চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী মানুষের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। বিশেষ করে কাশ্মীরের দুই অংশের মানুষ রয়েছে ব্যাপক আতঙ্কে। উপত্যকার ভারতীয় অংশে পুঞ্চ ছেড়ে এরই মধ্যে কয়েকশ মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। যে কোনো হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে কয়েকটি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বিশেষ করে পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কয়েকটি শহরে সন্ধ্যার পর ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সাইরেন বাজিয়ে চলছে প্রস্তুতি।

আগামী রোববার হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) একটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে। ভারতের ড্রোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম। সেখানে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) গতকালের ম্যাচটি করাচিতে অনুষ্ঠিত হবে। 
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলের তৈরি ড্রোন দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি ভারতীয় ড্রোন’ তারা ভূপাতিত করেছে। ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের এক বেসামরিক নাগরিক নিহত ও চার সেনা আহত হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সফট-কিল ও হার্ড-কিল পদ্ধতিতে ইসরায়েলের তৈরি এসব ‘হেরোপ ড্রোন’ ভূপাতিত করা হয়েছে। এগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
 

সফট-কিল পদ্ধতি বলতে কারিগরি ও হার্ড-কিল বলতে অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তা তারার দাবি করেছেন, ভারতের হামলার পর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় তারা যে গোলাবর্ষণ করেছেন, তাতে ভারতের ৪০ থেকে ৫০ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। জিও নিউজ জানায়, গতকাল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। তবে ভারত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারত সরকারের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, পাকিস্তান বুধবার রাতে ভারতের অন্তত ১৫টি শহরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। সেগুলো ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাব, গুজরাট ও জম্মু-কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই বলছে, রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো হয়েছে। লাহোরে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করারও দাবি করেছে ভারত।

‘ভারতে পাল্টা আঘাত নিশ্চিত’
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারতের ড্রোন হামলার জবাবে পাল্টা হামলা নিশ্চিত হয়ে গেছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা নিরসনে কাজ করছে। তবে এখন উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা একেবারেই কম। সংঘাত অন্ধগলির দিতে এগোচ্ছে। 
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী পাকিস্তান আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। তিনি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানান। গত মঙ্গলবার রাতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হন। এর আগে বুধবার শাহবাজ বলেন, শহীদের প্রত্যেক ফোঁটা রক্তের হিসাব নেওয়া হবে। 

যেসব স্থানে ড্রোন ভূপাতিত করা হয়
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার খবর আসতে থাকে। দুপুরে পাকিস্তানের এক সামরিক মুখপাত্র জানান, ভারত আবারও সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে এবং লাহোর, গুজরানওয়ালা, চকওয়াল, অ্যাটক, রাওয়ালপিন্ডি, বাহাওয়ালপুর, মিয়ানওয়ালি ও করাচিতে ড্রোন পাঠিয়েছে। পাকিস্তান সেগুলো ধ্বংস করেছে। 
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ঘোটকি জেলার এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, সকালে ভারতীয় সীমান্ত থেকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে কেনজোতে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়। তখন কয়েকজন কৃষক মাটিতে বসে ছিলেন। একটি ড্রোন একজনের ওপর পড়লে তিনি নিহত হন। আরেক কৃষক আহত হয়েছেন। করাচির শরাফি গোথ এলাকাতেও একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া লাহোরের ওয়ালটন এলাকায় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। পাঞ্জাবের চকওয়াল জেলার দোহমানে মাঠে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যস্ত শহর রাওয়ালপিন্ডির একটি ফুড স্ট্রিটে আরেকটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে।

ভারতের সর্বদলীয় বৈঠক
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেছেন, অপারেশন সিঁদুরে ‘শতাধিক সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি বিরোধী দলগুলোর নেতাদের এ তথ্য জানান। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, অপারেশন সিঁদুরকে ‘চলমান অভিযান’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি। বৈঠকে রাজনাথ সিং জানান, ভারত এখন আর নতুন করে কোনো হামলা চালাতে চায় না। তবে পাকিস্তানের সেনা ভারতে আঘাত হানলে অবশ্যই জবাব দেওয়া হবে।
বৈঠকের পর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সবাই সরকারের পাশে আছেন। সর্বদলীয় বৈঠক খুব ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ পরিবেশে হয়েছে– জানিয়ে ভারতের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, বৈঠকে কেউ কোনো দোষারোপের রাস্তায় যাননি। ভারতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ সামরিক অভিযানের বিষয়ে ‘সার্বিক ঐকমত্য’ গড়ে তুলতেই এ বৈঠক ডাকা হয়।

