সমালোচনা মোকাবিলা কারও জন্যই সহজ নয়। অন্যায় বা অশোভন সমালোচনা মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, এমনকি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও ফাটল ধরাতে পারে। তবে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই ক্ষেত্রে এক অপ্রতিম দৃষ্টান্ত। তিনি শুধু সমালোচনাকে ধৈর্য ও বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করতেন না; বরং তা থেকে ইতিবাচক ফলাফল অর্জনের পথও দেখিয়েছেন। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি কীভাবে সমালোচনার মুখে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে দয়া ও ন্যায়বিচার দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয় এবং কীভাবে মানুষের হৃদয় জয় করতে হয়। এই নিবন্ধে তাঁর জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার মাধ্যমে সমালোচনা মোকাবিলার শিক্ষা তুলে ধরা হলো।

নবীজির (সা.

) দৃষ্টিভঙ্গি

মহানবী (সা.) তাঁর নবুয়তের সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই সমালোচনা এসেছিল অবিশ্বাসীদের (মুশরিক, মুনাফিকসহ) থেকে এবং কিছুসংখ্যক মুসলিমের পক্ষ থেকেও। অবিশ্বাসীদের সমালোচনা প্রায়ই ছিল ভিত্তিহীন, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা অপবাদ, যা তাঁর হৃদয়ে ব্যথার সৃষ্টি করত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁর এই কষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই জানি যে তারা যা বলে, তা তোমার হৃদয়কে কষ্ট দেয়।’ (সুরা আল–হিজর, ১৫: ৯৭)

অন্যদিকে মুসলিমদের সমালোচনা ছিল ভুল–বোঝাবুঝি বা অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নবীজি (সা.)–এর প্রতিক্রিয়া ছিল ধৈর্য, ক্ষমা ও দূরদর্শিতার। তিনি কখনো ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনাকে গ্রহণ করতেন না এবং শুধু আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নেননি, যতক্ষণ না আল্লাহর সম্মান লঙ্ঘিত হয়েছে। তখন তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১২৬)

ঘটনা–১: ইহুদি রাব্বির সমালোচনা ও দয়ার প্রতিক্রিয়া

একবার ইহুদি রাব্বি জায়েদ ইবনে সুনআহ নবীজি (সা.)–এর কাছে তাঁর ঋণের টাকা দাবি করতে আসেন। তিনি অভদ্রভাবে নবীজি (সা.)–এর চাদর টেনে নামান এবং বলেন,‘তুমি, আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, দেরি করছ।’

 এই অশোভন আচরণে উমর (রা.) ক্ষুব্ধ হয়ে রাব্বিকে ধমক দেন এবং তলোয়ার দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। কিন্তু নবীজি শান্তভাবে হেসে উমর (রা.)–কে বলেন, ‘এ মানুষটি তোমার কাছ থেকে ভালো আচরণের অধিকারী। তোমার উচিত ছিল আমাকে সময়মতো ঋণ পরিশোধের পরামর্শ দেওয়া এবং তাকে ভদ্রভাবে তার দাবি জানানোর অনুরোধ করা।’

তিনি জায়েদকে জানান যে পরিশোধের সময়সীমা এখনো তিন দিন বাকি। এরপর উমর (রা.)–কে ঋণ পরিশোধ করতে ও উমরের আচরণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত ২০ মাপ দিতে বলেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৮৮৪)

এ ঘটনা থেকে আমরা শিখি যে নবীজি (সা.) অভদ্র সমালোচনার মুখেও শান্ত থাকতেন, প্রতিশোধের পরিবর্তে দয়া ও ন্যায়বিচার প্রদর্শন করতেন এবং পরিস্থিতি থেকে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করতেন। তাঁর এই আচরণ জায়েদের হৃদয়ে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়েছিল।

ঘটনা–২: আনসারদের অসন্তোষ ও হৃদয় জয়ের কৌশল

হুনাইনের যুদ্ধের পর নবীজি (সা.) যুদ্ধ–লব্ধ সম্পদ বণ্টন করেন। এই সম্পদের মধ্যে ছিল প্রায় ৬ হাজার বন্দী, ২৪ হাজার উট, ৪০ হাজার পশু ও ৪ হাজার পাউন্ড রুপা। তিনি নব্য মুসলিমদের, বিশেষ করে মক্কার কুরাইশদের বেশি অংশ দেন, যাতে তাদের হৃদয় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এই বণ্টনে আনসারদের কম অংশ দেওয়ায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করে। তারা মনে করে নবীজি (সা.) তাঁর আত্মীয়দের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন।

