নড়াইলে ‘চাচাতো ভাইদের হামলায়’ আহত একজনের মৃত্যু
Published: 8th, May 2025 GMT
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় হামলায় আহত এক কৃষক মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রামে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরিবারের অভিযোগ, চাচাতো ভাই ও ভাতিজারা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন।
মৃত সৈয়দ টোকন আলীর (৬০) বাড়ি করফা গ্রামে। তিনি পেশায় কৃষক। এ ঘটনায় আহত টোকনের দুই ছেলে সৈয়দ রাজু ও সৈয়দ রুবেল এবং এক পুত্রবধূ লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
মৃত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, গতকাল বিকেলে টোকন আলীর বাড়ির ওপর দিয়ে ভ্যান নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলেরা। এ সময় তাঁদের ভ্যান নিতে নিষেধ করেন টোকনের স্ত্রী। তখন টোকনের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর কিছু সময় পর টোকন ও তাঁর দুই ছেলে রাজু এবং রুবেল মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরলে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান টোকনের চাচাতো ভাই ফেরদৌস, রিজ্জাক, এরদাউস ও ভাতিজা রহিম, করিম, রহমত, হৃদয় আলীসহ বাড়িতে থাকা ধান কাটার শ্রমিকেরা। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেন টোকন, তাঁর দুই ছেলে এবং এক পুত্রবধূকে। পরে স্বজন ও স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রাতে টোকনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক তাঁকে অন্যত্র নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর টোকনকে প্রথমে যশোর ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ দুপুর ১২টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সবাই এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুই পরিবারের মধ্যে জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছে। গতকাল বিকেলে বাড়ির ওপর দিয়ে ভ্যান নেওয়ায় টোকনের স্ত্রীর সঙ্গে ফেরদৌসদের পরিবারের সদস্যদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। সন্ধ্যার পর বাড়ি এসে ঘটনা শুনে ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে টোকন চাচাতো ভাইদের কাছে যান বিষয়টি জানতে। এ সময় ফেরদৌসদের হামলায় টোকনসহ তাঁদের পরিবারের চারজন এবং ফেরদৌসদের পরিবারের একজন আহত হন। টোকনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। আজ তিনি মারা গেছেন।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র ল হ গড় উপজ ল র ওপর অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