ভারতের ২৫, পাকিস্তানের ৩ বিমানবন্দর বন্ধ
ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশ দুটির বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তানের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, করাচি, লাহোর ও শিয়ালকোট বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে ভারতের কমপক্ষে ২৫টি বিমানবন্দর ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, কার্যক্রম বন্ধ থাকার তালিকায় পাঞ্জাব, হিমাচল, রাজস্থান ও গুজরাট রাজ্যের একাধিক বিমানবন্দর রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটির তিন শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

গোলাবর্ষণের মুখে পুঞ্চ থেকে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার অসংখ্য মানুষ নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর তীব্র গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলার পর সীমান্তে গোলাবর্ষণ তীব্র আকার নিয়েছে। সোবিয়া নামের স্থানীয় এক নারী জানান, ‘আমি বিকট শব্দ শুনে আমার এক মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসি। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। 
সুফরিন আখতার নামে আরেকজন জানান, তাদের বাড়ির সামনে একটি গোলা আছড়ে পড়ার পর তিনি ও তাঁর পরিবার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি পাইনি। এজন্য নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে। আমি সারা পথ কাঁদছিলাম, অনেক গোলাবর্ষণ হচ্ছিল।’ 

শুধু সোবিয়া বা সুফরিনই নন, আরও বহু মানুষ গত দুই দিনে পুঞ্চ থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, পুঞ্চ ছাড়াও কুপওয়ারা, বারামুল্লা, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবানি, আখনুরসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোয় বিনা উস্কানিতে পাকিস্তান গুলিবর্ষণ করছে; তারা এর জবাব দিচ্ছেন। নতুন করে সংঘাতের কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি বসবাসকারী বেসামরিক মানুষ পড়েছে চরম দুর্দশায়। হতাহত হওয়ার পাশাপাশি তাদের সম্পদ ও গবাদি পশুর ক্ষতি হচ্ছে। কারফিউর কারণে কেউ স্কুল, হাসপাতাল ও বাজারে যেতে পারছেন না।

সীমান্তবর্তী রাজ্য রাজস্থান ও পাঞ্জাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে সন্ধ্যা থেকে ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করেছে প্রশাসন। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, গুরুদাসপুর জেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাতে সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 
পাকিস্তানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারত। দেশটির সীমান্তবর্তী সব এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনসমাবেশ, স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য গণপরিসর। সংবেদনশীল এলাকাগুলোয় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

উত্তেজনা কমানোর আহ্বান ইইউর, সরগরম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং আরও হামলা’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা উভয় পক্ষকে সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছে। 
এদিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বুধবার ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন দলের সদস্যরা এ অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাজ্যকে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী হামিশ ফ্যালকনার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের প্রতি আমাদের বার্তা– সংযম প্রদর্শন করুন। দ্রুত কূটনৈতিক পথ খুঁজে বের করতে সংলাপে অংশ নিন।’

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ প ত ত কর প রস ত ত ত হয় ছ দ শট র মন ত র গতক ল চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফুলের সংশয়

এই অবেলায়

ফুলের মাঝখানে মৃত মথ থেমে আছে

আচ্ছন্নতা, প্ররোচনা

এই দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাও

শিমুল একগুচ্ছ

ফুলেদের ঘুরবার অতীত জানা নেই

যেন-বা নিয়তি বিশেষ নয়

নয় হারানো প্রণয়মায়া শুধুই ফিরে পাওয়ার ভেতর

আরোহণ ও বিরাজনে কী নিখুঁত ছাপা ভেতর!

এই মায়া মন ভরে লিখতে চাই

অভ্যন্তর জগতের সব

মেঘমন্দ্র কোনো পুষ্পরেণু নয়

আমি তবে ভ্রমণে কেন রেখে আসি

সুনীল উৎকণ্ঠা আমার—

যে উৎকণ্ঠা আমাকে দৃশ্যের ব্যবধান শিখিয়েছিল

শিখিয়েছিল একমাত্র চোখই তো জলের সন্ধিস্থল

চোখ তারে কোরো না অনুসরণ

ভাবো সে-ও তো

পাতালের দিকে উড়ে চলা পাখি সুপ্রধান

একটি ফড়িং খেলা করে

সেখানে চোখ উড়ে গেল অনর্থক

অথচ গতি তারও নিচে থাকতে পারে

এক নিরাকার পরম সত্তার

দেব-দেবীদের পৃথিবীতে

ও আত্মা আমার; তুমি কি তবে

শাশ্বত ও চৈতন্যের কারণ

কেননা সংকেতের আদৃত জুড়ে ছড়িয়েছে যত

অন্তিমের বেদনাব্যস্ত বাতাস

লিপ্ত ধূলির পথ

অবসন্ন রথের রজনী

যেখানে কোনো জিজ্ঞাসা নেই

নেই সূর্যাস্তের নিচে চাপা পড়া কোনো ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ

তা বলাই বাহুল্য—বিচ্ছেদের ফুলগুলো বড় শীর্ণ

মুথাঘাসে একদল সান্ধ্য জোনাক

পৃথিবীর প্রথম বাতিটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল

শুধু তারার আলোর পূর্বাভাসকে উসকে দিতে

কী তাহাদের বিস্ময় জানা হয় নাই

আমি গাছে হেলান দিয়ে সম্পৃক্ত হতে গিয়ে জেনেছি

মানুষের মতো গাছেদের বেঁচে থাকার জীবনে

কোনো প্রেমিক–প্রেমিকা নাই

চন্দ্র—প্রতাপে যদিও জেনে গেছি

প্রেম একটা ফুলের সাথে একটা প্রজাপতির

নৈমিত্তিক ঘটনা

তবে আমার কী সাধ্য আছে

জমানো দ্বিধার কাছে স্বপ্ন–চাওয়া

যতটা সম্ভব মুছে যাক বিরহের সুর

ফুলেদের ভাষায় বিরহ হয়তো দৈব্য আঁধারে

বাতাসনির্ভর এক সফর—

সেই সফরে পরাগায়নের গান

না হয় থাকুক একটি একলিঙ্গ ফুলের কাছে

কিছুটা সম্মোহন

যে হারায় নিয়ে দ্বৈতবাদ

তার কী কথা! মৃত্যুমুখী সেই তো সুন্দর

এই যে ভাবছি, বলেই

বিম্বাধর ফল সুন্দর, আছে ব্যথা

কিন্তু আমি বলব অনেক গল্প জমে আছে

কামিনীগাছটার বিচ্যুত সন্ধ্যায়

শূন্যতায় কেবল শূন্যতা

কথা আকীর্ণ হয়ে যায় অলৌকিকতায়

আজ বাতাসে অ্যালকোহল

দীর্ঘ পথ উৎস আর ধারা

দুপুর তাই এমন

চঞ্চল পাতারাও মন ভরে বেড়ে উঠছে

যেন সমূহ দ্বার নীত সম্ভাষণ

যতটা দাবি করছি, ইচ্ছেরা তত

অপ্রত্যাশিত থেকে যাচ্ছে

থেকে থেকে মনে পড়ছে

আমার জন্য কী তবে স্মৃতিই যথেষ্ট

সাক্ষাতের দুনিয়ায় আল্লাহ মেহেরবান

মিথ ও মৃত্যুর মধুবন

অন্তঃসুরে চেনা সব গান

ঘুমের ভেতর এত আকর্ষিক হয় কেন?

দুচোখ বন্ধ এই দেহ জমিন

একটি মেরুন নক্ষত্রের চাহনিতে

আকাশে বাড়িয়ে রেখেছি হাত

যদি মেঘ হতো স্বর্ণলতা, নিদেনপক্ষে বাড়াতাম বুক

একটুর জন্য খুব কাছে যাবার অপেক্ষায়

আমি তার দায় এড়াতাম

আজ ফিরে যেতে থামি, দেখি

মেঘ বাড়িয়েছে শাবক এক হাত

মানুষ কেন সমুদ্রে যায়?

মানুষের আছে নাকি অবসর

চাঁদের আলোয় জোয়ার-ভাটায়

দূরে যে সুন্দরের কুঞ্জন

জলের নকশা আর অথির বিন্যাস

সেখানে পৃথিবীর কবে থেকে

অরুণ মাঝিরা জামার ভেতর আঁকতে শিখেছিল

কম্পন রেখার অভিজ্ঞান

যদি ধরি উওলোফ ভাষা

ভাষার ভেতর ততটা অতীত বর্তমান নেই

মেঘের ছায়া এসে থেমে আছে অবিচলতায়

এইসব বিবশ দুপুর

পাতার হরণে উড়োপাতাদের শ্রদ্ধা অশেষ

হাতের সিগারেট পুড়ে যায়

এতক্ষণে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছ তুমি

ভাবছ দুপুর দু প্রহর

তোমার হাতঘড়ি হৃদয়ের পাশে রেখে

কোন রাগ মুছে যায়

কোন তারা নিভে যায় সুষুপ্ততায়

নিদ্রা ভেঙে যদি দেখি ক্রান্তদর্শী চাঁদ

হে আশ্চর্য দরবার

মধ্যরাত চোখ তুলে তাকানো যাবে না

কারণ করুণানির্ভর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুলের সংশয়