হজরত সা’দ ইবনে উবাদা (রা.) এই অসন্তোষের কথা নবীজি (সা.)–এর কাছে জানান। নবীজি (সা.) প্রথমে সা’দের নিজস্ব অবস্থান জানতে চান। সা’দ বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘আমি আমার কওমের একজন মাত্র।’

নবীজি (সা.) তখন আনসারদের একত্র করতে বলেন। তিনি তাঁবুতে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘হে আনসাররা, আমি শুনেছি তোমরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট। আমি কি তোমাদের পথভ্রষ্ট অবস্থায় পাইনি, আর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের হেদায়েত দেননি? তোমরা কি দরিদ্র ছিলে না, আর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের ধনী করেননি? তোমরা কি শত্রু ছিলে না, আর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের হৃদয়ে মিলন ঘটাননি?’

আনসাররা বলেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবচেয়ে দয়ালু ও মহৎ।’

নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা যদি বলতে, তাহলে সত্য বলতে, “তুমি আমাদের কাছে অবিশ্বাসী হয়ে এসেছিলে, আমরা তোমাকে বিশ্বাস করেছি; তুমি সাহায্যহীন হয়ে এসেছিলে, আমরা তোমাকে সাহায্য করেছি; তুমি বহিষ্কৃত হয়ে এসেছিলে, আমরা তোমাকে আশ্রয় দিয়েছি; তুমি দরিদ্র হয়ে এসেছিলে, আমরা তোমাকে সমৃদ্ধ করেছি।” হে আনসাররা, তোমরা কি সেই পার্থিব জিনিসের জন্য অসন্তুষ্ট, যা আমি কিছু লোককে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য দিয়েছি? তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে লোকেরা ভেড়া ও উট নিয়ে চলে যাবে, আর তোমরা আল্লাহর রাসুলকে তোমাদের বাসভূমিতে নিয়ে যাবে? আল্লাহর কসম, যদি হিজরত না হতো, আমি আনসারের একজন হতাম।’

রাসুল (সা.) শেষে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, আনসারদের, তাদের সন্তানদের ও তাদের সন্তানদের সন্তানদের ওপর করুণা কর।’

এই কথাগুলো শুনে আনসাররা অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে আমাদের ভাগ্য ও অংশ হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৩০)

এ ঘটনা থেকে আমরা শিখি যে নবীজি (সা.) সমালোচনার মুখে তিরস্কারের পরিবর্তে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের মর্যাদা উঁচু করেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তের পেছনের দূরদর্শী কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি আনসারদের অসন্তোষের মূল কারণ—প্রত্যাখ্যাত বোধ করার অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন এবং তাদের ভালোবাসা ও সম্মান দিয়ে হৃদয় জয় করেছিলেন।

আরও পড়ুনযেকোনো সময় এই দোয়া করা যায়০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সমালোচনা মোকাবিলায় নবীজি (সা.)–এর কৌশল

সমালোচনা মোকাবিলায় মহানবী (সা.)–এর পদ্ধতি ছিল অনন্য। তিনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন, তবে তাঁর প্রতিক্রিয়ার মূলে ছিল ধৈর্য, দয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি প্রতিশ্রুতি। তাফসির ইবনে কাসিরে সুরা আল–হিজরের ব্যাখ্যায় তাঁর কয়েকটি কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে—

১। শান্ত ও বিনয়ী প্রতিক্রিয়া: জায়েদ ইবনে সুনআহর অভদ্রতার মুখেও তিনি শান্ত থেকেছেন এবং প্রতিশোধের পরিবর্তে দয়া দেখিয়েছেন। তিনি সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেননি; বরং পরিস্থিতির উন্নতি করেছেন।

২। সমালোচনার মূল কারণ অনুসন্ধান: আনসারদের অসন্তোষের ক্ষেত্রে তিনি প্রথমে সা’দের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করেন এবং তাদের অসন্তোষের প্রকৃত কারণ বোঝার চেষ্টা করেন। এটি তাঁর দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের গুণ প্রকাশ করে।

৩। সমালোচকদের মর্যাদা দেওয়া: আনসারদের সমালোচনার জবাবে তিনি তাদের তিরস্কার করেননি; বরং তাদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে তাদের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। এটি তাদের হৃদয়ে শান্তি ও সন্তুষ্টি ফিরিয়ে এনেছে।

