আশুলিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানে অগ্নিকাণ্ড
Published: 11th, May 2025 GMT
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নরসিংহপুর এলাকায় আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। যানজটের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। ৪টি ইউনিট ১০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় করিম মিয়ার মালিকাধীন আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকানে ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় দোকানের শাটার নামানো ছিল। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ওই স্টেশনসহ ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। সড়কে যানজট থাকায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয় তাঁদের। তবে পৌঁছানোর পর ১০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা অনীক সরকার বলেন, সন্ধ্যার দিকে দোকানের ভেতরে একজন খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরছিলেন। হঠাৎ আগুন ধরে গেলে তিনি দোকানের শাটার নামিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যান। এ ছাড়া আশপাশে দোকানের আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই পালিয়ে যান। এখানে তাঁরা প্রায় তিন–চার বছর ধরে ব্যবসা করছেন।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, দোকানটিতে গ্যাসের খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা (রিফিল) হতো। তবে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডারের ওজন বাড়াতে অবৈধভাবে সিলিন্ডারের ভেতরে পানি ও বালু ঢোকানো হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা সময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। আগুন লাগার পর তাঁরা আবার মিথ্যা অভিযোগ করতেছে। যাঁরা সিলিন্ডার কেনেন, তাঁরা তো কখনো অভিযোগ করেননি। আমার ব্যবসার বৈধ কাগজপত্র আছে। কী পরিমাণ গ্যাস কিনি, আর কী পরিমাণ বিক্রি করি, তার সব কাগজপত্র আছে। সেগুলো দেখলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।’
জিরাবো মর্ডান ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু সায়েম মাসুম বলেন, সড়কে যানজট থাকার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে একটু সময় লেগে গেছে। দোকানমালিক জানিয়েছেন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে। বিষয়টি তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স ভর আগ ন ন য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
জাবিতে ৯ বাস আটক, ছেড়ে দেওয়ার মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ে ধোঁয়াশা
হাফ ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী নীলাচল পরিবহনের ৯টি বাস আটকে রেখে আবার ছেড়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী। তবে বাসগুলো ছেড়ে দিতে মধ্যস্থতাকারীরা টাকা খেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়কের দুপাশে বাসগুলো আটকে চাবি নিয়ে যান শহীদ সালাম-বরকত হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেন তাঁরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক ছাত্র কামরুল হাসান রোববার সকালে মানিকগঞ্জের উথুলী এলাকায় যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের সামনে থেকে নীলাচল পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। গন্তব্যস্থলের ভাড়া বাবদ ১২০ টাকার স্থলে তিনি হাফ ভাড়া ৬০ টাকা দিতে চাইলে বাসচালকের সহকারী ১০০ টাকা দিতে বলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। কামরুলের ভাষ্য, তাঁর সঙ্গে ওই সহকারী খারাপ আচরণ করেছিলেন। পরে কামরুল পুরো ভাড়া দিয়ে বাস থেকে নেমে যান এবং ক্যাম্পাসে ফিরে হলের সহপাঠীদের নিয়ে ওই বাসগুলো আটক করেন। পরে বাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে রাত নয়টার দিকে বাসগুলো ছেড়ে দেন তাঁরা।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও আটক হওয়া বাসচালকদের সূত্রে জানা গেছে, বাস আটকের পর নীলাচল পরিবহনের চেকার মো. ফয়সাল ও সাভারের বিএনপির এক নেতার আত্মীয় বেলালসহ বাসের কয়েকজন প্রতিনিধি ক্যাম্পাসে আসেন বিষয়টি সমাধান করার জন্য। ক্যাম্পাসে প্রবেশের আগে ফয়সাল আটকে রাখা বাসগুলো থেকে মোট ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন এবং এই টাকা শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানান। পরে তাঁরা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং রাতে শিক্ষার্থীরা বাসের চাবিগুলো দিয়ে দেন প্রতিনিধিদের কাছে।
চেকার ফয়সাল চাবিগুলো নিয়ে বাসের চালকদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন দুজন সহকারী প্রক্টর ও ক্যাম্পাসের সাংবাদিকেরা। এ সময় সহকারী প্রক্টরেরা বিষয়টি কীভাবে সমাধান হলো জানতে চান ফয়সালের কাছে। তখন ফয়সাল অসামঞ্জস্য কথা বলতে থাকেন। ওই ১৬ হাজার টাকা কাদের দেওয়া হয়েছে—এমন তথ্য জানতে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বললে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় একটি বাস উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিয়ে যান এবং বাসের যেসব প্রতিনিধি রোববার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তারা আবার ক্যাম্পাসে এসে প্রশাসনের কাছে ঘটনার রহস্য জানানোর দাবি তোলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, চেকার ফয়সাল, বেলালসহ নীলাচল বাসের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্রদলের নেতা নবীনুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে হেঁটে হেঁটে চলে যান। এ সময় শহীদ মিনার এলাকায় শাখা ছাত্রদলের সদস্য মেহেদি হাদান ইমনসহ (৪৯ ব্যাচ) কয়েকজন ছাত্রদল নেতা-কর্মীকে দেখা যায়।
এ বিষয়ে নবীনুর রহমান বলেন, ‘একটি ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বাস আটকে রেখেছিল। সেটা নিয়ে আমার পূর্বপরিচিত বেলালসহ কয়েকজন ক্যাম্পাসে আসেন। আমি তখন তাদের বলি শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করে সমাধান করতে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করে অনুরোধ জানালে তারা বাসগুলো ছেড়ে দেন। টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বাস আটকের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তারা বাস ছেড়েও দিয়েছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাস কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে এসে আমাদের না জানিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছে। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অসামঞ্জস্যতা তথ্য পেয়েছি। সোমবার বাস কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।