজন—মজিবুর রহমান ও চন্দন রায়। বসুন্ধরা কিংসের এই চারজনের পজিশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হতে পারে কাবরেরাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে মজিবুর ও চন্দনকে ভিন্ন পজিশনে খেলিয়েছেন কোচ। সর্বশেষ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে রাইট উইংয়ে খেলতে দেখা যায় মজিবুরকে। যদিও ১৮ বছর বয়সী চন্দন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে বেশি খেলেছেন। তবে সেটা ম্যাচের শুরু থেকে নয়, বদলি হিসেবে নেমে।

শমিতের পছন্দের পজিশন সেন্ট্রাল মিডফিল্ড.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সহকারীরাই রোগী ভাগান ক্লিনিকে

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালটি জেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের লাখো মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল। এই হাসপাতালে সেবা নিতে এসে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কিছু চিকিৎসকের স্বেচ্ছাচারিতা, তাদের সহকারী নামের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের দালালের কারণে পদে পদে নাজেহাল হতে হয় রোগীদের। অভিযোগ রয়েছে, এখানে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এসব অচল দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে রোগী পাঠানো হয়। এর বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে কমিশন নেন চিকিৎসক ও দালালরা।

হাড়ের সমস্যা নিয়ে ২৮ এপ্রিল সকালে এই হাসপাতালে আসেন সালমা আক্তার। টিকিট কাটার পর তাঁকে ২১০ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুপুর ১২টার পর আসেন ওই কক্ষের চিকিৎসক অর্থোপেডিক্স বিভাগের আকরাম এলাহী। সালমার অভিযোগ, ওই চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে আসার আগে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রোগীদের সময় দেন। যে কারণে সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শরীর খারাপ নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। চিকিৎসাসেবার এই অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্টের দিকে কেউ তাকায় না, কেউ খোঁজও নেয় না। অবহেলা আমাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর হাসপাতালের ৫০০ মিটার দূরত্বে শহরের চৌরঙ্গীতে অবস্থিত হাজী শরীয়তউল্লাহ জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন ডা. আকরাম এলাহী। ওই প্রতিষ্ঠানটির অংশীদারও তিনি। তাঁর তিন সহকারী আতাউর মাদবর, রায়হান ও সুজন মিয়া হাসপাতালেই থাকেন। তারা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দিলেই ফুসলিয়ে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। 

হাসপাতালেই পরীক্ষার টাকা আদায়

রোগীরা অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসক আকরাম এলাহী হাসপাতালে বসেই রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। এমনকি নিজের পছন্দের ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাপ দেন। এপ্রিলের শুরুর দিকে স্ত্রী মানসুরাকে নিয়ে চিকিৎসক আকরাম এলাহীর কাছে যান সদরের আংগারিয়ার বাসিন্দা নুরুল হক। তাঁর ভাষ্য, ডাক্তার এক্স-রে এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য লেখেন। তিনি সরকারি হাসপাতালে বসেই নির্ধারিত ক্লিনিকে যেতে বলেন। পরীক্ষার জন্য ৩ হাজার টাকাও দাবি করেন। নুরুল হক অনেক কাকুতি-মিনতি করে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন। ওই টাকা হাসপাতালের কক্ষেই এক সহকারীর কাছে দেন। 

সুবর্ণা আক্তার নামের আরেক নারীকে নিয়ে ২৮ এপ্রিল একই চিকিৎসকের কাছে আসেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ব্যান্ডেজের কথা বলে ডা. এলাহী সরকারি হাসপাতালেই ১ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন। এখানে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে এসে নানাভাবে হয়রানির শিকারও হয়েছেন। 

সমকালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২ নম্বর কক্ষে ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে সহকারী হিসেবে থাকেন মোজ্জাম্মেল মিয়া, ২০৫ নম্বর কক্ষের চিকিৎসক লিমিয়া সাদিয়ার সঙ্গে শিখা আক্তার, ২০৬ নম্বর কক্ষের ডা. লিজা সামাদের সঙ্গে লাবণ্য আক্তার সহকারী হিসেবে থাকেন। এ ছাড়া জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমিত সেনের সঙ্গে নাসির উদ্দিন নামের এক সহকারী থাকেন। প্রায় সব চিকিৎসকের সঙ্গেই এমন দু-একজন সহকারীকে সার্বক্ষণিক দেখা যায়। তারা রোগীদের কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। এর বাইরেও সক্রিয় রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। তারা রোগীদের বোঝান, কোথায় গেলে কম খরচে পরীক্ষা হবে, কোথায় গেলে দ্রুত রিপোর্ট মিলবে। প্রতিটি রোগী পাঠানোর বিনিময়ে দালাল ও চিকিৎসকের সহকারীরা নির্দিষ্ট হারে টাকা পেয়ে থাকেন। কেউ ২০ শতাংশ, কেউ আবার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। যে ক্লিনিক বেশি কমিশন দেয়, দালাল ও সহকারীরা এসব ক্লিনিকেই বেশি রোগী পাঠান।

