কুমিল্লা নগরের বাসিন্দাদের ২৩ ধরনের নাগরিক সেবা ও সনদ দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। হঠাৎ করে এসব নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ ধরনের নাগরিক সেবা ও সনদের ফি বেড়েছে ৫ গুণ পর্যন্ত, যার মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব সনদও। ২০ টাকা থেকে একলাফে বাড়িয়ে এসব সনদের মূল্য বর্তমানে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গণশুনানি ছাড়া এভাবে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করায় কুমিল্লা নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নগরের সচেতন বাসিন্দারা বলছেন, এভাবে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করার আগে অবশ্যই নাগরিকদের মতামত নেওয়ার দরকার ছিল। একলাফে ৫ গুণ না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে ফি বৃদ্ধি করা যেত। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, সেবা দেওয়ার খরচ বাড়ায় ফি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান পটভূমি চিন্তা করে নাগরিকেরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১ মে থেকে নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে ১৫ এপ্রিল বর্ধিত ফির তালিকায় স্বাক্ষর করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো.

ছামছুল আলম এবং সচিব মোহাম্মদ মামুদ। এতে চলমান ২৩টি নাগরিক সেবার মধ্যে ১৯টির ফি বৃদ্ধি করায় হয়। অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে ৪টি। এর মধ্যে ১৬টি নাগরিক সেবার ফি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়। এ ছাড়া ওয়ারিশ সনদ (বাংলা ও ইংরেজি) এবং নাগরিক সনদের (ইংরেজি) সেবামূল্য আগে ১০০ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। শুধু জন্মনিবন্ধন সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), মৃত্যুনিবন্ধন সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ (বাংলা ও ইংরেজি) সংশোধন আগের মূল্য ৫০ টাকা এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ বয়স সংশোধন আগের ফি ১০০ টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন আবেদন (উদ্যেক্তা ফি) আগে বিনা পয়সায় করা যেত, সেটি করতে এখন ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা সেবাগুলো হলো নাগরিক সনদ (বাংলা), চারিত্রিক সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), বিবাহিত/ অবিবাহিত সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), পুনর্বিবাহ না হওয়ার সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), মাসিক/ বার্ষিক আয় প্রত্যয়ন, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, ভূমিহীন প্রত্যয়ন, একই নামের প্রত্যয়ন, বিবিধ প্রত্যয়ন, বেকারত্ব সনদ, প্রত্যয়নপত্র (বাংলা ও ইংরেজি), পারিবারিক সনদ (বাংলা ও ইংরেজি), মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র (বাংলা ও ইংরেজি), ক্ষমতাপত্র, অনাপত্তিপত্র ও পি-ফরম (আপত্তি ফরম) (পৌর কর)।

সিটি করপোরেশন এভাবে নাগরিক সেবার ফি বৃদ্ধি করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু)। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘...বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। এখনো কোনো মেয়র নেই, নেই কোনো নির্বাচিত পরিষদও। এই পটভূমিতে নাগরিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন সেবার মূল্য ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কোনো রকম গণশুনানি ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও জনবিরোধী। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া অত্যাবশ্যক ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।...’

ইউসুফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের জন্য সিটি করপোরেশন। তাঁদের এমন একটি সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নাগরিকদের মতামত ছাড়া নেওয়া উচিত হয়নি। যার কারণে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের মাসিক সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খরচও বেড়েছে, যার কারণে এই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বর্তমান পটভূমিতে ১০০ টাকা অনেক বেশি টাকা নয়। আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান পটভূমি চিন্তা করে নাগরিকেরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’

এভাবে নাগরিক সেবা ও সনদ দেওয়ার ফি বাড়ানো উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায়। একলাফে ৫ গুণ না বাড়িয়ে কয়েক ধাপে এটিকে বৃদ্ধি করা যেত উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময়ে এমন জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েক বছর আগে কোনো প্রকার মতামত ছাড়া মানুষের বাসাবাড়ির কর ৮ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে নগরবাসী আপিল করলে সেটি কিছুটা কমিয়ে ৩ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি নিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি আশা করছেন।

এদিকে সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছে। হাসান ফরহাদ নামের একজন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জনপ্রতিনিধিবিহীন, তথা জনগণের সহিত আলোচনাবিহীন এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত নয়, তাহা স্বৈরাচারিতার শামিল।’ তানভীর আলম নামের এক তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষিত বেকার। এখন বেকারত্ব সনদ পেতে হলে আমাকে ১০০ টাকা দিতে হবে। তাহলে তো আগে আমাকে ১০০ টাকা আয় করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র মত মত ১০০ ট ক র ক সনদ ও সনদ দ ২০ ট ক ব সনদ পটভ ম ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

হিজবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমান্ডে

নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম মিজানুর রহমান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার আদালতে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপপরিদর্শক মো. শাহিনুর রহমান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

৭ মে রাতে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকার একটি মেস থেকে সাদাপোশাকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ মিজানুর রহমানকে আটক করে বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপরই পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশপাশের থানায় খোঁজ নিয়েও তাঁর সন্ধান পাননি। পরে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ কয়েকটি সূত্র থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।

মামলার কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২১ মার্চ ধানমন্ডি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এবং সংগঠনটির পক্ষে প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, পুলিশ মিজানুরের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করেছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হিজবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, আসামি মুক্তি পেলে চিরতরে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, ‘প্রথমে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলাম। পরে জানতে পারি, তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের বড় ভাই সাজু রহমান বলেন, ‘মিজানকে ৭ মে রাত ১১টার দিকে নারিন্দার মেস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিন তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি। পরে জানতে পারি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা তাঁর ন্যায়বিচার চাই।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাশৈনু বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের আগে মামলাটি হয়েছে। মামলাটি ধানমন্ডি থানায় নথিভুক্ত হলেও এর তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