পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে জয়ী হলে দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে তুলতে চায় সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরাম। একই সঙ্গে তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি বা পরিচালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত, ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা, শিল্পাঞ্চলভিত্তিক সংকট ব্যবস্থাপনা, ব্যবসার প্রস্থান নীতিমালা (এক্সিট পলিসি) চূড়ান্ত করাসহ ৯টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের দলনেতা মাহমুদ হাসান খান এ কথাগুলো বলেন। এ সময় ফোরাম মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী, প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফয়সাল সামাদসহ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইতিমধ্যে ফোরাম তাদের ৩৫ পরিচালক পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘ব্যবসা রয়েছে এমন উদ্যোক্তা, দক্ষ–অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও তারুণ্য আর প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দূরদর্শিতা বিবেচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রার্থীরা পর্ষদে এলে তাঁদের হাতে আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে উঠবে।’ পরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা–কর্মী নেই। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী কেউ নেই। কারণ, আমরা নতুনদের অগ্রাধিকার দিয়েছি।’

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, শফিউল ইসলাম ও আতিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাবেক দুই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও এস এম মান্নান আত্মগোপনে আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক বা সভাপতি হিসেবে কেউ পলাতক নন। আত্মগোপন কিংবা কারাগারে যাওয়ার মূল কারণ তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্মকাণ্ড। তবে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দোষী বলা যাবে না।

ফোরামের দলনেতা বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বহিরাগত লোকজন ছিলেন। এবার বহিরাগতদের কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন বোর্ড। ফলে আমাদের প্রত্যাশা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।’ তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির প্রচেষ্টা বহুলাংশে সফল হয়েছে। চলতি বছর মানদণ্ড পরিপালন করতে না পারায় অনেক সদস্য ভোটার হতে পারেননি। তবে তাঁদের সদস্যপদ বহাল রয়েছে।

প্রতিবছর দুই ঈদের আগে কিছু কারখানার বেতন–ভাতা পরিশোধ নিয়ে জটিলতা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সঞ্চয় তহবিল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘১ শতাংশের কম কারখানার কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সে জন্য আমরা নির্বাচিত হলে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় তহবিল করব। বিশেষ সাধারণ সভা করে সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কাজ করতে চাই।’

ফোরাম পোশাক খাতের উন্নয়ন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি, নন–বন্ড কারখানা ও নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা, ব্যাংক ও কাস্টমস হয়রানি নিরসন, রুগ্‌ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রস্থান নীতি, শিল্পাঞ্চলভিত্তিক সংকট ব্যবস্থাপনা এবং শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা দেখেছি, বিজিএমইএতে গিয়ে অনেক মালিক সহযোগিতা পাননি, উল্টো হয়রানি হয়েছেন। ফোরাম নেতৃত্ব পেলে সংগঠনটির মালিক–শ্রমিকের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাবে না। বিজিএমইএ হবে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের আস্থার নাম। সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বার্থে বিজিএমইএকে নেতৃত্ব দিতে হবে সামনে থেকে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

চার বছরের পরীক্ষার ফল: রাজশাহী শহরে প্রতিবছরই শব্দদূষণ বাড়ছে

রাজশাহী শহরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) গত চার বছরে শব্দের মাত্রা বেড়েছে ৭ ডেসিবেলের বেশি। ২০২২ সালে এই চত্বরে শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবেল। আর আজ শনিবার একই স্থানে শব্দের মাত্রা মেপে পাওয়া গেছে ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল।

আজ স্থানীয় বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। পরিবেশবাদী এ সংগঠনটি চার বছর ধরে রাজশাহী শহরের কয়েকটি জায়গায় শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে আসছে। তবে এবার শুধু পরীক্ষা করা হয়েছে এই চত্বরে। শব্দের মাত্রা পরীক্ষার সময় তারা শব্দদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচারও চালিয়েছে।

আজ দুপুরে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত চার বছরে এই চত্বরে শব্দ মাপার পরিসংখ্যানও পাঠানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে রেলগেট এলাকায় শব্দের মাত্রা পরীক্ষায় ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। এরপরের বছর ২০২৪ সালে এখানে পাওয়া যায় ৯৬ দশমিক ৩ ডেসিবেল। এবার একই স্থানে পাওয়া গেল ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল।

পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অলি আহমেদ, রকি খান চৌধুরী, শামসুর রাহমান, কলি আহমেদ, ইশিতা, রুমানা আহমেদ, মতিউর রহমান, বাপ্পি দাস, আবু বক্কর সিদ্দিকি প্রমুখ।

বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, শব্দের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা। এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় রাতে ৬০ ও দিনে ৭০ ডেসিবেল থাকতে হবে। এতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস–আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শিল্প এলাকায় এ মাত্রা রাতে ৭০ ও দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং মিশ্র এলাকায় রাতে ৫০ ও দিনে ৬০ ডেসিবেল থাকার কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শব্দের তীব্রতা নিয়ে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির (২০২২) প্রকাশ করা ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের প্রথম ও রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে দেখানো হয়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমাণ দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন থেকে প্রতিবছর শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে আসছে।

সংগঠনটি আরও বলছে, শহরের রেলগেটের মতো জনবহুল স্থানে দিনের বেলা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একই স্থানে শব্দের মান নির্ণয় করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আজ সেখানে শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

সংগঠনটির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, শহরের ব্যস্ততম মিশ্র এলাকা রেলগেট। এখানে আবাসিক হোটেলও আছে। আজ তাঁরা গড় শব্দের মাত্রা পেয়েছেন ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল। মানুষের শ্রবণসীমা অনুযায়ী এটা দিনের বেলায় সর্বোচ্চ থাকার কথা ছিল ৬০ ডেসিবেল। এটি খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি আরও বলেন, শব্দের মাত্রা মাপার সময় ওই এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিল। দেখা গেছে, এই যানবাহনসহ অন্য যানবাহন অযথা হর্ন বাজাচ্ছে। অটোরিকশাগুলোয় ভেঁপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত।

জাকির হোসেন খান পরামর্শ দিয়ে বলেন, শব্দদূষণের প্রভাব শুধু মানুষের ওপর নয়, প্রতিটি পশুপাখির ওপর পড়ে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম ও জামজাতীয় ফলের গাছ, নিম ও শজনে–জাতীয় উপকারী গাছ লাগানো যেতে পারে, যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। শজনেগাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিকেএমইএর পরিচালক পদে শাহরিয়ার সাঈদ নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন
  • বিকেএমইএ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী প্রোগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্স
  • বিকেএমইএ নির্বাচনে হাতেম প্যানেল পূর্ণ জয়ী
  • চার বছরের পরীক্ষার ফল: রাজশাহী শহরে প্রতিবছরই শব্দদূষণ বাড়ছে
  • এক যুগ পর বিকেএমইএর নির্বাচন
  • আহ্বায়ক আলী আহসান, সদস্যসচিব আরেফিন মুহাম্মদ