৪। সিদ্ধান্তের পেছনের জ্ঞান ব্যাখ্যা: তিনি আনসারদের বোঝান যে নব্য মুসলিমদের বেশি সম্পদ দেওয়ার পেছনে ছিল ইসলামের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়ানোর উদ্দেশ্য। এই ব্যাখ্যা তাদের ভুল–বোঝাবুঝি দূর করে।

৫। আল্লাহর প্রশংসা ও দোয়ার আশ্রয়: অবিশ্বাসীদের ভিত্তিহীন সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর প্রশংসা, সিজদা ও ইবাদতের মাধ্যমে হৃদয়ের শান্তি খুঁজতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁকে বলেন, ‘তাহলে তোমার প্রভুর প্রশংসায় মহিমান্বিত করো এবং সিজদাকারীদের মধ্যে থেকো।’ (সুরা আল–হিজর, আয়াত: ৯৮)

আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫

আধুনিক পটভূমিতে নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা

আজকের বিশ্বে সমালোচনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কর্মক্ষেত্র বা ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রায়ই অবিচারপূর্ণ বা কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হই। নবীজি (সা.)–এর জীবন থেকে আমরা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি—

 ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ: সমালোচনার মুখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে শান্ত থাকা এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা।

 ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি: সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না নিয়ে তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা।

 দয়া ও ক্ষমা: সমালোচকদের প্রতি দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন, যা তাদের হৃদয় পরিবর্তন করতে পারে।

 আল্লাহর ওপর ভরসা: কঠিন সমালোচনার সময় ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে মানসিক শান্তি খোঁজা।

 হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তাঁর চরিত্র ছিল কোরআন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৪৬)

 নবীজি (সা.) পবিত্র কোরআনের শিক্ষার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তিনি পবিত্র কোরআনের নির্দেশ—‘যা মন্দ, তা যা উত্তম, তা দিয়ে প্রতিরোধ করো’ (সুরা ফুসসিলাত, ৪১: ৩৪) নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত ছিল, যা তাঁকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

সারকথা

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সমালোচনা মোকাবিলায় ধৈর্য, দয়া ও দূরদর্শিতার অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইহুদি রাব্বির অভদ্রতার মুখে তিনি ক্ষমা ও উদারতা দেখিয়েছেন, আনসারদের অসন্তোষের সময় তাদের মর্যাদা ও ভালোবাসা দিয়ে হৃদয় জয় করেছেন। তিনি সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ না করে তার মূল কারণ বুঝতে চেষ্টা করতেন এবং পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কাজ করতেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে সমালোচনা একটি সুযোগ হতে পারে—নিজেকে উন্নত করার, সম্পর্ক মজবুত করার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের। আজকের মুসলিমদের জন্য তাঁর এই শিক্ষা একটি পথনির্দেশ, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।

আরও পড়ুনসুরা নিসা: নারীর অধিকারের কথা২৬ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র অসন ত ষ র অব শ ব স পর স থ ত ইসল ম র দ রদর শ আল ল হ র জন য এস ছ ল আম দ র কর ছ ন ধ র পর র জ বন র সময় আনস র করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ইরানের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র, অর্থাৎ হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে দেশটি। সে কারণে গতকাল সোমবার বিশ্বের সব গণমাধ্যমেই এই হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রভাব নিয়ে সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে।

ইসরায়েল–ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইরানের সংসদে ইতিমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান হরমুজ প্রণালি অবরোধ করলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতিদিনই কিছু কিছু না বাড়ছে। খবর বিবিসি, আল–জাজিরা, রয়টার্সের।

বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি হরমুল প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ এক মাসের জন্য অর্ধেকে নেমে আসে এবং পরবর্তী ১১ মাসে তা ১০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম অস্থায়ীভাবে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১১০ মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। নানা ধরনের হিসাব কষে দেখিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। তার মধ্যে আরেকটি হিসাব হলো, ইরানের তেল সরবরাহ দৈনিক সাড়ে ১৭ লাখ ব্যারেল কমে গেলে ব্রেন্টের ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৯০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২৬ সালের মধ্যে সরবরাহ স্থিতিশীল হলে তা ৬০-৭০ ডলারের মধ্যে নেমে আসবে।

অন্যদিকে আরেক বিনিয়োগ ব্যাংক জে পি মরগ্যানের বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পরিবর্তনের পর তেলের দাম হঠাৎ করে ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে—দীর্ঘ মেয়াদে বেড়েছে গড়ে ৩০ শতাংশ। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা বলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে বলে শঙ্কা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জ্বালানি তেলের বাজার কোথায় যায়, সেদিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখা হয়েছে। তেলের দাম বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতির সবখানে তার প্রভাব অনুভূত হবে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে শুধু তাৎক্ষণিক নয়, পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তেলের দাম বাড়লে তা বড় বড় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরতে পারে। তখন ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ কমতে পারে, এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) অনুমান, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে প্রতিদিন হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য যেসব দেশ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

