ভারতের হামলায় বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, আমরা আমাদের নিরপরাধ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেব।’

গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। বিবিসির সর্বশেষ তথ্য, ভারতের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে পাকিস্তান।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। ওই ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের হাত ছিল দাবি করে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দেয়।

এ নিয়ে অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার পর পাকিস্তানের ছয় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ৯টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী।

তবে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ভারতের তিনটি রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।

পেহেলগামের ঘটনায় অব্যাহত উত্তেজনা চলার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ৯টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তান বলছে, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের ঊর্ধ্বতন একটি সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিজ ভূখণ্ডে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কয়েকটি সেনাচৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান।

রাতে ভারতের হামলার পর গতকাল বুধবার সকালে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গোলাবর্ষণের পর কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে ধোঁয়া। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলির খবর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্বীকার

ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির খবর প্রচার করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সীমান্তে গুলি ছুড়ে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

তবে এ খবর অস্বীকার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী গতকাল মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এলওসির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।

এই বিবৃতির আগে হিন্দুস্তান টাইমস, পিটিআইসহ ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণাঘাটি সেক্টরে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঞ্চ এলাকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো যাচ্ছে যে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কোনো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গত এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ ভারতীয় পর্যটককে গুলি করে হত্যার ঘটনার জেরে মে মাসে দুই প্রতিবেশী দেশ সংঘাতে জড়িয়েছিল। চার দিন ধরে চলা সংঘাতে উভয় পক্ষেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে উভয় পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ষষ্ঠ দিনের মতো গোলাগুলি৩০ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনকীভাবে ভারত–পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্ত হয়ে উঠল১৯ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলির খবর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্বীকার