ভ্রমণ ক্লান্তি কাটাতে গতকাল বুধবার সারাদিন বিশ্রামে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গতকাল খোশমেজাজে সময় কাটিয়েছেন তিনি।

দলের নেতাদের কেউ গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন– এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে উৎসাহী কর্মী অনেককে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে গিয়ে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।

দলের একাধিক নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডন থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও চার মাস লন্ডনে ছিলেন। তাঁর দেশে ফেরা এবং শারীরিকভাবে তুলনামূলক সুস্থতা নেতাকর্মীকে স্বস্তি দিয়েছে; তাদের উৎফুল্ল করেছে। তাঁর এই উপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য দলের চলমান লড়াইয়ে নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে বলেও মনে করছেন নেতারা। দেশে তাঁর উপস্থিতি দলের জন্য আশীর্বাদ।

নেতাকর্মী মনে করছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর মতো সর্বজনগ্রহণযোগ্য নেতা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যেটি এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামীর রাজনীতিতে তাঁর দিকনির্দেশনায় দল ও দেশ উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করেন নেতাকর্মী। আবার বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত পথজুড়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে খালেদা জিয়াও মানসিকভাবে তৃপ্তি বোধ করছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, চিকিৎসকরা নিয়ম করে বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসছেন। তিনি ভালো আছেন, বিশেষ করে তাঁর মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, তাঁকে একটানা বসে না থেকে কিছুটা হাঁটা-চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলে। চার মাস পর গত মঙ্গলবার দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। 

পারিবারিক সূত্র জানায়, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা.

জোবাইদা রহমান তাঁর বাবার বাসা ধানমন্ডিতে থাকছেন। আরেক পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমকালকে বলেন, ‘মাঝে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিহিংসা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও তিনি এই রাজনীতির জন্য, দেশের গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কারা নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আর আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণতায় দেশে আবারও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।’

৫ আগস্ট-পরবর্তী বাস্তবতায় মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রথম ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলসংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এর আগে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তিনি সিলেট সফর করেছিলেন। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি বন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন ত ত র ক রহম ন ন ত কর ম র জন ত র জন য ব এনপ করছ ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দলীয়করণ করলে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে: জাহিদ হোসেন

আওয়ামী লীগের মতো দলীয়করণ করা হলে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তাঁরা শহীদ হয়েছেন জাতির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জাহিদ হোসেন এ কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনারা আবু সাঈদ, মুগ্ধ অথবা ওয়াসিমের কথা বলেন; কিন্তু আমাদের সব শহীদের কথা বারবার বলতে হবে। শহীদদের যদি আপনারা ওই আওয়ামী লীগের মতো দলীয়করণ করেন, শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে। এঁরা শহীদ জাতির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।’

এ সময় আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের ইতিহাস ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমকে মনে রাখতে হবে। ১৭ বছরের ইতিহাসকে ভুলে গেলে কোনো অবস্থাতেই জুলাই-আগস্টের লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

বিএনপির নেতা জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ’৪৭ না হলে ’৬৯ হতো না; ’৬৯ না হলে ’৭১ হতো না; ’৭১ না হলে ’৯০ আসত না। আর ’৯০ না আসলে ২৪–এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান হতো কি না, বিরাট বড় প্রশ্ন থেকে যায়। তাই যাঁর যা অবদান, তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এবং তাঁদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে।

দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তাঁদের পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়ারও দাবি জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, জনগণ যাকে ভালো মনে করবে, তাকে গ্রহণ করবে। যাকে ভালো মনে করবে না, তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের সমালোচনা প্রসঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। সমালোচকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেক দিন যমুনাতে (প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন) যান। যমুনা থেকে বের হওয়ার পরে আপনারা আপনাদের মতো বলেন আর প্রেসসচিব তাঁর মতো করে প্রেস ব্রিফিং করেন। এটার মধ্যে কোনো দোষ নেই; কিন্তু দোষ তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে ড. ইউনূস সাহেবের মিটিংয়ের পরে প্রেস ব্রিফিংটা কেন হলো?’

প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর দেশে অনেক ধরনের বিশৃঙ্খলা কমে গেছে এবং শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন।

ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমদের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শামছুল আলম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরো একটি প্রজন্ম সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে: আসিফ মাহমুদ
  • সরাসরি: যুদ্ধ কখনোই গণতন্ত্র নিয়ে আসে না: ইরানের নোবেলজয়ী নার্গিস
  • রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে
  • লন্ডন বৈঠক নিয়ে শরিকেরা সন্তুষ্ট: আমীর খসরু
  • সংবিধানে ‘গণতন্ত্র’ থাকলে আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাসও থাকতে হবে: ইসলামী আন্দোলন
  • সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ
  • বিশ্বকে বদলে দিতে চাই
  • আমরা আসলে কেমন রাষ্ট্রপতি চাই
  • দলীয়করণ করলে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে: জাহিদ হোসেন
  • দারিদ্র্য থাকলে গণতন্ত্র আসবে না