শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে: শাহবাজ শরিফ
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারতের হামলায় বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, আমরা আমাদের নিরপরাধ শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেব।’
গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। বিবিসির সর্বশেষ তথ্য, ভারতের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে পাকিস্তান।
গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। ওই ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের হাত ছিল দাবি করে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দেয়।
এ নিয়ে অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার পর পাকিস্তানের ছয় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ৯টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী।
তবে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ভারতের তিনটি রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
পেহেলগামের ঘটনায় অব্যাহত উত্তেজনা চলার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ৯টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তান বলছে, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের ঊর্ধ্বতন একটি সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিজ ভূখণ্ডে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কয়েকটি সেনাচৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান।
রাতে ভারতের হামলার পর গতকাল বুধবার সকালে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গোলাবর্ষণের পর কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে ধোঁয়া। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সমরসজ্জা সংঘাতের শঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০১৯ সালে মুখোমুখি সংঘাতের পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) সীমিত সংঘাত হয়েছে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। নয়াদিল্লির দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। উত্তেজনা বাড়ছে।
সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘কল্পনাতীত’ শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মোদি এরই মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যেন তারা পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে।
পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। দেশটি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবারের পর গতকাল সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। দুই দিন ধরে টান টান উত্তেজনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কাশ্মীরে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনার বর্ষপূর্তিতে ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’–এর স্মরণে আয়োজিত বিমান প্রদর্শনী দেখছে মানুষ। করাচিতে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০