শেয়ার ফিউচার্সের পতন

বৈশ্বিক গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়েছে। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে; নাসডাক ফিউচার্স কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারগুলোর সূচক নিয়ে (জাপান বাদে) মর্গান স্টানলির তৈরি এমএসসিআই সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে গেছে আর জাপানের নিক্কি সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

ইউরোপের বাজারেও পতনের ধারা দেখা গেছে। ইউরোস্টকস ৫০ ফিউচার সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, এফটিএসই ফিউচার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও ডিএএক্স ফিউচার সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

মুদ্রাবাজারের অবস্থা

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত সোনা ও ডলারের মান বাড়ে। তবে এবার এখন পর্যন্ত সেই প্রবণতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১৪৬ দশমিক ৪৮ ইয়েন। অন্যদিকে ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি ইউরোতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ১৪৮১ ডলার।

বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হলো যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড। কিন্তু গতকাল এই বন্ডের বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি দেখা যায়নি, বরং ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ২ ভিত্তি পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশে।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার নিয়ে আগাম অনুমানের বাজারে (ফিউচার্স) সামান্য পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, তেলের দাম দীর্ঘ মেয়াদে বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ তৈরি হবে—এ আশঙ্কা থেকেই এই প্রতিক্রিয়া।

ইরান কি হরমুজ বন্ধ করতে পারবে

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরমুজ যে কেবল ইরানের জন্য ভৌগোলিক সুবিধা, তা নয়; বরং এটি তাদের কৌশলগত অস্ত্র। ইরানের উপকূলঘেঁষা এই চ্যানেলের মাধ্যমে জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর ও আরব সাগর সংযুক্ত হয়েছে। শুধু ইরান নয়, পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন ও ইরানের জ্বালানি তেল রপ্তানির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে এ সমুদ্রপথের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুসারে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়, যা তেলের বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভোক্তা দক্ষিণ এশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। ফলে হরমুজ প্রণালিতে যেকোনো ব্যত্যয়ের প্রতিক্রিয়া এসব দেশের জ্বালানি তেলের বাজারেও পড়বে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সভার্সাল কনসালটিংয়ের প্রেসিডেন্ট এলেন ওয়াল্ড সিএনবিসিকে বলেন, হরমুজ প্রণালিতে তেলপ্রবাহের গতি থামিয়ে প্রকৃতপক্ষে ইরানের ‘লাভ নেই’। বিশেষ করে যখন ইরানের নিজস্ব তেল স্থাপনাগুলোতে এখনো সরাসরি হামলা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে ইরানকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হতে পারে।

এ ছাড়া হরমুজ প্রণালির বেশিরভাগ অংশই ওমানের সীমানার মধ্যে, ইরানের মধ্যে নয়। এই প্রণালি এতটাই চওড়া যে ইরান চাইলেও তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে না বলে মনে করেন বিশ্লোষকেরা। অনেক জাহাজ ইরানের জলসীমা দিয়ে গেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের অংশ দিয়েও চলাচল সম্ভব। সে কারণে এই প্রণালী বন্ধ করার হুমকি রাজনৈতিক বক্তৃতার বেশি কিছু নয়।

এলেন ওয়াল্ড আরও সতর্ক করে বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাবে—তখন ইরানের সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীনও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাবে। এই বাস্তবতা বুঝে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীনের দূতিয়ালি চেয়েছে, তারা যেন ইরানকে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে বারণ করে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ইরানের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র, অর্থাৎ হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে দেশটি। সে কারণে গতকাল সোমবার বিশ্বের সব গণমাধ্যমেই এই হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রভাব নিয়ে সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে।

ইসরায়েল–ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইরানের সংসদে ইতিমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান হরমুজ প্রণালি অবরোধ করলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতিদিনই কিছু কিছু না বাড়ছে। খবর বিবিসি, আল–জাজিরা, রয়টার্সের।

বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি হরমুল প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ এক মাসের জন্য অর্ধেকে নেমে আসে এবং পরবর্তী ১১ মাসে তা ১০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম অস্থায়ীভাবে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১১০ মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। নানা ধরনের হিসাব কষে দেখিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। তার মধ্যে আরেকটি হিসাব হলো, ইরানের তেল সরবরাহ দৈনিক সাড়ে ১৭ লাখ ব্যারেল কমে গেলে ব্রেন্টের ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ৯০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২৬ সালের মধ্যে সরবরাহ স্থিতিশীল হলে তা ৬০-৭০ ডলারের মধ্যে নেমে আসবে।

