১৬ ধরনের সেবার ফি ৫ গুণ বৃদ্ধি, গণশুনানি না করায় নাগরিকদের ক্ষোভ
Published: 9th, May 2025 GMT
কুমিল্লা নগরের বাসিন্দাদের ২৩ ধরনের নাগরিক সেবা ও সনদ দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। হঠাৎ করে এসব নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ ধরনের নাগরিক সেবা ও সনদের ফি বেড়েছে ৫ গুণ পর্যন্ত, যার মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব সনদও। ২০ টাকা থেকে একলাফে বাড়িয়ে এসব সনদের মূল্য বর্তমানে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গণশুনানি ছাড়া এভাবে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করায় কুমিল্লা নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নগরের সচেতন বাসিন্দারা বলছেন, এভাবে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করার আগে অবশ্যই নাগরিকদের মতামত নেওয়ার দরকার ছিল। একলাফে ৫ গুণ না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে ফি বৃদ্ধি করা যেত। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, সেবা দেওয়ার খরচ বাড়ায় ফি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান পটভূমি চিন্তা করে নাগরিকেরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১ মে থেকে নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে ১৫ এপ্রিল বর্ধিত ফির তালিকায় স্বাক্ষর করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো.
২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা সেবাগুলো হলো নাগরিক সনদ (বাংলা), চারিত্রিক সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), বিবাহিত/ অবিবাহিত সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), পুনর্বিবাহ না হওয়ার সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), মাসিক/ বার্ষিক আয় প্রত্যয়ন, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, ভূমিহীন প্রত্যয়ন, একই নামের প্রত্যয়ন, বিবিধ প্রত্যয়ন, বেকারত্ব সনদ, প্রত্যয়নপত্র (বাংলা ও ইংরেজি), পারিবারিক সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র (বাংলা ও ইংরেজি), ক্ষমতাপত্র, অনাপত্তিপত্র ও পি-ফরম (আপত্তি ফরম) (পৌর কর)।
সিটি করপোরেশন এভাবে নাগরিক সেবার ফি বৃদ্ধি করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু)। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘...বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। এখনো কোনো মেয়র নেই, নেই কোনো নির্বাচিত পরিষদও। এই পটভূমিতে নাগরিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন সেবার মূল্য ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কোনো রকম গণশুনানি ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও জনবিরোধী। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া অত্যাবশ্যক ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।...’
ইউসুফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের জন্য সিটি করপোরেশন। তাঁদের এমন একটি সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নাগরিকদের মতামত ছাড়া নেওয়া উচিত হয়নি। যার কারণে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের মাসিক সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খরচও বেড়েছে, যার কারণে এই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বর্তমান পটভূমিতে ১০০ টাকা অনেক বেশি টাকা নয়। আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান পটভূমি চিন্তা করে নাগরিকেরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’
এভাবে নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বাড়ানো উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায়। একলাফে ৫ গুণ না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে এটিকে বৃদ্ধি করা যেত উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময়ে এমন জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েক বছর আগে কোনো প্রকার মতামত ছাড়া মানুষের বাসাবাড়ির কর ৮ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে নগরবাসী আপিল করলে সেটি কিছুটা কমিয়ে ৩ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি নিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি আশা করছেন।
এদিকে সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছে। হাসান ফরহাদ নামের একজন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জনপ্রতিনিধিবিহীন, তথা জনগণের সহিত আলোচনাবিহীন এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত নয়, তাহা স্বৈরাচারিতার শামিল।’ তানভীর আলম নামের এক তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষিত বেকার। এখন বেকারত্ব সনদ পেতে হলে আমাকে ১০০ টাকা দিতে হবে। তাহলে তো আগে আমাকে ১০০ টাকা আয় করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র মত মত ১০০ ট ক র ক সনদ ও সনদ দ ২০ ট ক ব সনদ পটভ ম ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
আইএসইউতে বসন্তকালীন সেমিস্টারের নবীন বরণ
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ) মহাখালী ক্যাম্পাসে বসন্তকালীন-২০২৫ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে আইএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খানের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার একেএম মোশাররফ হুসাইন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন মেম্বার সেক্রেটারি হাসনাত মোশাররফ।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “নিজের জীবন গড়ার এখনই উপযুক্ত সময় । উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে অবশ্যই শিক্ষা জীবনে যেমন পড়াশোনা করতে হবে, তেমনি ভাল মানুষ হয়েও গড়ে উঠতে হবে।”
আরো পড়ুন:
গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বনির্ভর কর্মসূচি’ চালু
লক্ষ্মীপুরে কলেজছাত্রীর ১ মাসেরও খোঁজ মেলেনি
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমে আইএসইউ পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়মানুবর্তিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।”
ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইএসইউ এর যথাযথ উদ্দ্যোগের কথা তুলে ধরে উপাচার্য আরো বলেন, “আধুনিক ক্লাসরুম, ল্যাব, মানসম্মত শিক্ষক, তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও রক্ষা করার জন্য আইএসইউ বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতানুযায়ি খণ্ডকালীন ও স্নাতক পরবর্তী চাকরির সুবিধা দিচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।”
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে হাসনাত মোশাররফ বলেন, “বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যেমন বিনয়ী হতে হবে, তেমনি নেতৃত্ব গুণ ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করে ক্যারিয়ার ও সফলতার পথে এগিয়ে থাকতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্য ফাহিম মোশাররফ, আইএসইউ ট্রেজারার অধ্যাপক এইচটিএম কাদের নেওয়াজ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনজুর মোর্শেদ মাহমুদ, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল কাসেম।
স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইএসইউ রেজিস্ট্রার মো. ফাইজুল্লাহ কৌশিক।
নাফিসা তাবাসসুম ও মাইশা আফিয়া জেরিনের সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারপার্সন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রশাসনিক কমকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ঢাকা/মেহেদী