বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ‘গুমের’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলার ১৩ বছর পর মামলা
Published: 8th, May 2025 GMT
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ‘গুম’ হওয়ার পর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রতিবাদী মিছিলে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার ১৩ বছর পর করা এ মামলায় ১০৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ২০০-৩০০ জন।
গত মঙ্গলবার মামলাটি করেন বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান (৪৭)। তবে বিষয়টি গতকাল বুধবার রাতে জানাজানি হয়। সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এ মামলা করা হয়েছে বলে বাদীর আইনজীবী হাসান আহমেদ পাটোয়ারী প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত ঘটনায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে আদালত আগামী সাত দিনের মধ্যে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) একটি প্রতিবেদন আদালতে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এ ছাড়া বিশ্বনাথ পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহিবুর রহমান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া, বিশ্বনাথ থানার তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ ও পরিদর্শক (তদন্ত) চাঁন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখকে আসামি করা হয়।
বাদী এজাহারে নিজেকে কৃষক এবং বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলীকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম করে। এর প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালান। একই সময়ে পুলিশ সদস্যরাও মিছিলকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকারের পতনে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশে আইনের শাসনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় ন্যায়বিচারের সুযোগ উন্মোচিত হওয়ায় মামলাটি করা হয়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে ‘গুম’ করে। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় তাঁর উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথে। হরতাল চলাকালে পুলিশের সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া বিএনপি ও ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’ একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করেছিলেন ইলিয়াস। এই নেতা জয়ী হয়েছিলেন দুইবার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বন থ উপজ ল আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থামছে না। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে ডেঙ্গুতে ২৯ জনের মৃত্যু হলো।
আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত বুধবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৭১ জন। দুই সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৮৮। ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৭৬ হাজার ২৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৮৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে মারা গেছেন ৮০ জন, যা চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোনো এক মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গত মাসে ডেঙ্গু নিয়ে সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৫২০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন।
চলতি বছরের জুনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ওই সময় অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বড় আকারের হতে পারে। কিন্তু সরকার ডেঙ্গু প্রকোপ কমাতে তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জুনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। আগস্টে মৃত্যু ও সংক্রমণ সামান্য কমে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। অক্টোবরে প্রায় সাত হাজার রোগী বেড়েছে।
২০০০ সালে ঢাকায় বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা যান ৯৩ জন। ঘটনাটি সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ছিল। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ও মারা যান ২০২৩ সালে। সে বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখের বেশি মানুষ। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।