দেশে প্রায় ৭ লাখ মানুষ অন্ধত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন। তাঁদের ৮০ শতাংশ ছানির কারণে চোখে দেখতে পান না। বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেকেই ছানি সমস্যায় ভোগেন। আমাদের চোখ ক্যামেরার মতো। এতে স্বচ্ছ লেন্স থাকে যাতে আলো পড়ে। সেখান থেকে রেটিনা হয়ে মস্তিষ্কে আলো যায় বলে আমরা দেখতে পাই। এই লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে গেলে তাকে ছানি পড়া বলে।
কারা ঝুঁকিতে
ছানি মূলত বয়সের কারণেই হয়। তবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নির্দিষ্ট বয়সের আগেই ছানি পড়ে। আঘাতের কারণে লেন্সের অবস্থান পাল্টেও ছানির সমস্যা হতে পারে। শিশুদের জন্মগত ছানি থাকতে পারে। কিছু হরমোনজনিত রোগের কারণেও ছানির সমস্যা হয়। ওয়েল্ডিং বা বিকিরণ এলাকায় কাজ করেন, এমন ব্যক্তির ছানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন চোখের সংক্রমণ, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি, সূর্যের অতিরিক্ত তাপ বা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে কাজ করা এবং ভিটামিনের ঘাটতিও চোখে ছানি পড়ার কারণ হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
ঝাপসা দেখাই ছানির প্রধান লক্ষণ। অনেকে আলোর চারধারে রংধনুর মতো দেখেন। কখনো কখনো ছানির ফলে চোখে পানি জমে। আবার অনেকে সব জিনিস দুটো দেখেন। এটাও চোখে পানি জমে হয়। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চশমা ব্যবহার করছেন, তাঁরা হঠাৎ চশমা ছাড়াই কাছের জিনিস পরিষ্কার দেখছেন বলে মনে হয়। এটাও কিন্তু ছানির একটা লক্ষণ।
চিকিৎসা কি কেবল অস্ত্রোপচার
দ্রুত অপারেশন অর্থাৎ অস্ত্রোপচার না করলে জটিলতা হতে পারে। ছানি ফেটে যায়, মানে হাইপার ম্যাচিওর হয়ে ক্যাপসুলের ভেতরে লিক (ছিদ্র) করতে পারে। ফলে চোখের প্রেশার বেড়ে জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হয়। এর ফলে চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারাতে হতে পারে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে লেন্সের মধ্যে পানি জমে লেন্স ফুলে যেতে পারে। কোনো ওষুধ দিয়ে ছানির চিকিৎসা হয় না। ছানির একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। যদি অন্য সমস্যা না থাকে (বিশেষ করে রেটিনা ও ভিট্রিয়াসে) তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ছানি অপসারণের পর কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়; যা আগের স্বচ্ছ লেন্সের মতোই কার্যকর।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ছানির অস্ত্রোপচার অনেক কম সময়ে করা সম্ভব। এর একটি স্মল ইনসিশন যা এসআইসিএস নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে মাত্র পাঁচ-ছয় মিলিমিটার কেটে, তার ভেতর দিয়ে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। আরেকটি হলো ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন পদ্ধতি। এটি আরও আধুনিক পদ্ধতি, যাতে আরও অল্প কেটে তার মাধ্যমে ফ্যাকো মেশিন ব্যবহার করে ছানি অপসারণ ও কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়।
অধ্যাপক ডা.
সৈয়দ এ কে আজাদ: চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল রাজী হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুসারে, মানব উন্নয়ন সূচকে এবার ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। এর আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছিল ১৩১তম।
মাথাপিছু আয়, শিক্ষা এবং জন্মের সময় প্রত্যাশিত গড় আয়– এই তিনটি প্রধান সূচকের ওপর ভিত্তি করে মূলত হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) গণনা করে থাকে ইউএনডিপি। এবারের তথ্য-উপাত্ত ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। এর আগে প্রতিবেদনটি ছিল ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে।
ইউএনডিপির এবারের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৭ বছর। গড় স্কুল শিক্ষা ৬ দশমিক ৮ বছর। ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর মানব উন্নয়ন সূচকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও দরিদ্র ৪০ ভাগ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২০ দশমিক ৪ শতাংশ আয়। ধনী ১০ ভাগ মানুষের কাছে আছে ২৭ দশমিক ৪ ভাগ আয়। সর্বোচ্চ ধনীদের ১ শতাংশের হাতে আছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ আয়।
প্রতিবেদনে থাকা দেশগুলোকে মানব উন্নয়নের ভিত্তিতে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– অতি উচ্চ, উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন পর্যায়ের মানব উন্নয়ন। মাঝারি মানব উন্নয়ন ক্যাটেগরিতে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতও এবার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৩০তম অবস্থানে আছে। এর আগের প্রতিবেদনে ভারত ছিল ১৩৩তম স্থানে।