যেসব ক্লিনিকের দালাল সক্রিয়

এই হাসপাতালে সক্রিয় দালালদের মধ্যে মনি মুক্তা, নিপা আক্তার, সোনিয়া আক্তার, হালিমা বেগম, মিহির খান, মুক্তা আক্তার, সালমা বেগম, মাছুম মিয়া, পিংকু তালুকদার, সুজন ঢালী, কেয়া বেগম ও জসিম উদ্দিনের নাম কয়েকদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

রোগীর স্বজনরা জানান, এসব দালাল রোগীদের নিজ নিজ পছন্দের ক্লিনিকে নিতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু করেন। তারা শহরের পালং মেডিকেল সেন্টার, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মক্কা জেনারেল হাসপাতাল, নিউ পপুলার হাসপাতাল, শাহজালাল মেডিকেল সেন্টার, সিটি আধুনিক হাসপাতাল, ডক্টরস পয়েন্ট, নিউ মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এম এ দাউদ জেনারেল হাসপাতাল, শরীয়তপুর নার্সিং হোমসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী নেওয়ার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালের সামনে বসে থাকেন। 

যেখানে রোগী পাঠান সহকারীরা 

২০২ নম্বর কক্ষের চিকিৎসক নজরুল ইসলামের সহকারী মোজ্জাম্মেল মিয়া বেশি রোগী পাঠান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ২০৫ নম্বর কক্ষের ডা. লিমিয়া সাদিয়ার সহকারী শিখা আক্তারের পাঠানো রোগীদের গন্তব্য কেয়ার ৯৮ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমিত সেনের সহকারী নাসির উদ্দিন পাঠান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। 

এ ছাড়া ডা. রোকসানা বিনতে আকবরের সহকারী মিতু আক্তার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, ডা. কাইয়ুমের সহকারী সজিব মিয়া ও ফরহাদ মিয়া মক্কা জেনারেল হাসপাতালে, ডা. হোসনে আরা রোজীর সহকারী দোলা বেগম নিপুণ ক্লিনিকে, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রাজেশ মজুমদারের সহকারী লাবণী আক্তার ও ফাতেমা আক্তার সিটি আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে বেশি রোগী পাঠান। এ ছাড়া মেডিসিন বিভাগের ডা. কনক জ্যো মণ্ডলের সহকারী রানা মিয়া নিপুণ ক্লিনিকে রোগী পাঠান বলেও জানা গেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসকদের সহকারী বা ক্লিনিকের দালালদের বেশির ভাগই কথা বলতে রাজি হননি। শিশু বিশেষজ্ঞ রাজেশ মজুমদারের সহকারী লাবণী আক্তারের দাবি, ‘আমি সিটি আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করি। স্যার যখন সদর হাসপাতালে রোগী দেখেন, তখন তাঁর সঙ্গে থাকি। তাঁর কাগজপত্র আনা-নেওয়া ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করি। আমার বেতন হয় সিটি আধুনিক হাসপাতাল থেকেই।’ তিনি ওই হাসপাতালে রোগী নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। 
ডা. লিমিয়া সাদিয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য ও সহযোগিতার জন্য নিজ খরচে সহকারী রেখেছি। সে কোন ক্লিনিকে রোগী পাঠায়, সে বিষয়ে জানা নেই। যদি সে রোগী পাঠিয়ে থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ডা. আকরাম এলাহী অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘সদর হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে আমরা অনেক সময় বাইরে থেকে ব্যক্তিগত সহকারী দিয়ে কাজ করাই।’ তিনি সরকারি চেম্বারে বসে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পছন্দের ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক গরিব ও দুস্থ রোগী আসেন। যেসব ক্লিনিক কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, আমরা রোগীদের সেই ক্লিনিকগুলোই সাজেস্ট করি।’

নানা সভায় দালালদের বিষয়ে আলোচনা হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে স্বীকার করেন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। কিন্তু আমরা না থাকলে দালালরা আবার ফিরে আসে। কিছু দালালের নাম ও মোবাইল নম্বর থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে।’ 

তিনি আশা করছেন, পুলিশ দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া হাসপাতালের পক্ষে দালাল নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবে না। বেসরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দালালদের সহায়তা না করতে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের কোনো চিকিৎসককে সহকারী হিসেবে কাউকে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কেউ রাখতে চাইলে তাঁকে নিজের খরচে রাখতে হবে।’ ডা. আকরাম এলাহীর বিরুদ্ধে হাসপাতালে টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগ তারা পাননি। কেউ লিখিত দিলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