অন্যদিকে আরেক বিনিয়োগ ব্যাংক জে পি মরগ্যানের বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, অতীতে মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পরিবর্তনের পর তেলের দাম হঠাৎ করে ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে—দীর্ঘ মেয়াদে বেড়েছে গড়ে ৩০ শতাংশ। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা বলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে বলে শঙ্কা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জ্বালানি তেলের বাজার কোথায় যায়, সেদিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখা হয়েছে। তেলের দাম বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতির সবখানে তার প্রভাব অনুভূত হবে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে শুধু তাৎক্ষণিক নয়, পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তেলের দাম বাড়লে তা বড় বড় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরতে পারে। তখন ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ কমতে পারে, এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) অনুমান, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে প্রতিদিন হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য যেসব দেশ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

শেয়ার ফিউচার্সের পতন

বৈশ্বিক গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়েছে। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে; নাসডাক ফিউচার্স কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারগুলোর সূচক নিয়ে (জাপান বাদে) মর্গান স্টানলির তৈরি এমএসসিআই সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে গেছে আর জাপানের নিক্কি সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

ইউরোপের বাজারেও পতনের ধারা দেখা গেছে। ইউরোস্টকস ৫০ ফিউচার সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, এফটিএসই ফিউচার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও ডিএএক্স ফিউচার সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

মুদ্রাবাজারের অবস্থা

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত সোনা ও ডলারের মান বাড়ে। তবে এবার এখন পর্যন্ত সেই প্রবণতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১৪৬ দশমিক ৪৮ ইয়েন। অন্যদিকে ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি ইউরোতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ১৪৮১ ডলার।

বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হলো যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড। কিন্তু গতকাল এই বন্ডের বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি দেখা যায়নি, বরং ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ২ ভিত্তি পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশে।

ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার নিয়ে আগাম অনুমানের বাজারে (ফিউচার্স) সামান্য পতন দেখা গেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, তেলের দাম দীর্ঘ মেয়াদে বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ তৈরি হবে—এ আশঙ্কা থেকেই এই প্রতিক্রিয়া।

ইরান কি হরমুজ বন্ধ করতে পারবে

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরমুজ যে কেবল ইরানের জন্য ভৌগোলিক সুবিধা, তা নয়; বরং এটি তাদের কৌশলগত অস্ত্র। ইরানের উপকূলঘেঁষা এই চ্যানেলের মাধ্যমে জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর ও আরব সাগর সংযুক্ত হয়েছে। শুধু ইরান নয়, পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন ও ইরানের জ্বালানি তেল রপ্তানির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে এ সমুদ্রপথের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুসারে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়, যা তেলের বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভোক্তা দক্ষিণ এশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। ফলে হরমুজ প্রণালিতে যেকোনো ব্যত্যয়ের প্রতিক্রিয়া এসব দেশের জ্বালানি তেলের বাজারেও পড়বে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সভার্সাল কনসালটিংয়ের প্রেসিডেন্ট এলেন ওয়াল্ড সিএনবিসিকে বলেন, হরমুজ প্রণালিতে তেলপ্রবাহের গতি থামিয়ে প্রকৃতপক্ষে ইরানের ‘লাভ নেই’। বিশেষ করে যখন ইরানের নিজস্ব তেল স্থাপনাগুলোতে এখনো সরাসরি হামলা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে ইরানকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হতে পারে।

এ ছাড়া হরমুজ প্রণালির বেশিরভাগ অংশই ওমানের সীমানার মধ্যে, ইরানের মধ্যে নয়। এই প্রণালি এতটাই চওড়া যে ইরান চাইলেও তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে না বলে মনে করেন বিশ্লোষকেরা। অনেক জাহাজ ইরানের জলসীমা দিয়ে গেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের অংশ দিয়েও চলাচল সম্ভব। সে কারণে এই প্রণালী বন্ধ করার হুমকি রাজনৈতিক বক্তৃতার বেশি কিছু নয়।

এলেন ওয়াল্ড আরও সতর্ক করে বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাবে—তখন ইরানের সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীনও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাবে। এই বাস্তবতা বুঝে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীনের দূতিয়ালি চেয়েছে, তারা যেন ইরানকে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে বারণ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